পাহাড় ধসে তিন জেলায় নিহত ৩৬, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে…।


সুরমা টাইমস ডেস্ক : টানা বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে সেনা কর্মকর্তা, নারী-শিশুসহ অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার (১২ জুন) রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এসব পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড় ধসের পর থেকে রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

নিহতদের মধ্যে রাঙামাটিতে ১৮ জন, চট্টগ্রামে ১২ জন ও বান্দরবানে ৬ জন রয়েছেন।

রাঙামাটি শহরে ও কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্যসহ অন্তত ১৮ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালে জেলা শহর থেকে ১২ জন, কাপ্তাই উপজেলা থেকে দু’জন ও মানিকছড়ি সড়ক থেকে চার সেনা সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা সেনা সদস্যরা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, কর্পোরাল আজিজ ও সৈনিক শাহিন।

রাঙামাটি শহরে নিহতরা হলেন, ভেদভেদি এলাকার রুমা আক্তার, নুরি আক্তার, জোহরা বেগম, সোনালি চাকমা, অমিত চাকমা, আয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস, মাহিমা আক্তার, মোহাম্মদ বাবু, অনুচিং মারমা, নিকি মারমা, আবুল হোসেন ও ইকবাল হোসেন। আর কাপ্তাই উপজেলার কারিগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা অনুচিং মারমা ও নিকি মারমার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

লাশগুলো রাঙামাটি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ রশীদ জানান, এটা একটা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে। অনেক স্থানেই এখনো মানুষ মাটি চাপা পড়ে আছে।

একই সময়ে বান্দরবানে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় মা-মেয়েসহ অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন, শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৪০), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮), কালাঘাটা এলাকার রেবা ত্রিপুরা (২২), লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকার তিন শিশু- শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানান, টানা বর্ষণের ফলে রাত সাড়ে তিনটার দিকে শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে ঘরের ওপর পড়লে মা কামরুন্নাহার বেগম ও মেয়ে সুখিয়া বেগম মারা যায়। এ সময় কামরুন্নাহারের স্বামী আবদুল আজিজও গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রায় একই সময়ে লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে লাল মোহন বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তির ঘরের ওপর পড়লে তার তিন শিশু সন্তান- মিতু, শুভ ও লতার মৃত্যু হয়। এছাড়া রাতে প্রবল বর্ষণের সময় শহরের কালাঘাটা এলাকার কবরস্থানের পাশে ঘরের ওপর মাটি চাপা পড়লে রেবা ত্রিপুরা নামে বান্দরবান সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হন।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ জানান, খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে পড়া মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় মা-মেয়ের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাটি খুঁড়ে তাদের লাশ বের করার চেষ্টা চলছে।

এদিকে, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সাংঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে জেলা শহর, লামা ও আলীকদম উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ায় এবং পানি জমে যাওয়ায় বান্দরবানের থানছি, রুমা, লামা ও আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গতদের অনেকে পরিবার নিয়ে উঁচু স্থান ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে নারী শিশুসহ ১২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আসগর আলীর কাঁচা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় আজগর আলীর শিশুকন্যা মাহিয়া মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।

এছাড়া একই ইউনিয়নের ছনবুনিয়া উপজাতীপাড়ায় একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুই শিশু কেউচা কেয়াং (১০), মেমাউ কেয়াং (১৩) এবং তাদের মা মোকাইং কেয়াং (৫০) নিহত হন।

চন্দনাইশ থানার ওসি (তদন্ত) মো. শাখায়াত হোসেন বজানান, ধোপাছড়ি এলাকাতে পাহাড় ধসে চারজনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। কিন্তু আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদস্থ কন্ট্রোলরুম থেকে জানানো হয়, চন্দনাইশে পাহাড় ধসের খবর পেয়ে পটিয়া স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে।

এদিকে, রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর রাজানগর এলাকায় পাহাড় ধসে ৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামশুল আলম।

রাঙ্গুনিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ ভূইঁয়া জানান, তারা খবর পেয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার দুর্গম রাজানগর এলাকায় পাহাড় ধসে ৭/৮ জন মারা গেছে।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2s5TZFS

June 13, 2017 at 06:33PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top