সুরমা টাইমস ডেস্ক:
সাগরে নিম্নচাপের কারণে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রাঙামাটিতে ৪৭, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১৯, চন্দনাইশে ৪, বান্দরবানে ৯ জন রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় আরো শ’খানেক মানুষ। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় পাহাড় ধসে এ ঘটনা ঘটে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাহাড় ধসে সেনা কর্মকর্তাসহ ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাঙ্গামাটি:
প্রবল বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে ৪৭ জন মৃত্যুর হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের মরদেহ স্থানীয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
এদের মধ্যে আট জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস।
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা জানান, পাহাড় ধসের পর রাঙ্গাপানি, মনগর এলাকা, বেদবেতী ও রির্জাভ বাজার এলাকায় অন্তত ১৩ জন মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়া মং মারমা জানান, পাহাড় ধসে কারিগরপাড়া এলাকায় অনুচিং মারমা ও নিকি মারমার মৃত্যু হয়েছে।
বান্দরবান: প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে বান্দরবান সদরে অন্তত নয় জনের প্রাণহানি হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনের নামা জানা গেছে। তারা হলেন-কলেজ ছাত্র রেবি ত্রিপুরা (১৮), সেতু বড়ুয়া (১০), হৃদয় বড়ুয়া (৭), লতা বড়ুয়া (৩), মোকাংয়ো খিয়াং (৫৫), ক্যসা খিয়াং (৭) ও মেম্রাউ খেয়াং (১৩)।
সদর থানা ওসি রফিক উল্লাহ জানান, রোববার রাত থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে মাটি নরম হওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের ওপর মাটি ধসে পড়ে। এতে মারা যায় শহরের কালাঘাটা এলাকার কলেজ ছাত্র রেবি ত্রিপুরা। লেমুঝিরি আগা পাড়ায় একই পরিবারের তিন ভাইবোন পাহাড় ধসে মারা গেছে। তারা হলো- সেতু বড়ুয়া, হৃদয় বড়ুয়া ও লতা বড়ুয়া। জাইল্ল্যা পাড়ার নিখোঁজ রয়েছে কামরুন নাহার (৪০) ও তার মেয়ে সুফিয়া আক্তার (১৩)। এদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। এছাড়া সদর উপজেলা কুহালং ইউনিয়নের কম্বোনিয়া গ্রামে পাহাড় ধসে মারা যায়, মোকাংয়ো খিয়াং, ক্যসা খিয়াং ও মেম্রাউ খেয়াং।
পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম বেবী জানান, টানা বৃষ্টির কারণে হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিছু সরে গেছে, কিছু রয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্যায় যারা প্লাবিত হয়েছে তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে মোট ২৩ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়াতেই ১৯ জন এবং চন্দনাইশে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
প্রবল বর্ষণ ও শংক নদের ঢলে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় পাহাড় ধসে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, কেউচা কেয়াং (১০), মেমাউ কেয়াং (১৩) , গৃহবধূ মোকাইং কেয়াং (৫০) ও শিশু মাহিয়া।
চার জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম জানান, ছনবুনিয়া উপজাতিপাড়ায় একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুই শিশু তিন জন মারা যায়। এছাড়া আসগর আলীর কাঁচা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে তার শিশু কন্যা মাহিয়া মারা যায়।
রাঙ্গুনিয়া : পাহাড় ধসে রাঙ্গুনিয়ায় বিকেল পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু ঘটনা ঘটে।
অবশ্য এর আগে সকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, সোমবার রাতে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে অন্তত চারজন মৃত্যৃ নিশ্চিত করে। দুর্গম এলাকায় হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যহত হচ্ছে। উদ্ধার তৎপরতা শেষ হলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানেও পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, সুমন বড়ুয়ার সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)। আরেকটি পাহাড় ধসের ঘটনায় কালাঘাটা এলাকায় রেভা ত্রিপুরা (১৯) নামে বান্দরবান সরকারী কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও লেমুঝিরি আগাপাড়ায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন কামরুন নাহার (২৭) ও সুকিয়া আক্তার (৮)।
বান্দরবানের কালাঘাটাপাড়া ও লেমুঝিড়ি আগাপাড়ার বাসিন্দারা জানান, টানা বৃষ্টিতে কালাঘাটাপাড়ায় পাহাড়ের নিচের একটি বাড়ি ধসে পড়লে একই পরিবারের ৩ শিশু মারা যায়। লেমুঝিড়িতে বাড়ি ধসে নিখোঁজ হন মা-মেয়ে।
অবিরাম বৃষ্টিতে অচল হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার জীবনযাত্রা। পানিবন্দি হয়ে আটকা পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। দেশের ৪টি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রাখতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2rnElbv
June 13, 2017 at 10:03PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন