মুম্বাই, ২৩ জুন- বলিউডের তিন খানকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। পর্দার বাইরে কেমন তাঁদের পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবন? কীভাবে ঈদ উদ্যাপন করেন বিনোদন দুনিয়ার এই তিন তারকাশাহরুখ খান, সালমান খান আর আমির খান? শাহরুখের ঈদ পরিবারের সঙ্গে, ভক্তদের সঙ্গেও বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের কাছে ঈদ হলো বিশেষ কিছু, মিলনের উৎসব। ফলে ঈদের দিনটি কখনোই একা কাটাতে চান না এ তারকা। গত কয়েক বছরে এই তাঁর রেওয়াজ হলো, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, ঈদের দিন তিনি ফিরে আসেন তাঁর প্রিয়জনদের কাছে। গেল বছরগুলোতে অত্যন্ত আড়ম্বরের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছেন শাহরুখ। না, শুধু নিজের পরিবার, আত্মীয়পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নয়, এদিন তাঁর বাড়ি মান্নাত-এ তিনি আমন্ত্রণ জানান সংবাদমাধ্যমের লোকজনদেরও। এমনকি বাড়ির বাইরে অপেক্ষারত অনুরাগীদেরও নিরাশ করেন না। কিং খানের ঈদের দিন শুরু হয় ঈদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে। ঈদের দিন সকালবেলা তাঁর বাড়িতেই হয় ঈদের জামাত, নামাজ পড়াতে আসেন মৌলভি।এরপর মান্নাতের বাইরে অপেক্ষারত ভক্তদের ঈদ মোবারক জানান শাহরুখ। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকেন পরিবারের কেউ না কেউ। একবার স্ত্রী গৌরী খান, পুত্র আরিয়ান ও কন্যা সুহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভক্তদের জানিয়েছিলেন ঈদ শুভেচ্ছা। কালো পাঠানিতে এদিন নিজেদের সাজিয়ে তুলেছিলেন পিতা-পুত্র। আর গৌরী ও সুহানাকেও দেখা গিয়েছিল ভারতীয় পোশাকে। গত ঈদে সাদা রঙের ফুলের সমারোহে নিজের বাড়ি সাজিয়ে তুলছিলেন শাহরুখ। গেল বছরের এই ঈদটি সে সময় আরও বিশেষ হয়ে উঠেছিল খান খান্দানের কনিষ্ঠতম সদস্য আব্রামের উপস্থিতিতে। গত বছর এই দিনে তাঁর সঙ্গী ছিলেন একরত্তি আব্রাম। খুদে পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বলিউড বাদশা আসেন জনসমক্ষে। আব্রামও সবাইকে হাত নেড়ে জানায় ঈদ মোবারক। এদিন পিতা-পুত্র দুজনকেই দেখা গিয়েছিল সাদা পাঠানিতে। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেন, ছোটবেলায় ঈদের দিনে আমি কিছুতেই কুর্তা-পাজামা পরতে চাইতাম না। মা আমাকে জোর করে পরাতেন। আজ আমিও আমার ছেলেকে জোর করে পাঠানি স্যুট ও আচকান পরাই। শাহরুখের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় তাঁর কৈশোরের ঈদ সম্পর্কেও, ঈদের দিনে বাবার স্কুটিতে চেপে মসজিদে যেতাম নামাজ পড়তে। মা হায়দ্রাবাদি খাবার বানাতেন। আর বাবা বানাতেন পাঠানি খাবার। প্রতি ঈদেই মান্নাতে আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন ও ভূরিভোজ অনুষ্ঠানের। তবে কিং খানের বাড়ির ইফতার মাহফিলে যে ভূরিভোজ হয়, তার নামডাকও কম নয়। সমগ্র বলিউড এ উপলক্ষে জড়ো হয় মান্নাতে। সপরিবার অমিতাভ বচ্চন, দিলীপ কুমার-সায়রা বানু, সঞ্জয় কাপুর, অনিল কাপুর, সোনম কাপুর, হৃতিক রোশন, অর্জুন রামপাল, সঞ্জয় লীলা বানসালি, ডেভিড ধাওয়ান, মধুর ভান্ডেরকর, বিবেক ওবেরয়, লারা দত্ত-মহেশ ভূপতি, অর্জুন কাপুর, সুশান্ত সিং রাজপুত, হরমন বওয়েজা, রোহিত শেঠী, দিনো মারিয়া, বিধু বিনোদ চোপড়া, রাজকুমার হিরানি, সিদ্ধার্থ মালহোত্রাকার উপস্থিতি নেই এখানে! পার্টি শেষে শাহরুখ নিজে গাড়ি চালিয়ে গভীর রাতে পৌঁছে দিয়ে আসেন বর্ষীয়ান অভিনেতা দিলীপ কুমার ও সায়রা বানুকে। আর এই বর্ণিল আয়োজনের পুরো তদারকের দায়িত্বে থাকেন শাহরুখ-পত্নী গৌরী খান। প্রতিবছর সামাজিক মাধ্যমেও সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান শাহরুখ। যেমন গত ঈদে তাঁর টুইট ছিল, চাঁদ মোবারক, আল্লাহ যেন পৃথিবীর সব সুন্দর জিনিস সবাইকে উপহার হিসেবে দেন। চোখ থাকে সালমানের বাড়ির খাবারের দিকে ঈদের দিন বন্ধু সালমান খানের বাড়ির খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকেন শাহরুখ খান। হ্যাঁ, ঘটনা সত্য। এদিন সাধারণত বাড়ির খাবার খান না কিং খান, বরং অপেক্ষা করে থাকেন বন্ধু সালমানের বাড়ির খাবারের জন্য। কয়েক বছর আগেও দুই বন্ধু শাহরুখ আর সালমানের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ ছিল। বছর তিনেক আগে এক ঈদের দিনেই বাবা সিদ্দিকির ইফতার মাহফিলে বলিউডের বাদশা আর সুলতান একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। এরপর থেকে সাধারণত একসঙ্গে ঈদ কাটান তাঁরা। একবার ঈদের পরের দিন দুই বন্ধু সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন বান্দ্রার রাস্তায়। এবারও শাহরুখ ঈদ কাটাবেন সাল্লু মিয়ার সঙ্গে। বলিউডের রইস তারকা শাহরুখ টুইট করে বলেন, ঈদের দিন তিনি ব্যস্ত থাকবেন সালমানের সঙ্গে। ঈদের সন্ধ্যায় নিয়ম করে আতশবাজি ফোটান সালমান সালমান খানের কাছে ঈদ মানে হলো তাঁর ছবি মুক্তির দিন। বরাবরই ছবি মুক্তির দিন হিসেবে এ তারকা বেছে নেন পবিত্র এই দিনকে। দাবাং, কিক, এক থা টাইগার, বজরঙ্গি ভাইজান, সুলতানসালমানের এসব ছবি তো মুক্তি পেয়েছে ঈদের দিনে। এ বছরও ঈদের আগে মুক্তি পাবে সালমান অভিনীত সিনেমা টিউবলাইট। শাহরুখের মতো সালমানও এই বিশেষ দিনটি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে ভালোবাসেন। জানা যায়, তিনি রোজাও রাখেন। রমজান মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে একটু আগেভাগে ঘুম থেকে ওঠেন সালমান। এ সময় বান্দ্রায় তাঁর বহুতল ভবনের সামনে সাহায্যের আশায় রোজই দাঁড়িয়ে থাকে কিছু মানুষ। সালমান সাধ্যমতো সাহায্য করেন তাদের। তবে চিকিৎসার জন্য কেউ এলে সাধারণত শূন্য হাতে ফেরান না এ তারকা। তাঁর বাবা লেখক সেলিম খান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অসহায়-দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ঈদের নামাজ পড়ার মাধ্যমে শুরু হয় সালমান খানের ঈদ। তারপর পুরো সময়টা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেই কাটান। এদিন বলিউডের অনেক তারকাই নিমন্ত্রিত থাকেন সালমানের বাড়িতে। তাই এদিন সবাই অপেক্ষা করেন, সাল্লুর বাড়ির খানদানি বিরিয়ানি খাবে বলে। এটি সালমানের মায়ের নিজস্ব রেসিপি। বলিউডের প্রায় সব তারকাই কোনো না কোনো সময় এই বিরিয়ানির স্বাদ নিয়েছেন। তবে সারা বছর ডায়েটের বিধিনিষেধের ভেতরে থাকলেও ঈদের সময় খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুকেই পাত্তা দেন না সালমান, নিয়ম ভেঙে খান সবকিছুই।শির-খুরমা তাঁর ভীষণ পছন্দের। তাই মনভরে শির-খুরমা খান এদিন। পরে অবশ্য নানা রকম ব্যায়াম ও কসরতের মাধ্যমে ঝরিয়ে ফেলেন বাড়তি ক্যালরি। শাহরুখ খানের মতো সালমানও প্রতিবছর ঈদে নিয়ম করে তাঁর অনুরাগীদের সঙ্গে দেখা করেন এবং হাত নেড়ে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তাঁর বহুতল ভবনের বারান্দায় বাবা, ভাই ও বোনদের সঙ্গে নিয়ে সপরিবার এসে দাঁড়ান। নায়ক-কে একনজর দেখার আকাঙ্ক্ষায় অগণিত মানুষ সকাল থেকে ভিড় করে থাকে সালমানের বাড়ির সামনে। সারা দিনের ব্যস্ততার পর প্রতিবছর ঈদের সন্ধ্যায় নিয়ম করে আতশবাজি ফোটান সালমান। ঈদের মতোই ঘটা করে বাড়িতে পালন করেন গণপতি আর দীপাবলির উৎসব। একবার গণপতি ও ঈদ একই দিনে পড়েছিল। এদিন সালমান সকালে নামাজ পড়েন, আবার বিকেলে বাড়িতে ভজনের ব্যবস্থা করেন। তাঁর কথায়, আমি উৎসব ভালোবাসি, এ ক্ষেত্রে ধর্ম দেখি না। কৈশোরের ঈদ নিজের কৈশোরের রংবেরঙের ঈদ-স্মৃতি শোনা যায় সালমানের মুখে, বিশেষ এই দিনে আমরা পরিবারের সবাই এক হতাম। বাড়ির আঙিনায় ব্যবস্থা করা হতো খাবারদাবারের। প্রচুর খাওয়াদাওয়া হতো। আমরা ছোটরা ব্যস্ত থাকতাম ক্রিকেট, ফুটবল খেলায়। আর বড়রা নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিতেন। এদিন আমাদের বাড়িতে প্রচুর মানুষ আমন্ত্রিত থাকতেন। কেবল মুসলিম নয়, হিন্দু, কোলি, পার্সি, ক্যাথলিকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ঈদের দিনে আসতেন আমাদের বাড়িতে। মনে হতো আমরা সবাই একই পরিবারের। বাড়ির বাইরেও বহু মানুষকে খাবার দেওয়া হতো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রমজানের সময় মা একটা বাটিতে বেশ কিছু ড্রাই ফ্রুটস বাড়ির জানালায় রোদে দিতেন। রোজ পাখিরা এসে ড্রাই ফ্রুটসগুলো খেত। আর যা বেঁচে যেত আমি, আরবাজ ও সোহেল ভাগ করে খেতাম। আর একবার রোজার সময় স্কুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে যেই জলে ঝাঁপিয়েছি, অমনি আমার মুখে ঢুকে গেল জল। আমি রোজা রেখেছিলাম। তাই পেট থেকে সেই জল বের করতে মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। ঈদ নয়, ঈদির অপেক্ষায় থাকতেন আমির বলিউডের আরেক খান আমির খানের ঈদ উদ্যাপন শাহরুখ ও সালমানের চেয়ে একটু আলাদা। খুবই সাদামাটা আর অনাড়ম্বরভাবে ঈদ উদ্যাপন করেন তিনি। গেল বছর স্ত্রী কিরণ ও পুত্র আজাদ ছাড়াই ঈদ পালন করেছিলেন আমির। কিরণ ও আজাদ তখন ছিল ইউরোপে, ছুটির অবকাশে। সাধারণত আমিরের ঈদ শুরু হয় তাঁর আম্মির (মায়ের) বাড়ি দিয়ে। ছোটখাটো সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি সোজা চলে যান আম্মির বাড়িতে। এই বলিউড তারকার সঙ্গে তখন থাকেন স্ত্রী-পুত্রকিরণ রাও ও আজাদ। খুদে আজাদকেও সে সময় দেখা যায় বাবার মতো সাদা কুর্তা-পাজামাতে। আর কিরণ এদিন সাজেন ভারতীয় পোশাকে। ঈদের দিন আমিরের আম্মির বাড়িতে আসেন সব আত্মীয়েরা। এমনকি আমিরের সাবেক পত্নী রীনা পুত্র জুনেইদ ও কন্যা ইরাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয় পারিবারিক এ উদ্যাপনে। এ ছাড়া রোজার সময় ইফতার পার্টির আয়োজন করেন আমির। সেই অনুষ্ঠানে আসেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে ও বলিউড অভিনেতা ইমরান খান, তাঁর স্ত্রী অবন্তিকা, করণ জোহর, রীতেশ দেশমুখসহ অনেকে। ঈদের দিন পুরোটা সময় পরিবারের সঙ্গেই কাটান এ বলিউড সুপারস্টার। তবে গত দুবছর আমিরের ঈদ উদ্যাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল সালমান খান। কীভাবে? দঙ্গলখ্যাত এই অভিনেতা গত বছর ঈদের আগে রাতে দেখেছিলেন সালমান অভিনীত সুলতান। আর এর আগের বছর সপরিবারে ঈদের রাতে দেখেন বজরঙ্গি ভাইজান। ছবি দুটি দেখার পর আমিরের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সুলতান দেখার পর বলেছিলেন, সুলতান দেখে আমি আপ্লুত। সবাই সবার জায়গায় দুর্দান্ত। ছবিটির দ্বিতীয়ার্ধে আমি রীতিমতো কেঁদেছি। আর বজরঙ্গি ভাইজান দেখার পরও কাঁদতে দেখা গেছে এ তারকাকে। ছোটবেলার ঈদ প্রসঙ্গে আমির বলেন, ঈদের থেকে ছোটবেলায় আমাদের কাছে মূল আকর্ষণ ছিল ঈদি। ঈদি পাওয়ার লোভে আমরা বড়দের বারবার সালাম করতাম।দিনের শেষে গুনতাম কে কত টাকা পেয়েছি। তারপর ওই টাকা দিয়ে কিনতাম ঘুড়ি, আর মাঞ্জা দেওয়া সুতো। এখন ছেলে আজাদকে ঈদি পাওয়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ছেলে আজাদকে কী পরিমাণ ঈদি দেন আমির? প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মুখে শোনা গেল, আমি দুই টাকার মতো ঈদি পেতাম। আমার ছেলেকেও দুই টাকাই দিই। কারণ, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পেলে স্বভাব নষ্ট হবে। আমির তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে হজও করেছেন। আর/১৭:১৪/২৩ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2t2LJZU
June 23, 2017 at 09:51PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top