সুরমা টাইমস ডেস্ক: আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে বরষা এলো বাংলাদেশে। বাংলা ষড়ঋতুর দ্বিতীয়টি বর্ষা। অপরূপ রূপবতী মেঘবতীকে সঙ্গে করে আসা বর্ষার সেই প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার।
আষাঢ়-শ্রাবণ এ দু’মাস বর্ষাকাল। ইতিমধ্যে গত কয়েকদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঘনিয়ে আসা মেঘপুঞ্জ আর বৃষ্টির বিড়ম্বনা বর্ষার আগমন বার্তা অবশ্য দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে। রিমঝিম বর্ষায় দীঘল কর্মহীন দিবস-রজনীতে উদাস মনের তোলপাড়ে ঘরে বসে গ্রামীণ নারীর কখনও কাঁথা সেলাই, কিংবা তরুণ মনে তপ্ত দীর্ঘশ্বাসে দু’জনাকে মুখোমুখি করে এই বর্ষা।
আষাঢ়ের প্রথম দিন আকাশের চিরচেনা সেই ঝরঝর শব্দে রিনিঝিনি বর্ষার আগমন ঘটবে কিনা তা বলা যায় না। কিন্তু বর্ষণ হোক বা নাই হোক, আজ পহেলা আষাঢ়। যেমন বলেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আবেগময় গানে- ‘বাদল দিনের প্রথম কদমফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’ আর পঞ্জিকার অনুশাসন অনুযায়ী অন্তত নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আজ আষাঢ়স্য প্রথম দিবস।
আবহমান বাংলার চিরায়ত বর্ষার রূপ-রস এবং সৌন্দর্য ও প্রকৃতি বিচারে আরও বলা যায়, তাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরা নববর্ষার সিঞ্চনে সিক্ত হওয়ার দিন এসেছে। বাঙালির প্রেমকাতর হৃদয় নব-বরিষার ছোঁয়ায় সিক্ত হওয়ার পাশাপাশি হবে আরও সমৃদ্ধ। বৃষ্টির শব্দে মহাকবি কালিদাসের যক্ষ্মের মতোই বাঙালির হৃদয় এক অজানা বিরহে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। আর তাই বর্ষা হয়ে উঠেছে ঋতুর রানী।
এই বর্ষার আগমনে প্রেমিক কবিরাও আবহমানকাল ধরেই উচ্ছলিত-উদ্বেলিত। বাঙালি অনেক বিখ্যাত কবির প্রিয় ঋতু বর্ষা। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি।’ অন্যদিকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন ধ্রুপদী সেই পঙ্ক্তি- ‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/উথলিল নদ-নদী ধরণীর উপর।’ জাতীয় কবি নজরুল লিখেছেন, ”গগনে সঘনও চমকিছে দামীনি, মেঘ ঘন রসে রিমিঝিমি বরষে, একেলা ভূবনে বসি বাতায়নে, পথ চাহি বিরহীনি আমি।”
বাঙালির অতি প্রিয় এই ঋতুর আগমনে পুরো প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। গাছপালা, তরুলতা সবকিছুই যেন গ্রীষ্মের দহন থেকে পরিতৃপ্তি পেতে স্নান করে ওঠে। পেখম মেলে নৃত্য করে ময়ূর।
আষাঢ় যেন প্রকৃতির এক আশীর্বাদ। কবিগুরুর কাব্যভাণ্ডারের বহু ছত্রে কেবল বর্ষা আবাহনের পঙ্ক্তি : ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে, ময়ূরের মতো নাচেরে, আকুল পরান আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে।’
কিংবা ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে/তিল ঠাঁই আর নাহিরে/ওগো আজ তোরা/যাসনে ঘরের বাহিরে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, গেল রে দিন বয়ে/বাঁধনহারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে।’
এদিকে বাস্তবে আষাঢ় নিয়ে তপস্যা আর বিরহ যা-ই থাকুক, বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা উৎবের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। বর্ষাপ্রেমীদের আজ মনেপ্রাণে বেজে উঠবে সেই সুর- ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে।’
বর্ষা বন্দনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আজ অনুষ্ঠিত হবে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি আর বর্ষা কথনের নানা অনুষ্ঠান।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2rzaB6X
June 15, 2017 at 05:09PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন