কলকাতা, ২৩ জুন- গড়িয়াহাটে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে থেকে মঙ্গলবার দিনেদুপুরে অপহরণ করা হয়েছিল একটি অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক স্বপন ঘোষকে। টাকার টোপ দিয়ে অপহরণ। অপহৃতকে রাখার ব্যবস্থাও হয়েছিল নিউ দিঘায়। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মোবাইল ফোনই ধরিয়ে দিল অপহরণকারীদের। গড়িয়াহাটে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে থেকে মঙ্গলবার দিনেদুপুরে অপহরণ করা হয়েছিল একটি অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক স্বপন ঘোষকে। ওই অপহরণের ঘটনায় ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন রাজ্য মহিলা তৃণমূলের শীর্ষস্তরের এক নেত্রী মৈত্রেয়ী সাহা। ওই ঘটনায় অরিন্দম দাস নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করেছে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ। বুধবার রাতে ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, মঙ্গলবার স্বপনকে বাঘাযতীনে একটি বাড়িতে রাখা হলেও, বুধবারই তাঁকে নিউ দিঘায় একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার স্বপনকে উদ্ধার করা হয়। এদিন ধৃতদের আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক আগামী ২৮ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, স্বপন দীর্ঘদিন ধরে টিচার্স ওয়েলফেয়ার নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থা চালাতেন। সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর থেকেই তাঁর ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে আমানতকারীরা টাকা ফেরত চেয়ে না পাওয়ায় স্বপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। যাদবপুর, নেতাজিনগর, চেতলা এবং পঞ্চসায়র থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণার বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছেন স্বপন। বেশ কিছুদিন জেলে থাকার পর মাসখানেক আগে জামিন পান। কিন্তু আমানতকারীদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সম্প্রতি বেশ কিছু আমানতকারী স্বপনের এলাকার বাসিন্দা অরিন্দমের দ্বারস্থ হন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। অরিন্দম বিষয়টি নিয়ে দ্বারস্থ হন মৈত্রেয়ীর। সূত্রের খবর, তখনই মৈত্রেয়ী অরিন্দমকে জানান, তাঁর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে, যার সঙ্গে স্বপন যুক্ত। তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন অরিন্দমকে। এরপর স্বপনের সঙ্গে টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে কথা বলেন মৈত্রেয়ী। পুলিশের দাবি, জেরায় মৈত্রেয়ী জানিয়েছেন, টাকা ফেরানোর বিষয়ে কথা বলার সময়ে তাঁর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার হিসাবে চান স্বপন। মৈত্রেয়ী সেই প্রস্তাবে রাজিও হন। এরপরই তৈরি হয় অপহরণের ছক। ঠিক হয়, নির্দিষ্ট সময়ে টোপের লোভে পাখি এলেই তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার টাকা দেওয়ার অছিলায় গড়িয়াহাটের ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে স্বপনকে আসতে বলেন মৈত্রেয়ী। কিন্তু তিনি নিজে সেখানে না গিয়ে বিষয়টি অরিন্দমকে জানিয়ে দেন। স্বপন ব্যাঙ্কে ঢুকতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন অরিন্দম এবং আরেক ব্যক্তি। শুরু হয় কথা কাটাকাটি। কার্যত বিরক্ত হয়ে ব্যাঙ্কের কর্মীরা তিনজনকেই বেরিয়ে যেতে বলেন। স্বপন ব্যাঙ্কের বাইরে বার হওয়া মাত্রই অরিন্দমের কয়েকজন শাগরেদ তাঁকে জোর করে একটি এসইউভি গাড়িতে তুলে নিয়ে পালায়। বেশ কিছুক্ষণ স্বপনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে খোঁজখবর শুরু করেন তাঁর বাড়ির লোকেরা। মঙ্গলবার মিসিং ডায়েরি করার পর বুধবার অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। তদন্তে নেমে পুলিশ স্বপনের মোবাইল ফোনের তথ্য খতিয়ে দেখে জানতে পারে, অরিন্দম এবং মৈত্রেয়ীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। এরপরই বুধবার রাতে লেক থানা এলাকার বিবেকানন্দ পার্কের বাড়ি থেকে মৈত্রেয়ীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে অরিন্দমকে গ্রেফতার করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। শেষে দরজা ভেঙে অরিন্দমকে গ্রেফতার করা হয়। আর/১৭:১৪/২৩ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2sILdxw
June 23, 2017 at 10:01PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top