বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি :: শিক্ষাবিদ আলী আহমদ। বিয়ানীবাজার উপজেলার একজন সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচিত। আদর্শ শিক্ষক হিসেবেও রয়েছে উনার খ্যাতি। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের দীর্ঘ ২৮ বৎসরের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।
এ সুবাদে উনার রয়েছেন হাজার হাজার ছাত্র। উনার অনেক ছাত্র আজ স্ব স্ব অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত। উনার সময়ে অনেক সুনাম অর্জন করেছিলো বিদ্যালয়টি। পেয়েছিলো অনেক পুরষ্কারও। খ্যাতিমান এই শিক্ষকের কোন অপমান হোক তা যেন মেনে নিতে পারেন না উনার ছাত্ররা। তাই তো গত বুধবার পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদালয়ের একটি অনুষ্টানে এই শিক্ষককে পিছনের সারিতে বসানোর কারণে ফুঁসে উঠেছেন ছাত্রসহ উনার শুভাকাংখিরা। গুণী এ ব্যক্তিকে পিছনে বসানোর দৃশ্যটি সাংবাদিক এম. হাসানুল হক উজ্জল উনার ফেইসবুক ওয়ালে পোষ্ট করলে এনিয়ে শুরু হয় সমালোচনা।
ফেইসবুকজুড়ে এখন কেবল চলছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে এজন্য আয়োজক ও ম্যনেজিং কমিটিকে দায়ী করে তাদের দায়িত্বহীনতার জন্য ধিক্কার ও ঘৃণা জানাচ্ছেন। উপজেলাজুড়ে এই বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্যা বিয়ানীবাজার’-এ পরিণত হয়েছে। তবে এবিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বা ম্যানেজিং কমিটির কারো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
জানা যায়, গত বুধবার বিয়ানীবাজারের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরনের ঘোষণা দিতে বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিদ্যালয়ের সরকারীকরনের ঘোষণার পাশাপাশি নতুন দ্বিতল ভবনেরও উদ্বোধন করেন তিনি। এ উপলক্ষ্যে বিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় সূধী সমাবেশের। আয়োজিত সূধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন’র সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ, শিক্ষা বিভাগ সিলেটের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক জাহাঙ্গীর কবির, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাছিব মনিয়াসহ আরো অনেকে।
তবে এই অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের দীর্ঘ ২৮ বৎসরের সাবেক প্রধান শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আলী আহমদকে বসতে দেয়া হয় দ্বিতীয় সারিতে তাঁরই ছাত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন’র পিছনের চেয়ারে। এভাবেই শেষ হয় অনুষ্টান। কিন্তু দিন পেরিয়ে রাত আসতেই শুরু হয় এনিয়ে গুঞ্জন। গুণী এই শিক্ষকের ছাত্র সাংবাদিক এম হাসানুল হক উজ্জল উনার ফেইসবুক ওয়ালে পিছনের সারিতে এই শিক্ষকের বসা নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এরপরই শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। সাংবাদিক উজ্জল তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, হায়রে রাজনীতি ! তুমি ডেফলকে বানিয়েছো আপেল! পিএইচজি হাই স্কুলে শিক্ষকতা জীবনে যার অবদান ভুলার মতো নয়, সেই সাবেক প্রধান শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি আলী আহমদ স্যারকে আজ বিদ্যালয় সরকারী করন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্টানে পেছনের সারিতে বসতে দেয়া হলো!
ডা. আরিফ হাসান লিখেন, খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যা নিকেতনের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আমরা আলী আহমদ স্যারকে আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম এবং যথাযথ সম্মান দিয়েছি যা স্যারের প্রাপ্য। দুঃখের বিষয় স্যার নিজের বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মানটুকু থেকে বঞ্চিত হলেন।
ছড়াকার লুৎফুর রহমান লিখেন- একজন আলী আহমদ স্যার হাজার আলোর বাতিঘর। হেডমাস্টারদেরও হেডমাস্টার তিনি। স্যারের খুব কাছে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। স্যারের দুটো কথা খুব মানি-
১. তুমি এমন কেউ হয়ে ওঠো যাতে কেউ তোমাকে মূল্যায়ন না করলে তার কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
২. তোমার অগ্রগতিতে কেউ কেউ তোমার পিছনে পড়বে, ভেঙে পড়ো না তখন ভাববে তোমার কাজ সফল, তুমিও সফল
এখানে ১ নং কথাটি স্যারের বেলায় এবার প্রযোজ্য। অনেক শব্দের মিছিল না দিয়ে স্যারের কথা দিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করলাম। এভাবে আরো অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এমন ঘটনার জন্য মহান এই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানিয়েছেন। এদিকে এবিষয়ে কথা বলতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাসিব জীবনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2rJPByq
May 28, 2017 at 03:28AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন