লন্ডন, ১১ জুন- আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। রোববার গ্রুপ বির অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের জয়টা ৮ উইকেটের। ওভালে দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাতে চোকার প্রোটিয়াদের দেয়া ১৯২ রানের মামুলি লক্ষ্য ২ উইকেট হারিয়ে ৩৮ ওভারেই পেরিয়ে গেছে ভারত। শিখর ৭৮ রানে সাজঘরে ফিরলেও কোহলি অপরাজিত থেকেছেন ৭৬ রানে। এই জয়ে ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ বি থেকে প্রথম দল হিসেবে সেমিতে নাম লিখিয়েছে ভারত। আর টানা ২ হারে ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আসরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শিখর তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৯তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি। চলতি টুর্নামেন্টে এটি তার দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। ৮৩ বলে ৭৮ রান করে ইমরান তাহিরের শিকার হয়েছেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ১২টা চার ও একটি ছক্কা। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৮ রানের ইনিংস খেলা শিখর সেঞ্চুরি করেছেন আগের ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। শিখরের মতো কোহলিও আসরে তার দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেছেন। ১০১ বলে ৭৬ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। তার সঙ্গী যুবরাজ অপরাজিত থেকেছেন ২৩ রানে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওভালে ভারতের শুরুটা ছিল সাবধানী। প্রথম ২ ওভারে তাদের স্কোরবোর্ডে ওঠে ২ রান। তৃতীয় ওভারে আসে প্রথম বাউন্ডারি। কাগিসো রাবাদার ওভারের শেষ দুই বলে যথাক্রমে চার ও ছক্কা হাঁকান ওপেনার রোহিত শর্মা। ৫ ওভার শেষে রান দাঁড়ায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৩। তবে মর্নে মরকেল ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন রোহিতকে। উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক ক্যাচে পরিণত করেছেন তাকে। রোহিত ২০ বলে ১২ রান দিয়ে গেছেন দলের স্কোরে। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকানদের আশার পালে হাওয়া লেগেছিল কিছুটা। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ১২৮ রানের জুটি গড়ে প্রোটিয়াদের ছিটকে দেন শিখর-কোহলি। শেষ পর্যন্ত ৩৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান তুলে জয় নিশ্চিত করেছে ভারত। এর আগে ওভালে বাঁচা-মরার এ ম্যাচে চাপের মুখে ভেঙে পড়ার পুরনো অভ্যাসটা আবারো যেন ফিরে আসে প্রোটিয়াদের! শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার রানের গতিতে লাগাম দিয়েছিলেন ভারতীয় পেসাররা। এরপর স্পিনারদের ব্রেক-থ্রু আর দুটি দুর্দান্ত রান আউট। তারপর আক্রমণে ফিরে এসে তোপ দাগিয়েছেন ভুবনেশ্বর-বুমরাহ-হার্দিক। গুঁড়িয়ে দিয়েছেন প্রোটিয়াদের। ফলে ৭৫ রানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চোকার দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়েছে মাত্র ১৯১ রানে। ৪৪.৩ ওভারে। ইনিংসের শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক ভারতীয় বোলারদের সমীহ করেছেন। প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৩৫ রান তোলেন তারা। প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর কিছুটা খোলস ছেড়ে বের হন আমলা-কক। ১৫তম ওভারের প্রথম ও শেষ বলে যথাক্রমে ছক্কা ও চার হাঁকান আমলা। ১৬ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার কাছে জীবন পাওয়া আমলা ফিরেছেন ৩৫ রান করে। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এমএস ধোনিকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। আমলার বিদায়ে ভাঙে প্রোটিয়াদের ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। তবে আরেক ওপেনার ডি কক ঠিকই হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ৭২ বলে ৫৩ রান করে ডি কক হয়েছেন ভারতের আরেক তারকা স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার শিকার। ককের ইনিংসে ছিল ৪টি চারের মার। ডি ককের বিদায়ের পর তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও তার আগ পর্যন্ত ভালো একটি সংগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল বিশ্বের এক নম্বর দল। প্রোটিয়া অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স ও বিধ্বংসী ডেভিড মিলার ফিরেছেন দ্রুত। দুজনে রান আউট হয়েছে ৫ বলের ব্যবধানে। টানা তৃতীয় ম্যাচে ব্যর্থ ডি ভিলিয়ার্স করেছেন ১৬ রান। মিলারের ব্যাট থেকে এসেছে ১ রান। ২৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হার্দিকের থ্রোতে রান আউট হয় যান ডি ভিলিয়ার্স। তিনি ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই ধোনি স্টাম্প ভেঙে দেন। পরের ওভারের প্রথম বলেই ফিরে গেছেন মিলার। কৌতুককর রান আউটের শিকার তিনি। দুই ব্যাটসম্যান পৌঁছে গিয়েছিলেন একই প্রান্তে! পরের গল্পটা ভারতের পেসারদের। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়েছেন ফ্যাফ ডু প্লেসি। ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেছেন তিনি। এরপর ক্রিস মরিস (৪) ও আন্দিল ফেলুকাইয়োকে (৪) সাজঘরে ফিরিয়েছেন জসপ্রিত বুমরাহ। পরপর দুই বলে কাগিসো রাবাদা (৫) ও মর্নে মরকেলকে (০) আউট করে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। তবে কাঙ্ক্ষিত কীর্তিটি গড়তে পারেননি। সর্বশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারত অধিনায়ক কোহলির থ্রোতে ইনিংসের তৃতীয় রান আউটের শিকার হয়েছেন ইমরান তাহির। ৩৩ বল বাকি থাকতেই শেষ দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। অপর প্রান্তে জেপি ডুমিনি তখনো ২০ রানে অপরাজিত। ভারতের পক্ষে ভুবনেশ্বর ২৩ রানে ও বুমরাহ ২৮ রানে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন অশ্বিন, জাদেজা ও হার্দিক। সংক্ষিপ্ত স্কোর: দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস: ৪৪.৩ ওভারে ১৯১ (ডি কক ৫৩, আমলা ৩৫, ডু প্লেসি ৩৬, ডি ভিলিয়ার্স ১৬, মিলার ১, ডুমিনি ২০, মরিস ৪, ফেলুকাইয়ো ৪, রাবাদা ৫, মরকেল ০, তাহির ১; ভুবনেশ্বর ২/২৩, বুমরাহ ২/২৮, অশ্বিন ১/৪৩, হার্দিক ১/৫২, জাদেজা ১/৩৯) ভারতের ইনিংস: ৩৮ ওভারে ১৯৩/২ (রোহিত ১২, শিখর ৭৮, কোহলি ৭৬*, যুবরাজ ২৩*; রাবাদা ০/৩৪, মরকেল /৩৮, ফেলুকাইয়ো ০/২৫, মরিস ০/৪০, তাহির ১/৩৭, ডুমিনি ০/১৭)
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2rfFaTJ
June 12, 2017 at 05:12AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন