কুমিল্লায় কৃষ্ণচূড়ার রঙে আগুন লেগেছে প্রকৃতিতে

কুমিল্লার বার্তা রিপোর্ট ● ফুল ফোটার ঋতুর কথা উঠলেই প্রথমেই আসে ঋতুরাজ বসস্তের কথা। ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের কাছে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য যেন হার মানায় ঋতুরাজকেও। আর কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মকে দিয়েছে অন্য এক মাত্রা। ঋতুচক্রের আবর্তনে কৃষ্ণচূড়া তার মোহনীয় সৌন্দর্য্য নিয়ে আবারো  হাজির হয়েছে প্রকৃতিতে।

গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা রোদ্দুরকে সহনীয় করতে কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল রূপে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। দেখলেই মনে হয় কৃষ্ণচূড়ার রঙের আগুন জ্বলছে প্রকৃতিতে। এককথায় বলতে গেলে প্রকৃতিতে যেন আগুন লেগেছে কৃষ্ণচূড়ার।

সারা দেশের মতো কুমিল্লার প্রকৃতিতেও এখন কৃষ্ণচূড়ার সুদিন বইছে। এ সুদিনের সুবাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের হৃদয়। পাখির ডানায়, হাওয়ায়-হাওয়ায় উড়ছে তার লাবণ্য। গাছে গাছে রক্তিম আভা নিয়ে জেগে থাকা কৃষ্ণচূড়া দৃষ্টি কাড়ছে সেইসব ফুলপ্রেমি মানুষদের, যারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফুলের জন্য অপেক্ষা করেন। আর কৃষ্ণচূড়ার জন্য প্রহর গোনেন।

কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ফুলপ্রেমি মানুষ, তাদের কাছে কৃষ্ণচূড়া একটি জনপ্রিয় ফুল। নানা বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের কদর রয়েছে সব মহলেই। বিশেষ করে বাংলা কাব্য, সাহিত্য, সংগীত ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। ফুলটির রং এত তীব্র যে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে। হঠাৎ দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কৃষ্ণচুড়া গাছে যেন রঙের আগুন  লেগেছে।

স্বাধীনতার রূপক ও চেতনার অর্থে ফুলটিকে ব্যবহার করেছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক। শুধু কবি নয়, কুমিল্লার পথচারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার ফুলপ্রেমিদের আনন্দ ও মন কেড়েছে গ্রীষ্মের রাজা কৃষ্ণচূড়া।

কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের লালমাই, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, মনোহরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি উপজেলার কোথাও না কোথাও দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়ার। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার সদর দক্ষিণের সুয়াগঞ্জ এলাকা, চৌদ্দগ্রামের উপজেলা সদর ও মিয়াবাজার এলাকা, নাঙ্গলকোট উপজেলা সদর এলাকা, লাকসাম শহরের পশ্চিমগাঁও এলাকা, বরুড়ার সরকারি কলেজ এলাকা, লালমাই উপজেলার বাগমারা এলাকাসহ কুমিল্লা নগরীরর ধর্মসাগরপাড়, পুলিশলাইন, টমছমব্রিজ, চর্থা এলাকার বেশ কিছু পাড়া-মহল্লায়ও ফুলটি সগর্বে জেগে রয়েছে।

এ ছাড়া জেলার প্রতিটি উপজেলায় ইট-পাথরের মাঝেও গ্রীষ্মের চোখ জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া ফুল বাঙালির মনকে নাড়া দেয় গভীরভাবে। আর গ্রামে-গঞ্জে গেলেও কিছুক্ষণ পর পর দেখা মিলবে গ্রীষ্মের এ রাজার।

সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দু‌ই মাস নিয়েই গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্মের ফুলের কথা বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার কথা। সুমিষ্ট রসাল ফলের জন্য গ্রীষ্মকাল এগিয়ে রয়েছে, তবে ফুলের দিক থেকেও অন্যসব ঋতুর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে  গ্রীষ্মকাল। তাই ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায় গ্রীষ্মকালকেই। এ মৌসুমে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের যে উম্মাদনা, তা এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো অসম্ভব। কৃষ্ণচূড়ার ঐশ্বর্য, তার রঙের উজ্জ্বলতা অন্য ফুলকেও যেন হার মানিয়েছে। কৃষ্ণচূড়া যে কাউকে দিয়ে যাচ্ছে অন্যরকম এক ভালোলাগা।

ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই কৃষ্ণচূড়া ফুলটি প্রকৃতিতে নেমে আসতে শুরু করে। দূর থেকে কৃষ্ণচূড়া দেখলে শুধু মানুষের নয়, পাখিদেরও যেন মন ভরে ওঠে। তাই নানা জাতের পাখির আনাগোনাও থাকে গাছটিকে ঘিরে। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, টুনটুনি, চড়ুই, বুলবুল পাখির সরব উপস্থিতি থাকে সারা বেলা। শরীরে রক্তিম আভা মেখে কৃষ্ণচূড়া যেন সারাক্ষণ সবুজ বনভূমি, তৃণভূমিকে আলোকিত করে রেখেছে।

কৃষ্ণচূড়ার দাপটে অন্যসব ফুলের রং যেন ম্লান হয়ে পড়েছে। কুমিল্লার সৌন্দর্য বাড়াতে ফুলটি যেন বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কিছুদিনের জন্য অতিথি হয়ে আসা কৃষ্ণচূড়া এখন অনেক পাড়া-মহল্লায় তার আপন ঐশ্বর্যে অবস্থান করছে। কৃষ্ণচূড়ার তুলনা শুধু কৃষ্ণচূড়াই। রঙে, রূপে, উজ্জ্বলতা ও কমনীয়তায় কোনো  কিছুই যেন কৃষ্ণচূড়ার সমকক্ষ নয়। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে একবারের জন্য হলেও দৃষ্টি আটকে যায় না কিংবা থমকে দাঁড়ায় না- এমনটা হতেই পারে না। এমনই তীব্র আকর্ষণ এই কৃষ্ণচূড়ার। চূড়ার মতোই উচ্চতায় অবস্থান করা এ বৃক্ষটির রূপ-লাবণ্য-কমনীয়তা আর সৌন্দর্যে ছোট-বড়, বৃদ্ধ-বণিতা সবার কাছেই পরিচিত।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিখ রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যার গুলমোহর নামেও পরিচিতি রয়েছে। বসন্তের শেষ দিকে সাধারণত কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে পত্রহীন বাকানো ডালগুলোতে দেখা যায় কলির আভাস।  অন্যান্য ফুল গাছে যখন নতুন পাতা আসে কিন্তু ফুল আসে না, ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ফুলের কলি দেখা দেয়। আর গ্রীষ্মের শুরুতেই দেখা যায় লালের আভাস। তারপর লালে লালে উজ্জ্বল হয়ে প্রতৃতিতে যেন আগুন লাগিয়ে দেয় কৃষ্ণচুড়া।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা মো.আবুল বাশার রানা একজন ফুলপ্রেমি মানুষ। তিনি জানান, যখন কৃষ্ণচূড়া ফৌটে তখন গাছ-গাছালি লাল-সবুজ রঙে যেন মুখর হয়ে উঠে। আর এ সময়টা আমার কাছে ভালো লাগে অন্যরকমভাবে। এ ভালো লাগার কথা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না।” জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার দুলাল মিয়াও কৃষ্ণচূড়ার প্রেমিক। তিনি বলেন, “প্রতিবছর নয়, প্রতিটি দিনই যেন অপেক্ষায় গ্রীষ্মের এই দিনগুলোর জন্য। কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতি যেন এক অপূর্ব সুন্দরে সাজে। প্রতিদিন এ দৃশ্য না দেখলে মনে হয় জীবনটাই বৃথা।”

লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “গ্রীষ্মের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে প্রকৃতি। বাতাসে বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো দুলতে থাকে। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা। যা ভাষায় প্রকাশ করে আমার পক্ষে বোঝানো সম্ভব নয়।”

The post কুমিল্লায় কৃষ্ণচূড়ার রঙে আগুন লেগেছে প্রকৃতিতে appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2qUUBjG

May 18, 2017 at 04:00PM
18 May 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top