লন্ডন, ১৩ জুন- আপনি তাকে যত বেশি অপছন্দ করবেন, তিনি তত ভালো করবেন। শচীন পরবর্তী টিম ইন্ডিয়ার হার্টথ্রব বিরাট কোহলিকে নিয়ে এটা এক নিষ্ঠুর সত্য। তিনি ব্যাট হাতে জবাব দিয়ে দেবেন। এতো দৃঢ়তা নিয়ে ব্যাট হাতে ২২ গজে শাসন করা খেলোয়াড় শচীন ছাড়া ভারতে আর কেইবা এসেছেন! তবে ওই যে ভালো খেলোয়াড়ের সমালোচনা আর সমালোচকও বেশি। যারা ওৎ পেতে আছেন কোহলির ভুল ধরার। সুযোগ পেলেই ছুরি বসাবেন আর দলের অধিনায়কত্বের মসনদ নিয়ে টান দেবেন। শচীন গ্রেট প্লেয়ার। লারাকে যখন ক্রিকেটের বরপুত্র বলা হয়, শচীন সেখানে ঈশ্বরপুত্র। শুধু ম্যাচের পর ম্যাচ সেঞ্চুরি হাঁকালেই গ্রেট হওয়া যায় না। মাঠে নম্রতা ভদ্রতা, বিপরীত দলকে সম্মান প্রদর্শনও গ্রেটদের বৈশিষ্ট্যে থাকে। যেটা কোহলির মধ্যে কিছুটা কমই দেখতে পান ভারতের সাবেকরা। কোহলির আচরণগত এই ত্রুটি নিয়ে কড়া সমালোচনাই করেছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘদিনের অধিনায়ক আজহারউদ্দিন। ৯২ থেকে ৯৯ বিশ্বকাপে ভারত বাহিনীকে আগলে রাখা আজহার কোহলির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আগ্রাসন ভালো। আমি চাই ক্রিকেটাররা তাদের খেলায় আগ্রাসী হোক। তবে ক্যাপ্টেন হিসেবে কোহলিকে আগ্রাসন একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তা হলে একজন গ্রেট প্লেয়ারের মতো গ্রেট ক্যাপ্টেন হয়ে উঠবেন কোহলি। তবে, গ্রেট ক্যাপ্টেন হয়ে ওঠা নয়, ২০১৭ সালের আষাঢ় মাসে অবস্থাটা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে অধিনায়কত্ব ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে জয় তোলা ছাড়া গতি নেই তার। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এখনও কোহলির নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছে না। বিশেষ করে বড় একটি অংশ যারা মনে করেন, মহেন্দ্র সিং ধোনি এখনও অধিনায়ক থাকার যোগ্য। এছাড়াও টিম সিলেকশন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই কোহলিকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়াটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের অনেকেই। এরই মধ্যে কোচ অনিল কুম্বলেকে নিয়ে বিতর্কের মাঝে পড়েছেন কোহলি। বোর্ডের কর্মকর্তাদের একটি অংশ আছে, যারা ক্রমাগত প্রশ্ন তুলে যাচ্ছে অধিনায়ককে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কেন? কোচকেই স্বাধীনতা দেওয়া হোক টিম চালানোর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শুরুর আগ থেকেই চাপে ছিলেন কোহলি। দেশ থেকে বের হওয়ার আগে গা বাচানো কথাই বলে এসেছিলেন সাংবাদিকদের। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা গিয়েছিল কথায়, প্রতিদিন একটি দল ম্যাচ জেতে না। এই সহজ ব্যাপারটি দর্শকরা সবসময় বুঝতে চান না, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা অবশ্যই ভালো কিছু করার প্রত্যয় নিয়েই যাচ্ছি। অন্য কোনো দল যদি আমাদের এখানে এসে খারাপ খেলে, তবে সেটার খুব বড় প্রভাব তাদের ওপর পড়ে না। কিন্তু উপমহাদেশে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে সব খেলোয়াড়ের ঘাড়েই সবসময় একটা অদৃশ্য ছুরি ধরা থাকে। যদি আমরা দেশের বাইরে ভালো খেলতে না পারি, তখন সেই ছুরির ধার অনুভূত হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শুরুটা ভালো হলেও পরের ম্যাচেই সব হিসেব উল্টে দেয় শ্রীলংকা। এই টুর্নামেন্টে দুর্বল শ্রীলংকা যেনো হেসে খেলেই কিক আউট করে ধাওয়ান আর যাদবদের। তখন ছুরির ধার কিছুটা অনুভব করেন কোহলি। তাই ওভালে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয় না পেলে যে কি হতো! তা ভারতীয় সমালোচক আর ভক্তরা অনুমান করতে পারেন মাত্র। এ যাত্রায় মসনদ ধরে রাখলেন কোহলি। তবে সেমিফাইনালে সামনে যখন বাংলাদেশ, পরীক্ষাটা অনেক কঠিন কোহলিদের জন্য। এ ধরনের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের মূল আসরে যে টাইগাররা ভারতের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচের মতো ঢিমেতালে থাকেন না তা ক্রিকেট বোদ্ধাদের জানা। বরং সিমার রুবেল হোসেনের মতোই পুরো মাশরাফি বাহিনীর মনোভাব থাকে যেন, ধরে দিবানে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের গ্রাউন্ড বার্মিংহামকে নিজেদের ফেভারিট বলে জানিয়েছেন বিরাট কোহলি। সেখানে ভারতীয় দর্শকদের বাড়তি প্রত্যাশার চাপ যে থাকবে সেটা বলাই যায়। আর বাংলাদেশি দর্শকদের তুলনায় ভারতীয় দর্শকরা যে মাঠে আধিপত্য প্রতিষ্ঠাতা করতে চাইবে, তা ক্রিকেটের ইতিহাসে অজানা নয়। যা পরবর্তীতে টিম ইন্ডিয়ার জন্যে হয়ে ওঠে বাড়তি মানসিক চাপ। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলের সেনাপতি বিরাট কোহলি। বলিউডপাড়ার নায়িকার সঙ্গে প্রেম আর খুনসুটি থাকলেও এটা তিনি জানেন, খেলার মাঠ সিনেমার পর্দা নয়। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে হারলে, নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় তৈরি হবে, হারাতেও হতে পারে অধিনায়কত্ব।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2snAf3f
June 13, 2017 at 08:08PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top