ঢাকা, ২২ জুন- দপ করে নিভে গেলেন সৌম্য সরকার। সাব্বির রহমানের ভালো শুরুও দিতে পারেনি দীর্ঘস্থায়ী নির্ভরতা। অথচ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এই দুই ব্যাটসম্যানকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা তাঁরা মেটাতে পারেননি। বাংলাদেশ দলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দুঃখের নাম সৌম্য-সাব্বির। বিসিবির ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ও জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বিশ্লেষণ বলছে, সৌম্যের সমস্যা পুরোপুরিই টেকনিক্যাল। এই ওপেনারের পায়ের নড়াচড়ায় জড়তা দেখছেন তাঁরা। একই ভুল তাই বারবার হচ্ছে। সাব্বির লোয়ার মিডল অর্ডারে যতই সফল হোন, তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন ও মানসিকতা তিন নম্বরের উপযুক্ত কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন নাজমুল আবেদীন। সালাউদ্দিন তো তিন নম্বরে মাহমুদউল্লাহ অথবা সাকিবকেই যোগ্য মনে করেন। তিন নম্বরে সাব্বির যে একেবারেই অচল, তা নয়। তবে বিকেএসপির সাবেক এই কোচের শর্ত, তাঁর খেলায় তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের পরিপক্বতা আসতে হবে। নাজমুল আবেদীনের চোখে সাব্বির খুব ভালো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনে উঠে আসার পর তাঁকে একটু অচেনা লাগার কারণটাও ধরতে পেরেছেন অভিজ্ঞ এই কোচ, সাব্বির ছোটবেলা থেকে নিজেকে মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেই ভেবে আসছে। ব্যাটসম্যান সাব্বিরের মানসিক গঠনটাই ও রকম। আমার ধারণা, ওপরে উঠিয়ে আনায় সে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যে দুটি ম্যাচে তিনে ব্যাট করেছেন, দুটিতেই সাব্বিরকে নামতে হয়েছে ইনিংসের প্রথম ওভারে। নাজমুল আবেদীনের দৃষ্টিতে নতুন বলে খেলাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাঁর জন্য, সাব্বির যেখানে ব্যাট করত, পুরোনো বলই পেত সে। কিন্তু এখন তাকে প্রায়ই নতুন বলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ইংল্যান্ডে তো শুরুর দিকে বলে মুভমেন্টও থাকত। শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে এই দুই জায়গার ব্যাটিংয়ে পার্থক্য অনেক বেশি। সাব্বিরকে নিয়ে প্রায় একই বিশ্লেষণ সালাউদ্দিনেরও। তিনি মনে করেন, তিনে খেলতে হলে সাব্বিরকে আরও পরিণত হতে হবে। ছয়-সাতে বেশির ভাগ সময় একই পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে হয়। কিন্তু তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের কাছে কখনো উইকেট আঁকড়ে থাকার দাবি থাকে, কখনো তাকে দ্রুত রান তুলতে হয়। সাব্বিরের অপরিপক্বতা দেখছেন তিনি প্রথমটিতে, যে তিন নম্বরের জন্য প্রস্তুত তাকেই সে জায়গায় খেলতে দেওয়া উচিত। কাউকে নিচ থেকে তুলে এনে তিন নম্বর ব্যাটসম্যান বানানোর দরকার নেই। জাতীয় দল গবেষণা করার জায়গা নয়। তিন নম্বরে সাব্বিরের সমস্যা থাকলে কোচের উচিত আগে সেটা ঠিক করে তাকে তিনে আনা। তবে এখানে সামান্য দ্বিমত আছে নাজমুল আবেদীনের, এতে লাভ হলে ভালো কথা। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমরা আসল সাব্বিরকে হারিয়ে ফেলতে পারি। এ রকম উদাহরণ আমরা আগেও দেখেছি। সৌম্যকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সালাউদ্দিন সরাসরিই বলে বসলেন, সৌম্য যে বারবার একই ভুল করছে, সেটি মেনে নিয়ে ইমরুল কায়েসের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। সৌম্যের সমস্যা পুরোপুরি টেকনিক্যাল বলেই মনে হয় আমার। তাই একই ভুল বারবার হচ্ছে। ওপরের দিকের একজন ব্যাটসম্যান নিয়মিত এভাবে আউট হলে অন্য ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি হয়। সৌম্য সরকারের প্রতিভা এবং সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই সালাউদ্দিনের। প্রশ্ন তাঁর প্রতি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পক্ষপাতিত্বে, দলের কেউ হয়তো মুখ ফুটে কিছু বলে না। কিন্তু বারবার একই ভুল করার পরও যখন কেউ সুযোগ পেতে থাকে, তখন দলের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব তো পড়েই। নাজমুল আবেদীন সৌম্যের মধ্যে মানসিক ও টেকনিক্যাল দুই ধরনের সমস্যাই দেখছেন, যেকোনো কারণেই হোক ওর আত্মবিশ্বাসটা একটু কম মনে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পায়ের নড়াচড়াও ঠিক মনে হয়নি। সৌম্যের ব্যাটে আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখেই অভ্যস্ত সবাই। শুরু থেকে ভালো করায় চাপটা কী, সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। এখন তাঁর কাছে যখন দলের চাহিদা বাড়ছে, চাপটা আস্তে আস্তে টের পাচ্ছেন সৌম্য। আর ঠিক এই সময়েই ব্যাট হাতে ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস নাড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারে তার। নাজমুল আবেদীন এখানে পারিপার্শ্বিকতারও দায় দেখেন, সৌম্য ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত। কিন্তু ব্যর্থতা নিয়ে বেশি আলোচনায় হয়তো সে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। এই সময়ে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখা জরুরি। সৌম্যকে হাথুরুসিংহের সমর্থন দিয়ে যাওয়ার নীতিকে সে কারণেই ঠিক মনে করেন তিনি, তার প্রতি আস্থা রাখা হচ্ছে, সম্মান দেওয়া হচ্ছে। এটা ওর ভবিষ্যতের জন্য ভালো। এই চক্র থেকে বের হতে পারলে সৌম্য আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হবে। এক চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ব্যর্থতা দিয়ে মিথ্যা হয়ে যায় না সৌম্য-সাব্বিরের সামর্থ্য। শেষ হয়ে যায় না তাঁদের কাছে প্রত্যাশা। সৌম্য-সাব্বিরকে তাই ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। আর/০৭:১৪/২২ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2rXgRWn
June 22, 2017 at 01:39PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন