বার্মিংহাম, ২৮ মে- এটা জেতা ম্যাচ। অন্তত পাকিস্তানের ইনিংসের ৪৩ ওভার পর্যন্ত তো এজবাস্টনের প্রস্তুতি ম্যাচটা বাংলাদেশেরই ছিল! ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫২ পাকিস্তানের। জিততে ৪২ বলে ৯০ রান লাগে। ওভার প্রতি প্রায় ১৩ রান! কোনো ব্যাটসম্যান নেই পাকিস্তানের। কিন্তু কোথাকার কোন ফাহিম আশরাফ, যার এখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি, সেই তিনিই কিনা প্রায় একা হাতে হারিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে! ৯ নম্বরে নেমে ৩০ বলে ফাহিম খেলেছেন অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংস। পেসার হাসান আলি অপরাজিত ২৭ রানে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৯৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি তাদের নবম উইকেটে! বাংলাদেশি বোলারদের পিটিয়ে ছাতু করে শেষ ওভারে ১৩ রানের হিসেব দাঁড় করিয়েছিলেন তারা। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে প্রথম বলে ফাহিম মারলেন ছক্কা। পরের বলে ৩ রান। এরপর হাসান বাউন্ডারি মেরে শেষ করে দিলেন সব! শনিবার বাংলাদেশের মুঠো থেকে জয় কেড়ে নিয়ে উৎসবে মাতলো পাকিস্তান। ২ উইকেটের জয় তাদের। ক্রিকেট যে কি মহান অনিশ্চয়তার খেলা! বাংলাদেশ তাই তামিম ইকবালের দারুণ সেঞ্চুরির পরও জিতল না। ৯ উইকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৪১ রানের পাহাড় গড়েও তারা হারা দল। ৪৯.৩ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৪২ রান তুলে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়ল। যে ম্যাচটিতে আসলে শেষ ওই ৭ ওভার ছাড়া জয়ের কোনো আশাই জাগাতে পারেনি তারা। বার্মিংহামে প্রথম এই প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানকে সব দিক দিয়েই হারিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ। মনে হচ্ছিল, যথার্থই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বর দল উড়িয়ে দিচ্ছে ৮ নম্বর দলকে। এক পর্যায়ে এও লাগলো যে, পাকিস্তানের তখন আত্মসমর্পণ করা বাকি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের কাছে আবার হার তাদের কপালে লেখা দেখা যাচ্ছিল। সব হিসেব বদলে দিলেন ফাহিম। ডানহাতি পেস বোলার বল হাতে মার খেয়েছেন, উইকেট পাননি। কিন্তু যখন কোনো জয়ের আশাই নেই তখন বাঁহাতি ব্যাটিংয়ে ৪টি করে চার-ছক্কায় পুরো পাশাই পাল্টে দিলেন। ১৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় হাসান যোগ্য সঙ্গ দিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসলেন তার সাথে। এই দুজনার আগে পাকিস্তানের সামান্য যে সম্ভাবনা ছিল তাও তো ৩৯তম ওভারে শেষ করে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৭২ রান করে শোয়েব মালিক বিদায় নিলেন। এরপর একটি রান আউটে মেহেদীর ভূমিকা। সেট শেষ স্বীকৃত রান করতে জানা ব্যাটসম্যান ইমাদ ওয়াসিমও (৪৫) তার শিকার। জয় থেকে হাত ছোঁয়া দুরত্বে তখন বাংলাদেশ। ফাহিম-হাসান জুটিতে হতভম্ব টাইগার দল দেখে কিভাবে হাত গলে বেরিয়ে যায় নিশ্চিত জয়। ৩৪২ রানের লক্ষ্য। পাকিস্তানকে আরো চাপে ফেলেছিলেন শুরুতে তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি। ১৯ রানে নেই দুই উইকেট। আজহার আলি ও বাবর আযমের মতো দুই স্তম্ভকে হারিয়ে চাপে পাকিস্তান। আহমেদ শেহজাদ (৪৪) ও মোহাম্মদ হাফিজ (৪৯) ৫৯ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামলান। কিন্তু আস্কিং রান রেটের সাথে পাল্লা দেওয়া হয় না। হাফিজের সাথে এরপর শোয়েব মালিকের ৭৯ রানের জুটি, যেটিকে মনে হচ্ছিল ইনিংস সর্বোচ্চ, তাতে শেষ রক্ষা হচ্ছিল না পাকিস্তানের। কিন্তু যাদের কাছে কোনো আশাই ছিল না সেই ৯ আর ১০ নম্বর ব্যাটসম্যানই কিনা পাকিস্তানের ডুবন্ত নৌকা টেনে তুললেন। বাংলাদেশকে দিলেন ডুবিয়ে। এর আগে বার্মিংহাম দেখেছে তামিম ইকবাল শো। মাশরাফি টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন। সৌম্য সরকার ১৯ রান করে দলীয় ২৭ রানের সময় বিদায় নেন। কিন্তু তামিম ৩৯ বলেই ফিফটি করে ফেলেন। জুনায়েদ খানের এক ওভারে মারেন তিনটি চার ও একটি ছক্কা। এরপর মারার দায়িত্ব নেন ইমরুল কায়েস। ৬২ বলে ৬১ রান করে বিদায় নেন তিনি। ১৪২ রানের জুটি গড়েছেন তামিমের সাথে, দ্বিতীয় উইকেটে। ইনফর্ম মুশফিকুর রহীম এসে চার্জ করেন। তাতে উদ্দিপ্ত হয়ে পর পর দুই ওভারে দুই স্পিনারকে দুই ছক্কা হাঁকান তামিম। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেকটি সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ৮৮ বলের সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৯৩ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ১০২ রান করে ফেরেন তামিম। ততক্ষণে তামিম-ইমরুলের ইনিংসে বড় সংগ্রহের পথ দেখেছে টাইগার দল। ইংল্যান্ডে মাত্র দুদিন আগে এসেছে তারা আয়ারল্যান্ড থেকে। কিন্তু এই কন্ডিশনে তাদের অপরিচিত লাগেনি। শেষ ম্যাচে যার ব্যাটে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে উঠে এসেছে সেই মুশফিক ৩৫ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৬ রান দিয়ে গেলেন। সাকিব আল হাসান ২৩, মাহমুদউল্লাহ ২৯, মোসাদ্দেক হোসেন ২৬ রান করেছেন। মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ রান। শেষ ৭ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও পেয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রান। ওয়ানডে আন্তর্জাতিকে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ৩২৯। সেটি ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করা সিরিজে। এই ম্যাচে শেষের নাটকে সেই সর্বোচ্চ রান পুঁজি করেই জেতাতে পারলেন না বাংলাদেশের বোলাররা! অতি নাটকীয়তায় সবাই দেখলো উল্টে যাওয়া ফল! সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৩৪১/৯ (তামিম ১০২, সৌম্য ১৯, ইমরুল ৬১, মুশফিক ৪৬, সাকিব ২৩, মাহমুদউল্লাহ ২৯, মোসাদ্দেক ২৬, মেহেদী ১৩, মাশরাফি ১, সানজামুল অপরাজিত ০; জুনায়েদ ৭৩/৪, হাসান ৫৮/২, ফাহিম ৩৫/০, ওয়াহাব ৬৮/০, হাফিজ ১১/০, শাদাব ৫৫/২, ইমাদ ৩৮/০)। পাকিস্তান ৪৯.৩ ওভারে ৩৪২/৮ (আজহার ৮, শেহজাদ ৪৪, বাবর ১, হাফিজ ৪৯, শোয়েব মালিক ৭২, সরফরাজ ৫, ইমাদ ৪৫, শাদাব ৭, ফাহিম অপরাজিত ৬৪, হাসান অপরাজিত ২৭; মাশরাফি ৬৮/১, তাসকিন ৮০/১, শফিউল ৪৬/১, সৌম্য ২৫/০, সাকিব ৪১/১, সানজামুল ১৭/০, মোসাদ্দেক ২৯/১, মেহেদী ৩০/২)। আর/১২:১৪/২৮ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2s8alMZ
May 28, 2017 at 06:13AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top