ঢাকা::২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ জন্য নভেম্বরের প্রথম দিকে তফসিল ঘোষণা করাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এবারে নির্বাচনের আগে শুধু আইন সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একবার সংলাপে বসার চিন্তা করেছে ইসি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে ‘রোডম্যাপ’ করছে নির্বাচন কমিশন। আইন সংস্কার, সংলাপ, সীমানা পুননির্ধারণসহ একগুচ্ছ কাজের অগ্রাধিকার রয়েছে এ রোডম্যাপে। আগামী বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরে জন্য দায়িত্ব নিয়ে মেয়াদের তিন মাস পার করে সেই নির্বাচনের কাজ গোছানোয় হাত দিয়েছেন।
এরই মধ্যে সংসদের উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জন আস্থা তৈরির পথও প্রশস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। রোডম্যাপ চূড়ান্তের পথে আগামী বছরের ডিসেম্বরেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ভাবনা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রাথমিক তারিখ হিসেবে চিন্তা করা হচ্ছে। ৪৫ দিন হাতে রেখে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফিসল ঘোষণা হতে পারে। এ জন্য একটি নির্বাচনী রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২৩ মে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভায় এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে। আর তফসিল ঘোষণার অন্তত তিন মাস আগে (২০১৮ সালের আগস্টের মধ্যে) সব ধরনের কাজ শেষ করার রূপরেখা থাকছে রোডম্যাপে।
এদিকে সংসদ নির্বাচন ঘিরে মাঠ পর্যায়ে কাজ গোছাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রমজানের পর জুলাইয়েই শুরু হচ্ছে মহাকর্মযজ্ঞ। এর মধ্যে রয়েছে ভোটার তালিকা প্রস্তুত; নির্বাচনী আইন সংস্কার; রাজনৈতিক দল-সুশীলসমাজ, সাংবাদিক ও এনজিওগুলোর সঙ্গে সংলাপ; ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ; নতুন দলের নিবন্ধন এবং নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল মেশিন বা ডিভিএম-ইভিএম প্রস্তুতকরণের কাজও। আর এসব কাজের টাইমফ্রেম নির্ধারণ করে তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনী রোডম্যাপের খসড়া। এতে রাখা হয়েছে ২৩টি এজেন্ডা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গত মঙ্গলবার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আগামী বছরের ডিসেম্বরেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি। সিইসি বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে আমরা একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে চাই। এজন্য ডিসেম্বরে নির্বাচনটা করার প্ল্যান। আর নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ২৩ মে চূড়ান্ত হবে। রোডম্যাপটা হলেই কাজের বিস্তারিত সূচি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এটা একটা বড় কাজ। তার পরই ওই প্ল্যান অনুসারে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে আমরা কাজ করব।’
ইসির বিগত তিন মাসের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা অনেক নির্বাচন করলাম। এগুলো সাকসেসফুল নির্বাচন।’ একাদশ সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে এই ৯০ দিনের মধ্যে কোন সময়টা এখন পর্যন্ত উপযুক্ত মনে করছেন— প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরই উপযুক্ত সময় হতে পারে।’ সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৪০টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। একবারই তাদের সঙ্গে বসব। নির্বাচনের আগে একবারের চেয়ে বেশি বসা তো সম্ভব হবে না। ’ তিনি বলেন, ‘রোডম্যাপ তৈরি করে একটা ইস্যু দাঁড় করাব যে, আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব। দলগুলোর কাছে আমরা কী কী তথ্য চাই। আমাদের কি একটা গাইডলাইন চাই, এটা তাদেরও জানাব। তার পরে সেই অনুযায়ী কাজ হবে। ’
তিন মাসে জনআস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন কিনা— প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনগুলোর মধ্যে আমরা ইতিমধ্যে আমাদের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছ ও শক্ত অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছি। এর মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। দৃশ্যমান অ্যাচিভমেন্ট হচ্ছে আমাদের নির্বাচনগুলো; এই স্বল্পসময়ে যেগুলোর মাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছি। আমাদের ধারণা, আমাদের ওপর আস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমাদের পথ খোলা থাকল। যদি সব রাজনৈতিক দল বলে ইভিএমে ভোট হবে; আমরা করে ফেলব।’
এদিকে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের। ভোট গ্রহণের জন্য তাদের দেওয়া হবে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ। অন্যদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সবার জন্য সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং প্রতিটি ভোটার যাতে আনন্দমুখর পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। সম্প্রতি আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইসির এক বৈঠকে এই চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো উঠে আসে। বৈঠকে এই তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রস্তুত হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, নির্বাচন হলো বিশাল কর্মযজ্ঞ। তাই নির্বাচন কমিশনের সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, অনেক চ্যালেঞ্জ। আগামী বছরের শেষে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচন নামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। এই কর্মপরিকল্পনা সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দল-সুশীলসমাজ, এনজিও ও সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ; ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করার সময়সীমা রাখা হচ্ছে। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা চূড়ন্ত করা, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সম্পন্ন এবং সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল মেশিন প্রস্তুত করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে রোডম্যাপে। অন্যদিকে রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোট কেন্দ্র প্রস্তুত করা, মালামাল সংগ্রহ, নির্বাচনী আইন সংশোধনসহ বেশকিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়।
এদিকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে খসড়া প্রস্তুত করবে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ। এরপর ভোটারদের দাবি-আপত্তি শেষ করে ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে তা মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনও প্রস্তুত করা হবে। এরপর তা ব্যবহারের বিষয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে প্রচার শুরু করা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে মকভোটিংয়ের ব্যবস্থাও করবে ইসি।
এবছর অক্টোবরের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হবে। এজন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেবে ইসি। এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন যাচাই-বাছাই করে নতুন দলের নিবন্ধন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর নতুন দলের নিবন্ধন শেষ করে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার আগে দ্বিতীয় দফায় সব দলের সঙ্গে সংলাপ করার পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2qA7E9f
May 19, 2017 at 02:23PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.