কুমিল্লা, ৩০ মে- সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া ও সদর উপজেলার ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন গুনানন্দি গ্রামের একই পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা সদর উপজেলার উত্তর দূর্গাপুর ইউনিয়নের ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন গুনানন্দি গ্রামের মৃত হাজী মোঃ দুলা মিয়ার ৫ ছেলের মাঝে ৪র্থ ছেলে তোফাজ্জল হোসেন রয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি সৌদিতে বসবাস করেন। ওমরা পালন করার জন্য গত শনিবার রাতে কুমিল্লা থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী শাহানারা বেগম নাতি-নাতনি নিয়ে সৌদিতে বসবাসরত মেয়ে শাম্মি আক্তার ও জামাই গুনানন্দী গ্রামের তোফাজ্জলের নিকট যাচ্ছিলেন। তাদের সৌদি বিমান থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় গাড়ি যোগে জেদ্দা-আলবাহার সড়কের বাতুয়ায় পৌঁছালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় তোফাজ্জল হোসেন (৪৫) ও তোফায়েল আহমেদ শাহরিয়ার (১৪) এবং শ্বাশুড়ি শাহনাজ বেগম (৬০) প্রান হারায়। গুরুতর আহত হয়েছে স্ত্রী শাম্মী আক্তার (৩৫),শিশু কন্যা সামান্থা (৮) আসমান (৫)। এ ঘটনার পর কুমিল্লায় নিহতের পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। নিহতদের স্বজনরা জানান, শনিবার রাতে সৌদিতে বসবাসরত মেয়ে শাম্মি আক্তার ও জামাই গুনানন্দী গ্রামের তোফাজ্জলের কাছে যাচ্ছিলেন তারা। উদ্দেশ্য ছিল ওমরা পালন করার। গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় শাশুড়ি ও নিজের সন্তানদের বিমানবন্দর থেকে বাসায় নেয়ার জন্য স্ত্রীসহ বিমানবন্দরে আসেন প্রবাসী তোফাজ্জল হোসেন। ফেরার পথে সকাল সাড়ে ৭টায় তাদের বহনকারী গাড়িটি জেদ্দা-আলবাহার সড়কের বাতুয়ায় পৌঁছালে দুর্ঘটনায় কবলে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তোফাজ্জেল হোসেন, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে শাহরিয়ার হোসেন ও শাশুড়ি শাহনারা বেগম নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তোফাজ্জলের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নিহা ও তিন বছর বয়সের মেয়ে আফনান এবং স্ত্রী শাম্মি আক্তার। সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লার একই পরিবারের ৩ জন নিহত আফনান ও শাম্মি আক্তারের অবস্থা কিছুটা উন্নত হলেও নিহা আইসিইউতে রয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। মোবাইল ফোনে এ খবর দেশে আসার পর পুরো পরিবারটি এখন শোকে স্তব্ধ। নিহত তোফাজ্জল হোসেনের বড় ভাই আবুল কালাম ও আবুল খায়ের জানান, তার ভাই তোফাজ্জল হোসেন স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন সৌদিতে আছেন। দেশ থেকে যাওয়া তার শাশুড়ি ও দুই সন্তানকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত স্বজনদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল বলেন. প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিহতদের মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে। সৌদি আরবস্থ জেদ্দা দূতাবাসের তথ্য কর্মকতা বেলায়েত হোসেন নিহতদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য সংসারের হাল ধরতে ১০ বছর পূর্বে প্রবাসে পাড়ি জমান মোস্তফা কামাল। বাবার অবর্তমানে ভাই বোন ও মায়ের দেখাশুনার জন্য তিনি ছিলেন একমাত্র কর্মক্ষম ব্যাক্তি। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরে পেলেও নিয়তির কাছ থেকে ফিরতে পারেনি তিনি। গত ২৮ মে প্রতিদিনের ন্যায় আনুমানিক রাত ১০ টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সৌদি আরবের আল কাশিম শহরে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন মোস্তফা কামাল। সে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের মৃত তফাজ্জল হোসেনের বড় ছেলে। তার মৃত্যুর খবর শুনে পরিবার, স্বজন ও এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহতের স্বজনরা জানান, মোস্তফা কামালের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে সে ছিল। তার উপর্জনে তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়ের সংসার চলত। নিহতের শোকাহত পরিবার ও স্বজনরা আরো বলেন, মোস্তফা কামালের মরদেহ দেশে আনা বিষয়ে তারা কোথায় যাবে, কার সহযোগিতা নেবে তাদের কিছুই জানা নেই। এই বিষয়ে সরকারী ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করার আহবান জানান তারা।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2qvmMG1
May 30, 2017 at 10:32PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top