দোহা, ০৮ জুন- কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের মধ্যে একধরনের চাপা উদ্বেগ বিরাজ করছে। গত দুদিন ধরে কাতারে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে ছিল এ উদ্বেগের ছোঁয়া। মঙ্গলবার (৬ জুন) কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন কমিউনিটির নেতাদের নিয়ে রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বৈঠক করার পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এ উদ্বেগ কিছুটা কমে এসেছে। প্রথম দিন প্রবাসীদের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও সংকটে যে আশঙ্কা ছিল তাও কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রবাসী। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশিদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। সবাইকে সতর্ক করেন রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। আতঙ্কিত হয়ে কিছু না করার জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এদিকে অবরোধের প্রথম দিন জনমনে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও বুধবার (৭ জুন) থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংকটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তাও কেটে গেছে বলে জানান কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ। এরপর বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশটির সীমান্ত। কাতারের পাইকারি মার্কেটের ব্যবসায়ী ফেনীর হাসান জানান, এই মুহূর্তে খাদ্য সংকট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই প্রচুর পণ্য মজুত রেখেছেন। যা দিয়ে রোজার পর আরও এক মাস ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়া যাবে। কাতারে বাংলাদেশি আইটি প্রতিষ্ঠান ইম্পেলে কর্মরত শহিদুল হক বাবু বলেন, আশা করছি তেমন কোনও অসুবিধা হবে না। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের আইটি ব্যবসা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে দুবাই। বহির্বিশ্ব থেকে আইটি পণ্যগুলো সরাসরি দুবাই পোর্টে আসার পর সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে থাকেন। এ অবস্থায় কাতারের কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলেও কাতার সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এছাড়াও দোহা নিউজ এর বরাত দিয়ে শহিদুল হক জানান, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনের জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কুয়েত সরকার এগিয়ে এসেছে। প্রাথমিক সমঝোতার জন্য গতকাল মঙ্গলবার কুয়েতের আমির শেখ সাবহ আহমেদ আল সাবাহ সৌদি আরব গেছেন। অন্যদিকে কুয়েতের আমিরও একইদিন সকালে কাতারের আমিরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরাও আশা করছি এ সংকট কেটে যাবে এবং আমাদের কর্মক্ষেত্রে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। মিসাইমার বারওয়া হাউজিংয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি গৃহিনী নাঈমা আক্তার শিল্পী জানান, ২০১৪ সালেও কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরব অবরোধ আরোপ করেছিল। তবে তখন আকাশ ও স্থলপথ দুটোই খোলা ছিল। যার কারণে এখানে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এবার আকাশ ও স্থল পথেও অবরোধ জারি করায় আমরা কিছুটা শংকিত। তারপরও আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা এখানে প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আছি। পরিস্থিতি যাই হোক মানিয়ে চলতে হবে। এটা মাথায় রেখেই মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাতারের আইন খালিদ এলাকায় বিন জাবর গ্রুপে কার ক্লিনিংয়ে কাজ করেন লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা মো. ফরিদ মিয়া। তিনি বলেন, আমার বেতন মাত্র ১২০০ রিয়েল, খাওয়া দাওয়া ও অন্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৫০০ রিয়েলের মতো খরচ হয়। বাকি টাকা দেশে পাঠাই। এই অবস্থায় যদি জিনিসের দাম বেড়ে যায় তাহলে আমাদের তো আর কিছুই করার নেই। আগে যেখানে মাসে ১৫ হাজার টাকা পাঠাতে পারতাম এখন সেখানে হয়তো ১০ হাজার করে পাঠাতে পারবো। আর/০৭:১৪/০৮ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2r7V8KB
June 08, 2017 at 02:15PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন