ঢাকা, ২৬ মে- শ্রীলঙ্কা এবং আয়ারল্যান্ড সফরের সময় টিভির পর্দায় ক্রিকেটের সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য একটা বার্তা ঘুরেছে। সেই বার্তার মূলকথা বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি। সেই বার্তার আদ্যোপান্তে, মাঠের লড়াইয়ের মতো ক্রিকেটের বিশ্ববাজারেও বাংলাদেশের প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত। বিশেষ করে ত্রিদেশীয় সিরিজ প্রমাণ করেছে ক্রিকেট বাজারে বাংলাদেশ এখনই ভারতের মতো দেশের সঙ্গে টেক্কা দিতে না পারলেও নতুন বাঘ হিসেবে হাজির হচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় খেলতে গিয়েছিল। সেখানে টেস্ট সিরিজের নাম ছিল জয়বাংলা কাপ। এরপর আইরিশদের দেশে সিরিজের নাম রাখা হল ওয়ালটন ট্রাই-নেশনস সিরিজ। শুধু তাই নয় ওই সিরিজে মাঠের পাশে যে বোর্ডগুলো চোখে পড়েছে তার দখল নিয়েছিল বাংলাদেশের ইস্পাহানী চা, হাতিল, বিবিএস কেবলস, গাজী টায়ারস, সিটি ব্যাংক, ফ্রুটো, এবং পোলারের মতো প্রতিষ্ঠান। মাঠের ইনস্টেডিয়া রাইটসও ছিলো বাংলাদেশের টোটাল স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের। ওয়ালটন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দিনকে দিন বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান পাকা করছে। ক্রিকেটসহ দেশের প্রায় সব খেলায় তারা পাশে থাকে। ত্রিদেশীয় সিরিজের টাইটেল স্পন্সর স্বত্ব পায় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজের সময় দেশটির বোর্ডের কাছ থেকে সিরিজটির স্বত্ব কিনে নেয় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অ্যাডটাচ স্পোর্টস অ্যান্ড লাইভ ইভেন্টস। ৭ মার্চ প্রথম ম্যাচ ছিল। তাই তারা নাম রাখে জয়বাংলা কাপ। কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটবিশ্বে পায়ের আওয়াজ ফেলছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভালো করার পর ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ অনায়াসে হার মেনেছে। র্যাঙ্কিংয়ে ছয় নম্বরে উঠে সরাসরি ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা হয়েছে। ক্রিকেটের এমন জোয়ার দেখে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসছে। দেশে খেলা হলে স্পন্সরদের মধুর যন্ত্রণা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে। বিদেশি সিরিজগুলোতে এই অবস্থা আগে ছিল না। যেমনটা সম্প্রতি শুরু হয়েছে। মালাহাইড ক্রিকেট ক্লাব মাঠে সিটি মেয়রের সঙ্গে উদয় হাকিম ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম ত্রিদেশীয় সিরিজ দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি পুরো বিষয়টাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির পরিচায়ক হিসেবে দেখছেন, বাংলাদেশি কোম্পানির নাম তো ইউরোপে ছড়ালোই। পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এখনও অনেকে মনে করে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ। আয়ারল্যান্ডে অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানত না। যেটুকু জানত, সেটি ছিল নেগেটিভ। কিন্তু এখন তাদের কাছে বাংলাদেশ একটা ভিন্ন ইমেজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে ফিরছে। বাংলাদেশ এক সময় যেমন স্পন্সরের জন্য দিশেহারা হতো, তাদেরও এখন সেই অবস্থা। কিন্তু এখনের বাংলাদেশকে দেখে তারা অবাক। উদয় হাকিমের কথায় ফুটে উঠল সে কথাই, টাইটেল স্পন্সর হিসেবে আমার একটা গর্ব তো ছিলই। সবাই আমাদের অনেক বড় করে দেখেছে। তারা ক্রিকেটে স্পন্সর পায় না। আর আমাদের দেশে কত স্পন্সর, আমরা ইউরোপে ঢুকে গেছি। এটা তারা দারুণভাবে নিয়েছে। ইউরোপের মাটিতে বাংলাদেশ খেলছে। চারপাশে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন। উদয় হাকিম বললেন এমন দৃশ্যে দেখতে পেয়ে প্রবাসী দর্শকরাও গর্বিত হয়েছে, মাঠে যত দর্শক এসেছে তাদের ৯০ ভাগ ছিল বাংলাদেশি। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডগুলোকে পেয়ে তারা মনে করছিল বাংলাদেশেই বসে আছে। এমনই একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিল মাঠে। বিদেশিদের সামনে তারা বড় মুখ করে বলেছে, দেখুন বাংলাদেশ কী। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ছোটখাটো নয়। এটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়েছে বলেই ইউরোপ পর্যন্ত যেতে পেরেছি আমরা। ক্রিকেটে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে কীভাবে দেশিয় পণ্য বিদেশে ছড়াচ্ছে তারও গল্প শোনালেন উদয় হাকিম, প্রধান টার্গেট ছিল বাংলাদেশের দর্শকদের টানা। তারপর সাব-কন্টিনেন্ট। এরপর লক্ষ্য ছিল ইউরোপিয়ান দর্শক। ইউরোপে কিন্তু প্রচুর বাংলাদেশি থাকেন। তারা সবাই আমাদের পণ্যের নাম জেনে গেল। আগে আমরা বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নাম শুনতাম। এখন বাংলাদেশের কোম্পানি মাল্টিন্যাশনাল হয়ে গেছে। সোলায়মান সুখন। নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বর্তমানে আমরা নেটওয়ার্কস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হেড অব মার্কেটিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্র্যান্ডিং এক্সপার্ট হিসেবেই তিনি এখন বেশি পরিচিত। ক্রিকেট বাজারে বাংলাদেশের এমন পদচারণ তারও চোখে পড়েছে, আগে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই হয়তো ইচ্ছা থাকলেও ক্রিকেটের বিশ্ববাজারে ঢোকা সম্ভব হয়নি। এখন সঙ্গতি হয়েছে। তাই এই মার্কেটটা ধরা যাচ্ছে। সুখন মনে করেন এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিক সাফল্য অর্জন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কীভাবে প্রবেশ করতে হয়, বাংলাদেশ সেটা শিখছে। প্রাথমিক সোপান পার হওয়া গেছে। আর্থিক ও মানসিক শক্তির মেলবন্ধন পাওয়া গেল। এটা চমৎকার উদাহরণ। এখন পর্যন্ত দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর টার্গেট প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অন্য জাতিদের দৃষ্টি কাড়তে আরও সময় লাগবে। প্রবাসীরা যখন সেখানে বসে বাংলাদেশি পণ্য কিনবে, তখন বিদেশিরা দেখবে। এক সময় তাদেরও আগ্রহ হবে। পৃথিবীতে পেশাদার ক্রিকেট খেলা দেশের সংখ্যা খুব বেশি নয়। আইসিসির পূর্ণ সদস্য সংখ্যা মাত্র দশটি। এছাড়া আরও কয়েকটি সহযোগী দেশ মিলে ২০টির মতো দেশে ক্রিকেট খেলা হয় গুরুত্ব দিয়ে। সবদেশে আবার ক্রিকেট উৎসবের উৎস নয়। বাংলাদেশ-ভারতে যেমনটা হয়। বাংলাদেশ জিতলে ঢাকার রাস্তায় মিছিল বের হয়। হারলে খেলা না বোঝা বালিকার চোখও কাজল নদীর স্রোতে ভেসে যায়। যে স্রোতে ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুই থাকে না। সেই স্রোতে ভেসে ভেসে দেশের অর্থনীতি সাতসাগর তেরো নদীর ওপারে বাজার তৈরি করছে। দিকে দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে লাল-সবুজের নাম। আর/১০:১৪/২৭ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2rsMKKm
May 28, 2017 at 05:45AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন