প্রতিনিধি : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে সুইডেন ।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর সুইডেনে দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফর এটা । এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লোফভেন। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ।
শহিদুল হক জানান , সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে বলেছেন, ইট ওপেনস এ নেক্সট ফেইস অব আওয়ার রিলেশন্স। এটা দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর সম্পর্কের দ্বার উন্মোচিত করল।
এর আগে বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর সুইডেনে দ্বিপক্ষীয় সফর হয়নি বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার কয়েকটি খাত চিহ্নিত করেছেন।
প্রথমে জ্বালানি। এটা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। কীভাবে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় সুইডেন সহায়তা করতে পারে সে ব্যাপারে আলাপ হয়েছে।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
শহিদুল হক বলেন, তৃতীয় যে বিষয়টা আসছে সেটা বাণিজ্য। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উনি (স্তেফান) মনে করেন যে, এটা অনেক বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ আছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বাংলাদেশ ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সুইডেনের সুপরিচিত রিটেইল চেইন এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কেনে। দেশটির বাজারে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সুইডেন থেকে গাড়িসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে প্রথম সমর্থন দেওয়া ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সুইডেন। দেশ স্বাধীনের দুই মাসের মধ্যেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় দেশটি। এবছর ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫ বছর পূর্তির উৎসব হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী সুইডেনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন যে, সুইডেন ইউরোপের প্রথমদিকের দেশ যারা ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সব সময় সুইডেন বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে।”
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পোশাক শিল্প খাতের উন্নয়ন, বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ নানা বিষয় প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন।
দুই নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশ যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যৌথ ঘোষণার মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে কীভাবে নতুন নতুন দিকে যাবে তা বলা হয়েছে। যৌথ ঘোষণায় সন্ত্রাস মোকাবেলায় দুই দেশ একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়েছে।
শহীদুল হক জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ সুইডেন। তারা উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে টিম করে ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় এবং এজন্য বাংলাদেশকে তারা বেছে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যস্ততম কর্সূচির দিন বৃহস্পতিবার সকালেই সুইডেনের পার্লামেন্ট পরিদর্শন করেন। এসময় সুইডেনের স্পিকার তোবিয়াস বিলস্ট্রম তাকে পার্লামেন্ট ঘুরিয়ে দেখান।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, সুইডিশ পার্লামেন্টের অনন্য বিষয় হল- পজিশন বা অপজিশনের জন্য পৃথক বসার জায়গা নেই। এখানে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিদের জন্য বসার জায়গা আলাদা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের ভারপ্রাপ্ত স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
পার্লামেন্ট পরিদর্শনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সুইডেনের রাজপ্রাসাদে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে রাজা কার্ল ষষ্ঠদশ গুস্তাভ তাকে স্বাগত জানান।
সুইডিশ রাজার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বৈঠক হয়।পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সুইডিশ রাজা বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশ যে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে, নারীর
ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে, শিশু মৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে রোল মডেল হয়েছে এই বিষয়গুলো দুইজন আলাপ করেছেন।
একইসাথে সুইডেন বাংলাদেশে শুধু বিনিয়োগ নয়, উন্নয়নেও সহযোগিতা কাজ করবে বলে তারা একমত প্রকাশ করেছেন।
রাজার সঙ্গে বৈঠকের পর সুইডেন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠক হয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লোফভেনের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসাবেলা লোভিন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
শহীদুল হক বলেন, সুইডেন যে ছোট নগর/স্মার্ট নগরের ধারণা উন্মোচন করেছে-এ বিষয়ে এরা বিভিন্ন
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ছোট নগর/স্মার্ট নগর উন্নয়নে
সুইডেন অবদান রাখতে পারে বলে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় উঠে এসেছে।
বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেলে দেখা করতে আসেন সুইডেনের বিচার ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মর্গান জোহানসন।
সুইডেনের পার্লামেন্ট ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইডেনের পার্লামেন্ট ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্লোবাল ডিল’
সব বৈঠকেই ‘গ্লোবাল ডিলের’ বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বলে জানান শহীদুল হক।
গ্লোবাল ডিল কী তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে জাতিসংঘে একটা নতুন আইডিয়া দিলেন যে, প্রত্যেকটা দেশের মধ্যে শিল্পায়নের সম্পর্ক (ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেসনশিপ) উন্নত করতে হবে।
“উনি নিউ ইয়র্কে বলেছিলেন, বর্তমানের যে শিল্পায়নের সম্পর্ক তা অনেক পুরনো কনসেপ্ট। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিয়ে তৈরি করেছিল। কিন্তু এখন বিশ্বে পরিবর্তন হয়েছে। শিল্পায়নের ধরন
ও চরিত্র পাল্টে গেছে। সুতরাং এখন নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন তৈরি করতে হবে। যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে শ্রমিকের অধিকার।”
স্তেফান লোফভেন শ্রমিক নেতা থেকে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
সুইডেন সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। সফর শেষে শুক্রবার ঢাকার উদ্দেশ্যে স্টকহোম ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডন হয়ে শনিবার তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সন্ধ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সংবর্ধনায় যোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
শুক্রবার কয়েকটি সুইডিশ কোম্পানির প্রধান নির্বাহীও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ-সুইডেন বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের সভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2sx5CaX
June 16, 2017 at 07:34PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.