এসএসসি পাস করেছি মাত্র। আমার ফিগার, দৈহিক গঠন, চেহারা ছিল আকর্ষণীয়। তাই স্কুলে পড়ার সময়ই বন্ধু-বান্ধবীরা মডেলিং করার কথা বলতো। কেউ কেউ ডাকতো নায়িকা বলে। এসব শুনে শুনে আমারও মনে একটু একটু করে স্বপ্ন জাগে। মডেল হবো। নায়িকা হবো। কত ভক্ত আমার অটোগ্রাফ নিয়ে লাইন ধরবে। ইস্ আমি দেশজুড়ে পরিচিত হবো। ভাবতে ভাবতে টাকা জমিয়ে একজন ফটোগ্রাফারের কাছে ফটোসেশন করি। এরপর তার অনুপ্রেরণায় বেশকিছু ম্যাগাজিনে আমার ছবি প্রকাশ হয়। কিন্তু বাসায় বাধা দিতে শুরু করেন মা। এক পর্যায়ে বাবাও রেগে যান। আমার বাবা একজন ব্যাংকার। পরিবারের একমাত্র মেয়ে আমি। কথাগুলো বলছিলেন ছদ্ম নামধারী মায়া। আসল নাম বলতে রাজি নন তিনি। ঢাকাই চলচ্চিত্রে নায়িকা হতে এসেছিলেন। প্রথমে মডেল এরপর নায়িকা হওয়ার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। মিডিয়াতে তার যাত্রা শুরু ২০০০ সালে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে মডেল হওয়ার সুবাধে বেশকিছু বন্ধুও তৈরি হয় তার। তিনি বলেন, তারা আমাকে একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকের কাছে যেতে বলেন। সেই প্রযোজক হোটেল সোনারগাঁও ছাড়া দেখা করবেন না বলে জানান। সেখানে যেতে মনে ভয় কাজ করে। তবুও যাই। বাসা থেকে কাউকে না বলে আমি ওই প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে দেখার পর পছন্দ করে সাইনিং মানি হিসেবে বিশ হাজার টাকা দেন এবং পরের সপ্তাহে লোকেশন দেখার জন্য কক্সবাজারে যেতে বলেন। আমি তখন এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষাও দিয়েছি। জীবনে কেউ প্রথম এভাবে এত টাকা আমার হাতে দিলো। বুঝছিলাম না কি করব। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন, এরপর মাকে এক বান্ধবীর বাসায় যাবো বলে ওই প্রযোজকের সঙ্গে আমার এক বান্ধবীসহ বেরিয়ে যাই। বান্ধবী সঙ্গে যাবে বলে মনে তেমন ভয় কাজ করেনি। তবে কক্সবাজারে যাওয়ার পর ওই বান্ধবীকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলেন প্রযোজকের এক বন্ধু। সেই রাতের কথা আমি ভুলবো না। আমাকে খাবারের মধ্যে কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। আমি বুঝতে পারিনি সেদিন। জোরপূর্বক আমার সঙ্গে কি কি করা হয়েছে তা আর মুখে বলতে চাই না। তারপরও ছবিতে কাজ করতে চেয়েছিলেন। মনে জেদ জন্ম নিয়েছিল। তবে শেষমেশ জানতে পারেন সেই প্রযোজক দেশের বাইরে চলে গেছেন। আরো খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, উনি মূলত কোনো ছবির প্রযোজক না। এতকিছুর পরও নায়িকা হওয়ার নেশাটা তার মধ্যে ঠিকই ছিল। মায়া বলেন, এতকিছুর পর আরো একবার এক ছবির প্রযোজককে বিশ্বাস করেছিলাম। তিনিও ছবিতে নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে সেই ছবিতে আমাকে ছোট্ট একটা চরিত্রে কাজ করতে বলেন। আমি কাজটা দুদিন করে চলে এসেছিলাম। কারণ বুঝতে পারছিলাম যে, আমাকে ঠকানো হচ্ছে। নায়িকা হওয়ার জন্য কতকিছুই না করেছি। তারপরও ছবির নায়িকা আর আমার হওয়া হয়নি। এখন আমি বিবাহিতা। আমার ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। আমি তাদের নিয়ে সুখেই আছি। আমার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। মডেল বা সিনেমার নায়িকা যারা হতে চান তাদের জন্য মায়ার পরামর্শ- এখানে অনেক ধরনের মানুষ আছে। না জেনে না বুঝে পরিবারকে না জানিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। যেমন এখন আমার কাছের কোনো বন্ধু-বান্ধব নেই। আমার সঙ্গে আমার পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। নায়িকা হতে গিয়ে আজ সব থেকেও আমি একাকী। মায়ার মতো গল্প না হলেও ঠিক নায়িকা হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা লোপা। তিনি বলেন, মূলত একটি নাচের স্কুলে নাচ শেখার জন্য যেতাম। স্বপন নামে একজন কোরিওগ্রাফার আমাকে মডেল বানানোর প্রস্তাব দেন। এরপর আমি টাকা জমিয়ে এক মডেল ফটোগ্রাফারের কাছে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ফটোসেশন করি। তারপরও সেই ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার আমাকে ভালো কোনো কাজে ডাকতেন না। ডিজে পার্টি, মহানগর নাট্যমঞ্চের শোতে ডাক দিতেন। সেখানে নাচের পাশাপাশি বিভিন্ন র্যাম্প শোতে কাজ করে ১২০০-১৫০০ টাকা পেতাম। একটা সময় নায়িকা হওয়ার জন্য মন টানতো। কারণ আমাদের সঙ্গে অনেক নামিদামি মডেলরাও নাচ শিখতেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে কাজও করেছেন। লোপার মনে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন। পরিবারে মাও চাইতেন মেয়ে নায়িকা হোক। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ে লোপা একদিন বনানীর এক ডিজে পার্টিতে যান। লোপা বলেন, ২০০৭ সালের কথা। তখন ফ্যাশন শোর পাশাপাশি ডিজে শো প্রচুর ছিল। আর এসব পার্টিতে যাবার জন্য বাসায় মিথ্যা কথা বলে বের হতাম। সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষরাও ডিজে অনুষ্ঠানগুলোতে আসতেন। বনানীতে সেরকম একটি অনুষ্ঠানে দেখা হলো একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে। তিনি আমাকে নায়িকা বানাবেন বলে ওয়াদা দিলেন। বাসায় যাবার জন্য বার বার অনুরোধ করলেন। এক পর্যায়ে আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু ওনার বাসায় গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নেই। তিনি একা থাকেন। তিনি বললেন, আজ এখানে থাকো। আগামীকাল ছবির প্রযোজক তোমার সঙ্গে এসে কথা বলবেন। কিন্তু আমি ভয়ে পালিয়ে এসেছি। কারণ বাসার মধ্যে মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ অস্ত্রও আমি দেখেছি। অবশ্য চলচ্চিত্রে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। ১০টির মতো ছবিতে কাজও করেছি। নাটকেও অভিনয় করেছি। তবে প্রধান চরিত্রে আমাকে কেউই নেয়নি। বারবার পরিচালক-প্রযোজকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথার বরখেলাপ করেছেন। এরমাঝে আমার চোখের সামনে অনেকে নায়িকা হয়েছেন। আমাকেও অনেক নায়ক ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমিও নিজের অজান্তে তাদের মিষ্টি কথায় গলে গেছি। কিন্তু আমি আজও চলচ্চিত্রের এক্সট্রা শিল্পী হিসেবেই পরিচিত। এখন আর তেমন এফডিসিতে যাই না। একটা বিয়েও হয়েছিল আমার। সেটাও টিকেনি। চলচ্চিত্রে থেকে অনেক কিছু হারিয়েছি। যেটুকু পেয়েছি সেটা আর বলার মতো না। তবে দোষটা আমারই। পরিবারের কথা না শুনে সেই যাত্রাবাড়ী থেকে এসে এফডিসিতে সারাদিন পড়ে থাকতাম। এখন এলাকায় ছোট্ট একটা বেকারির দোকান আছে আমার। সেখানে আমার ছেলে বসে। আমিও মাঝে মাঝে বসি। এই তো। শোবিজে মেয়েরা কাজ করা মানে তাদের সমাজে ভিন্ন চোখে দেখা হয়। তাও আবার চলচ্চিত্রের নায়িকা। টিভি বা বড়পর্দায় তারকাদের দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই নায়িকা হওয়ার বাসনা মনে জন্ম নিতে থাকে অনেকের। অনেক বন্ধু, বান্ধবীরাও বলতে শুরু করে তোর চেহারা বলিউডের অমুক নায়িকার মতো। আত্মীয়স্বজনরাও বলা শুরু করে শোবিজে বুঝে না বুঝে অনেকে পা দেন। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে কাজ করে কেউ নাম কামান আর কেউ ভবিষ্যৎ জীবনটা অন্ধকারে ঠেলে দেন। সূত্র: মানবজমিন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tC1yEB
June 24, 2017 at 03:16AM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
তুর্কি সিরিজ আরতুগ্রুলে মজেছেন ভারতের মুসলিমরা
07 Oct 20200টিমুসলিম বিশ্বে দারুণভাবে সাড়া ফেলে তুরস্কের টিভি সিরিজ দিরিলিস: আরতুগ্রুল। এখন কাশ্মীরসহ ভারতের মুসলি...আরও পড়ুন »
আবারো ভাইরাল শাহরুখকন্যার ছবি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- উষ্ণতায় ভরা চোখ ঝলসানো ছবি শেয়ার করে ফের ভাইরাল হলেন বলিউড বাদশাহর কন্যা সুহানা ...আরও পড়ুন »
এবার সুশান্ত-ভক্তের আত্মহত্যার হুমকি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় চারমাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তা...আরও পড়ুন »
প্রায় একমাস পর জামিন পেলেন রিয়া চক্রবর্তী
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- ৯ দিন জেলে কাটিয়ে অবশেষে জামিন পেলেন সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্...আরও পড়ুন »
কাজলের বাগদান সম্পন্ন, বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ৩০ অক্টোবর
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল আগারওয়ালের বিয়ের গুঞ্জন শোনা ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.