লন্ডন, ১৮ জুন- ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি মানেই উত্তেজনায় ঠাসা এক ম্যাচ। খেলোয়াড়-সমর্থকদের স্নায়ুর বড় পরীক্ষা। উত্তেজনার পারদ এতটাই থাকে যে ক্রিকেট ছাপিয়ে কখনো রূপ নেয় যুদ্ধে! ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে তেমনি এক রোমাঞ্চকর যুদ্ধে নামছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটি। রোববার বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে তিনটায় শুরু হবে হাইভোল্টেজ ম্যাচটি। ভারত-পাকিস্তানের মাঝে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ অনেকদিন ধরেই বন্ধ। আইসিসি আর এসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে পরস্পরের দেখা হওয়ার সুযোগ থাকে। যার জন্য অপেক্ষায় থাকেন বিশ্বের কোটি ক্রিকেটভক্ত। গ্রুপ পর্বের পর এবার শিরোপার লড়াইয়ে দেখা মিলছে দল দুটির। গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি একেবারেই জমেনি। আধিপত্য দেখিয়ে ভারত জিতেছে ১২৪ রানের বড় ব্যবধানে। আগের ম্যাচটা একপেশে হলেও ফাইনালে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অপেক্ষা করছে সেটির আঁচ মিলেছে দুই দলের অধিনায়কের কণ্ঠে। শুরুর ভঙ্গুর অবস্থা থেকে পরের ম্যাচেই বের হয়েছে পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তারা কাটে সেমির টিকিট। আসরে ফেভারিটের তকমা পাওয়া স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে সরফরাজ আহমেদের দল। মাংসপেশিতে টান কাটিয়ে এক ম্যাচ পর ফাইনালের একাদশে ফিরছেন মোহাম্মদ আমির। ফাইনাল মঞ্চে ভারতীয় ইনফর্ম ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে দ্রুত ফেরানোর কৌশল আঁটছেন এ বাঁহাতি পেসার। বিগ ম্যাচের আগে বিরাট কোহলির সমীহও পাচ্ছে পাকিস্তান। টুর্নামেন্টে দুর্দান্তভাবে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো দেখে সতর্ক ভারতীয় অধিনায়ক, এমন টুর্নামেন্টে অনেক দল খুব ভালোভাবে শুরু করে আবার কারও শুরু খারাপ হয়। শেষ পর্যন্ত কী হল সেটিই বিবেচ্য। আমাদের সঙ্গে হারের পর পাকিস্তান দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাদের দিনে যে কাউকে হারাতে পারে। আমরা সতর্ক থাকছি। নিজেদের কীভাবে ব্যালেন্স করতে পারি সেটিই বড় বিষয়। দুই দলই চাইবে জেতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে। জমজমাট একটা লড়াই হবে। দুই দলের ১১ জন ক্রিকেটারই ১২০ ভাগ দিয়ে চেষ্টা করবে। মুখোমুখি দেখায় ইংল্যান্ডের মাটিতে সবশেষ দুটি ম্যাচে জিতেছে ভারত। কিন্তু অতীতের পরিসংখ্যানে কোহলির চোখ আটকাচ্ছে না, জেতার জন্য খেলবো। রেকর্ড, পরিসংখ্যানে আমি বিশ্বাসী নই। কমপ্লিট ম্যাচ খেলতে পারলে রেজাল্ট আমাদের পক্ষে আসবে। পেছনে কতবার জিতেছি সেটি দেখে এখানেও জেতার গ্যারান্টি নেই। অতীতে ধ্যান দিচ্ছি না। নিজেদের উপর বিশ্বাসী থাকা গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আট উইকেটে পাওয়া জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে ভারতকে মোকাবেলা করতে চান। বলছেন, পুরো টুর্নামেন্ট খেলতেই এখানে এসেছিলাম। আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবো। ইতিবাচক ক্রিকেট খেললে রেজাল্ট আসবে। মিডলঅর্ডার ফর্মে ফিরেছে। বোলিং খুব ভালো হচ্ছে। আমির ফিরছে। যতটা ইতিবাচক থেকে খেলা যায়। আমাদের দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে। ম্যাচটি খেলার জন্য সবাই রোমাঞ্চিত। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের প্রশংসাও করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক, ভারতের ব্যাটিং খুব শক্তিশালী। বেশ ফর্মে আছে তাদের টপঅর্ডার। আমাদের বোলারদেরও আক্রমণাত্মক হতে হবে। ফাইনালের পথে ভারত খেলেছে দুর্দান্ত ক্রিকেট। সবগুলো ম্যাচেই তারা পেয়েছে দাপুটে জয়। সেমিতে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে দলটি। ধাওয়ান-রোহিতের সঙ্গে দারুণ ফর্মে কোহলিও। আইসিসির টুর্নামেন্টে এর আগে কেবল একবার ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হয়েছে। সেটি ২০০৭ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে। জোহানেসবার্গে দারুণ লড়াইয়ের পর ৫ রানের নাটকীয় জয় পায় ভারত। প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ওঠে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে। ১০ বছর পর আরও একটা আইসিসি টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলতে নামছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরে এসে এবারই প্রথম ফাইনাল খেলছে পাকিস্তান। অন্যদিকে ভারত দুই বার জিতেছে শিরোপা। এক বার পেয়েছে রানার্সআপ ট্রফি। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ধোনির দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় আসরেই শিরোপার সুযোগ সামনে এসেছিল ভারতের। কিন্তু ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে হেরে সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি দলটির। এবার সুযোগ টানা দুইয়ে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এটি হতে যাচ্ছে ১২৯তম ম্যাচ। এর আগে ১২৮ বার লড়াইয়ে পাকিস্তান জিতেছে ৭২ ম্যাচে, ভারত ৫২টিতে। পরিত্যক্ত হয়েছে চারটি ম্যাচ। আরেকটি ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের আগে স্পটলাইটে থাকছেন পাকিস্তানের শোয়েব মালিক ও ভারতের যুবরাজ সিং। বর্তমান দলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বোচ্চ রান ও উইকেট এ দুই অলরাউন্ডারের। মালিক ৩৮ ম্যাচে চার সেঞ্চুরি ও দশ ফিফটির সাহায্যে ৪৮.৫০ গড়ে করেছেন ১৬৪৯ রান। ভারতের যুবরাজ সিং ৩৭ ম্যাচ খেলে ৪৩.১৬ গড়ে করেছেন ১৩৩৮ রান। দুটি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে নয় ফিফটি। উইকেট তোলার দিক থেকেও অগ্রগণ্য এই দুই ক্রিকেটার। মালিক ২২ আর যুবরাজ নিয়েছেন ১৩ উইকেট। এ আর/১৪:২৫/১৮ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2rJCyc2
June 18, 2017 at 08:27PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন