ইউরোপ ::থেরেসা মে গত জুলাইতে যখন ক্ষমতা নেন, মার্গারেট থ্যাচারের পর তিনিই হন ব্রিটেনের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।
তবে মার্গারেট থ্যাচারের মত তাকে নির্বাচন করতে হয়নি। হয়তো সেই দুর্বলতা ঘোচাতে হঠাৎ করে ৮ই জুন সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেন তিনি।
তখন থেকে একজন দক্ষ এবং শক্ত মনের রাজনীতিকের একটি ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন থেরেসা মে।
তবে থেরেসা মে’র শক্ত মানসিকতা নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টিতে সবসময় কম-বেশি কথাবার্তা সবসময়ই ছিলো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যমেরনের মন্ত্রিসভায় তিনি যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন আরেক মন্ত্রী তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন ‘সাংঘাতিক কঠিন মহিলা।’ দলের অনেকে বলেন তিনি ‘অনমনীয়’ ধরনের।
থেরেসা মে এখন এসব বিশ্লেষণকে প্রশংসা হিসাবে বিবেচনা করছেন এবং ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলার চেষ্টা করে গেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ প্রত্যাহার নিয়ে দেন-দরবারের সময় তিনি শক্ত হাতে ব্রিটেনের স্বার্থরক্ষায় লড়বেন। আর তাতেই ডানপন্থী মিডিয়ার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি।
লন্ডনের কাছে সাসেক্স কাউন্টির ইস্টবোর্ন শহরে একজন পাদ্রীর ঘরে জন্ম হয় টেরেজা ব্রেইজারের। চার্চের স্কুলে পড়াশোনা শুরু। হাইস্কুলে পড়ার সময় শনিবারে একটি বেকারিতে কাজ করে হাতখরচা চালাতেন। তার স্কুলের কয়েকজন বন্ধু পরে বলেছেন, লম্বা সুশ্রী ফ্যাশন প্রিয় থেরেসা তখন থেকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
স্কুল শেষে তিনি ভর্তি হন অক্সফোর্ড বিশ্বদ্যিালয়ে। যে প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটেনের রাজনীতিক নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
১৯৭৬ থেরেসা মে’র প্রেম শুরু হয় স্বামী ফিলিপ মে’র সাথে। বয়সে দু বছরের ছোট ফিলিপ মে তখন অক্সফোর্ড ছাত্র সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টির সাথে সম্পর্কিত কনজারভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে তাদের দুজনের মধ্যে পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো। তিনিও তখন অক্সফোর্ডের ছাত্রী।
দুজনেই পরে বলেছেন, প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েছিলেন তারা। পরে ১৯৮০ তে বিয়ে করেন তারা।
থেরেসা মে অবশ্য বলেছেন শিশু বয়সে প্রধানমন্ত্রী হতে চাইতেন তিনি, কিন্তু সত্যি সত্যি সেরকম কোনো উচ্চাভিলাষ তার সেভাবে ছিলনা।
অক্সফোর্ড থেকে বেরিয়ে ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন। কিন্তু রাজনীতিই যে তার গন্তব্য সেটা কখনই ভোলেননি তিনি।
প্রথম নির্বাচন করেন দক্ষিণ লন্ডনের মার্টন এলাকায় স্থানীয় সরকারের একজন কাউন্সিলর পদে। প্রায় দশ বছর ধরে কাউন্সিলর ছিলেন।
প্রথম এমপি নির্বাচনে দাঁড়ান ১৯৯২ সালে ডারহাম কাউন্টির একটি আসনে। অনেক ভোটে হেরে যান। দু বছর পর পূর্ব লন্ডনের বার্কিং এলাকায় একটি উপনির্বাচনে আবার দাঁড়ান। আরো খারাপ পরাজয় হয়। দু হাজারেরও কম ভোট পান সেই নির্বাচনে।
অপ্রত্যাশিত সাফল্য আসে ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে। টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি যখন ব্যাপকভাবে জিতে ক্ষমতায় আসে, কনজারভেটিভ পার্টির সেই ক্রান্তিকালে লন্ডনের কাছে মেইডেনহেড এলাকা থেকে আশাতীতভাবে জিতে যান থেরেসা মে। তখন থেকে সেই সিটে তিনি বার বার জয় পেয়ে আসছেন।
দু বছর পর ১৯৯৯ তে দলের ছায়া সরকারে জায়গা করে নেন তিনি। ২০০২ তে তিনিই প্রথম নারী যিনি কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান হন। সে সময় আরো বেশি নারীকে যেন মনোনয়ন দেয়া হয়, তার জন্য দলের ভেতর লড়েছেন তিনি।
তবে পর পর তিন দফা হেরে ‘নটিং হিল সেট’ নামে কনজারভেটিভ পার্টির যে কজন নেতা শেষ পর্যন্ত দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন যাদের নেতৃত্বে ছিলেন ডেভিড ক্যামেরন এবং জর্জ অজবর্ন তাদের মধ্যে জায়গা পাননি থেরেসা মে।
তবে ২০০৯ সালে কনজারভেটিভদের নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান থেরেসা মে। অনেক বাঘা বাঘা রাজনীতিক যখন এই মন্ত্রণালয়ে এসে হিমশিম খেয়েছেন, সেখানে থেরেসা মে শক্ত হাতে সামলেছেন তার দায়িত্ব।
শক্ত ব্যাক্তিত্ব
তার স্পষ্টভাষী অনমনীয় স্টাইলের কারণে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের সাথে ঠোকাঠুকি লাগলেও, সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পান তিনি।
কোয়ালিশন সরকারের শরীক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তৎকালীন মন্ত্রী ডেভিড ল তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন- ‘অভিবাসন ইস্যুতে তার (থেরেসা মে) সাথে জর্জ অজবর্নের (অর্থমন্ত্রী) হরহামেশা ঝগড়া হতো .. এমনকী প্রধানমন্ত্রী ক্যমেরন এবং থেরেসা মে পরস্পরকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। আমি ভাবতাম তিনি দু বছরের বেশি টিকবেন না।’
সামাজিক অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির কট্টর অংশের সাথে তার বিরোধ হয়েছে। একবার এক দলীয় সম্মেলনে থেরেসা মে বলেছিলেন, মানুষ এখনও তাদের ‘নাস্টি পার্টি” অর্থাৎ স্বার্থপর হৃদয়হীন দল হিসাবে দেখে। এ ধরনের কথা পছন্দ করেননি দলের অনেকে। পুলিশকে সন্দেহবশত তল্লাশির অধিকার দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন তিনি। ব্রিটেনে মুসলিম সমাজে শারিয়া আইনের প্রচলনের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। ডেভিড ক্যামেরন সরকারের সময় কল্যাণভাতা অতিমাত্রায় কমানোর বিরোধিতা করেছেন।
অর্থাৎ দলের ভেতরে সবসময় পালে হাওয়া লাগিয়ে চলেননি থেরেসা মে। ৮ই জুনের নির্বাচনের আগে তার সেই স্বাধীনচেতা সাহসী শক্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি ভোটারদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি।
from যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2sl1M54
June 09, 2017 at 03:49PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন