ঢাকা::স্বাধীনতার পর গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয় ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে। ডিআইটির পক্ষ থেকে গড়ে ওঠা এসব আবাসিক এলাকার প্লট যারা পেয়েছেন তারা তাদের বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লট শুধু আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবাসিক এলাকায় যথেচ্ছভাবে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নজরদারির কেউ না থাকায় সরকারিভাবে গড়ে ওঠা প্রতিটি আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হচ্ছে।
একসময় রাজধানীর ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমার মূল কেন্দ্র ছিল মতিঝিল-দিলকুশা এলাকা। কালের বিবর্তনে গুলশান এখন সে স্থান দখল করেছে এমনকি বিদেশীদের কাছেও এটি দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। বিলাসবহুল হোটেল, গেস্টহাউজ, বায়িং হাউস, ট্রাভেল এজেন্সি, জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান, রেস্তরাঁ, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতালের কারণে গুলশানকে এখন আবাসিক এলাকা হিসেবে ভাবাই দায় হয়ে পড়েছে। চিহ্নিত আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকার রূপ ধারণ করায় ভয়াবহ যানজটের শিকার হচ্ছে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকা। এক দিকে বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ, অন্য দিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশবান্ধব রাজধানী গড়ে তোলার স্বপ্ন আজ অবধি পূরণ হয়নি। কিন্তু এই রাজধানীকে আমরা তিলে তিলে তিলোত্তমা করে গড়ে তুলতে চাই। দিনে দিনে নগরীর পরিধি বাড়লেও পরিকল্পনার অভাব এখনো প্রকটভাবেই দৃশ্যমান। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও মানুষের লোভের আগুনে পুড়ছে রাজধানীবাসীর স্বপ্ন।
রাজধানীর আবাসিক এলাকাতেই একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ শিল্প-কারখানা। নগরবাসী আবাসিক এলাকায় কারখানার অবাধ অবস্থানে অসহায়। ফলে বাধ্য হয়েই নগরবাসীর অনেককেই কারখানা ভবনে কিংবা এর আশপাশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করতে হচ্ছে। এতে শব্দ দূষণসহ নানা ধরনের দূষণের শিকার হচ্ছেন।
তথ্য মতে, রাজধানীর পুরনো ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ, ইসলামবাগ, বংশাল, কোতোয়ালি, চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, সূত্রাপুর, কদমতলী, পোস্তগোলা, ধোলাইখাল, ফরিদাবাদ, ইসলামপুর, বড় কাটরা, সোয়ারিঘাট, পোস্তাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বহু বছর ধরেই হাজার হাজার শিল্প-কারখানা চালু রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব শিল্প-কারখানা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিও বটে। কারণ এসব শিল্প-কারখানায় ব্যাটারি ঢালাই, ওষুধসামগ্রী, পলিথিন ব্যাগ, পলিথিনের দানা, প্লাস্টিক সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক পাখা ও তার, আচার, চকোলেট, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে বিপুলসংখ্যক ঝালাই কেমিক্যাল, রেকটিফায়েড স্পিরিট, নানা ধরনের সুগন্ধি ও আতর, আতশবাজি, পটকা, সাইকেল, নাটবল্টু, খেলনা, প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানা। একই সাথে নকল প্রসাধনী সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের গহনা, জুতা, স্যান্ডেল, রাবার, রং, সলিউশন, ব্লিচিং পাউডার, ওয়াশিং সামগ্রী, ভিসিডি প্লেয়ারসহ আরো অনেক পণ্য তৈরির কারখানাও রয়েছে এসব এলাকায়।
রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে এর পরিবেশ বদলে দিতে হবে। রাজধানীর বাতাসে এখন বিষ। খালগুলো মরে গেছে, দখল হয়ে গেছে। বিষাক্ত বর্জ্য রাজধানীর পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। এক দিকে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য রাজধানীর পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। অন্য দিকে, পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো আবাসিক এলাকায় যেকোনো ধরনের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় রাসায়নিকের গুদাম ও ট্যানারি ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার বিকল্প নেই। রাজধানীকে বাসযোগ্য করার স্বার্থে এটা করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। দিনে দিনে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ঢাকা। একটি দেশের রাজধানীর নিকৃষ্ট শহরের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করাটা একেবারেই সম্মানের নয়। কিন্তু ঢাকা যে বসবাসের অনুপযোগী একটি শহর, তা মেনে না নিয়ে আমাদের উপায় নেই।
রাজধানী ঢাকায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো স্থান একেবারে নেই বললেই চলে। রাস্তার দুঃসহ যানজট। রাজধানীর ভেতরে ট্যানারি শিল্প ও রাসায়নিকের গুদাম। সব মিলিয়ে রাজধানী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে দিনের পর দিন। অথচ এই ঢাকাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। তিলে তিলে তিলোত্তমা করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। তবে এখনো সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার বাস্তবায়ন।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2qSInsr
June 05, 2017 at 04:33PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন