আগরতলা, ০২ জুন- এক সময় বাংলাদেশের আশুগঞ্জ পোর্ট ব্যবহার করতে পেরেছি বলেই রাজ্যে ৭শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। প্ল্যান্ট তৈরির সময় ২৬০ টন ওজনের যেসব যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিলো, সেগুলো ভারতের মধ্যেকার কোনো সড়ক দিয়ে ত্রিপুরায় আনা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশ সহযোগিতা করেছে সে সময়। তাদেরও পাওয়ার শর্টেজ রয়েছে। আমাদের যে ১৯৬ মেগাওয়াটের বার্জ রয়েছে, বাংলাদেশ চাইলে তার পুরোটাই আমরা দিতে পারি। বৃহস্পতিবার (০১ জুন) রাতে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ভানুলাল সাহা তার সরকারি বাসভবনে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ত্রিপুরা এরই মধ্যে ১শ, ৬০ এবং পরবর্তীতে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দিতে পেরেছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে সব সময় সুসম্পর্ক চান উল্লেখ করে ভানুলাল বলেন, দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলেই ভালো। সেটি পাকিস্তান ও চীন সবার সঙ্গেই। আর ত্রিপুরা তো বাংলাদেশ বেষ্টিত একটি রাজ্য। কাজেই যোগাযোগসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের প্যাসেজটাই আমাদের দরকার, যেটি ছিলো এক সময়। রেলওয়ে নেটওয়ার্কও ছিলো এক সময় শক্তিশালী। এখন আমাদের দরকার চট্টগ্রাম পোর্ট ব্যবহার করা। সাতচল্লিশের দেশভাগের দগ্ধ সময়ে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এই মন্ত্রী আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, রাষ্ট্র তার বেড়া দিয়ে সীমানা আটকে রাখলেও তো মনটাকে আটকাতে পারে না। এখানকার অধিকাংশ মানুষের অরিজিন বাংলাদেশ। ত্রিপুরার আদিবাসী সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ উল্লেখ করে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এ মন্ত্রী বলেন, এখানকার রিয়াং সম্প্রদায়ের হজাগিরি নৃত্য খুব বিখ্যাত। তারা অনেক পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠী। যদিও ১৯টি আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যায় তাদের অবস্থান দ্বিতীয়। তিনি বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় সরকার প্রচুর অর্থও ব্যয় করে। প্রতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে ১শ অনুষ্ঠান হয়। এর জন্য বরাদ্দ আড়াই কোটি টাকা। সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত মিলে এখানে লোক সংস্কৃতি উৎসব করেছি গত বছর। ১ হাজার ১৭৮টি গ্রাম-পঞ্চায়েত মিলে সাড়ে ২৬ হাজার শিল্পী এতে অংশ নেন। ১ হাজার ৩৪টি অনুষ্ঠান হয়। দুই বছরে একবার সাহিত্য উৎসবও হয়। শিল্প-সংস্কৃতিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ত্রিপুরার রাজধানী শহর আগরতলায় বসবাসকারী পাঁচ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার শিল্পী রয়েছেন এবং তারা ৫ থেকে ৮০ বছর বয়সী বলেও জানান ভানুলাল সাহা। দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ফেনী নদীতে একটি ব্রিজ হচ্ছে। সাবরুম পর্যন্ত রেল যাচ্ছে ব্রডগেজ লাইন। লাইনটি চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে পারে। ত্রিপুরা হতে পারে করিডোর অব সাউথ-ইস্ট এশিয়া। ইন্ডিয়ান অয়েল ২০৩০ সালে চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে তেল আনার চেষ্টা করছে এ কানেকটিভিটির মাধ্যমে। গৌহাটি থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ফেনী ব্রিজে এসে বিভক্ত হয়ে গেছে। সরকারের প্ল্যান, চট্টগ্রাম পোর্ট ব্যবহার করে ত্রিপুরায় তেল আনা। আর আখাউড়ায় রেল হয়েই যাচ্ছে জানিয়ে ভানুলাল সাহা বলেন, এশিয়ান হাইওয়ে হলে আগরতলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীন, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশের মানুষ ত্রিপুরায় আসবেন। এতে ত্রিপুরার মানুষ তো বিভিন্নভাবে লাভবান হবেনই। ত্রিপুরার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প নিয়ে তিনি বলেন, ভারতের বহু জায়গায় সবুজ নেই। শুধু সবুজ দেখতেই মানুষ ত্রিপুরায় আসতে পারেন। আর এখানে পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধনও দেখার মতো। তৃষ্ণা অভয়ারণ্য গেলে বাইসন দেখা যায়। পাশেই হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক। আদিবাসী কালচার দেখতেও ত্রিপুরা আসতে পারেন। ঊনকোটি, ডম্বুর নারিকেল কুঞ্জ ইত্যাদি তো রয়েছেই। ত্রিপুরা দূষণমুক্ত রাজ্য ও নিরাপদ শহর উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখানে গাড়ির দূষণ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোনো দূষণ নেই।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2skFmhn
June 02, 2017 at 04:39PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top