নিজস্ব সংবাদদাতা: শূন্যতা আঁকড়ে ধরেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে। সীমান্ত জনপদখ্যাত সিলেটের এই উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা। ডাক্তার, নার্স মেডিকেল টেকনেশিয়ানসহ একাধিক পদে শূন্যতা আর নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান থাকায় নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে গুরুত্বপূর্ণ মোট ৬৭ পদই দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এসব পদ শূন্যতার বেড়াজালে আবদ্ধ এ স্বাস্থ্যসেবার করুণ দশায় উপজেলাসী তাদের অন্যতম মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা থেকে প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছেন।
এখানকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি সমস্যাজর্জরিত থাকায় গোয়াইনঘাট উপজেলাবাসীর সিংহভাগ মানুষকে বাধ্য হয়ে গোয়াইনঘাট থেকে পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর কিংবা ৬৩ কিলোমিটার দূরবর্তী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসেবা নিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে পদ শূন্যতায় বিঘ্নিত উপজেলা কমপ্লেক্সের জটিলতার কারণে উক্ত জনপদের বাসিন্দাদের চিকিৎসেবা পেতে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। গুরুতর, ডেলিভারি, কিংবা দুর্ঘটনা জনিত আহত মুমূর্ষ রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীসহ জনসাধারণকে ভোগ করতে হয় অবর্ণনীয় সীমাহীন দুর্ভোগ। এমনিতেই চিকিৎসাসেবা প্রদানে দীর্ঘদিন থেকেই এ উপজেলাবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে দুর্ভোগ বিড়ম্বনা। ডাক্তার, নার্সসহ সৃষ্ট পদ শূন্যতা বিদ্যমান সমস্যাটির কারণে বাড়তি দুর্ভোগ বিড়ম্বনা ভর করেছে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার ললাটে।
বিরাজমান সমস্যাটি অবহিত থাকার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গরজ নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এ প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত ডাক্তার, নার্সসহ কর্মকর্তারা এই প্রতিষ্ঠানটিতে ইচ্ছেমতো চাকরি করে যাচ্ছেন। ডাক্তার, নার্সরা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিকে তাদের বদলির ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহার করেন এবং অনেকে ইচ্ছে করেই ডেপুটেশন কিংবা প্রেষণের সুবিধা নিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠান ফেলে রেখে ইচ্ছেমতো অন্যত্র চাকরি করেন বলে অভিযোগও রয়েছে। সরেজমিনে ফুটে ওঠে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির নানা সমস্যা অসঙ্গতিসমূহ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গোয়াইনঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে ২৯ জন ডাক্তারের পদ। সরকারি পরিসংখ্যানুসারে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম শ্রেণিতে ২৯ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ থাকলেও উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ১২ জন । তার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. শারমিন মাহবুবা খানম আইএইচটি সিলেটে ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিযুক্ত (লেংগুড়া) ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেপুটেশনে বদলি হয়ে চাকরি করছেন। উপজেলার মোট ইউনিয়ন ৯টি। তার মধ্যে নবসৃষ্ট ৯নং ডৌবাড়ি ইউনিয়নকে এখনো স্বাস্থ্য বিভাগের অর্ন্তভুক্ত না করার কারণে ডাক্তার নিয়োগ হয়নি। অবশিষ্ট ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ডাক্তার শুন্য। দ্বিতীয় শ্রেনীতে নার্সের ১৫টি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত রয়েছেন ৭ জন নার্স। এখানে শূন্য পদ রয়েছে ৮টি।
সূত্রমতে, ১৫ বছর আগে এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেয়া হলেও শুরু থেকে মেডিকেল টেকনেসিয়ান না থাকার কারণে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে,ইসিজিসহ জরুরি পরীক্ষা, নিরীক্ষায় উপজেলার রোগীদের দুর্ভোগ ভোগান্তির শেষ নেই। পাশাপাশি বিনষ্ট হচ্ছে বরাদ্দকৃত এক্স-রে মেশিনসহ মূল্যবান নানা যন্ত্রপাতি। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে মোট ৮ জনের পদ থাকলেও একজন ইপিআই ও একজন সেনেটারি ইন্সপেক্টর ছাড়া সবকটি পদই শূন্য। রেডিওগ্রাফার ও ল্যাব টেকনেসিয়ান না থাকায়ও দুর্ভোগের অন্ত নেই। ৫ জন সুইপারের পদে আছেন ২ জন, ৩ জনের নাইট গার্ডের মধ্যে আছেন মাত্র ১জন।
স্থানীয় সূএে জানা যায় যে- ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে মোট ১৮৭টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১২০ জন। ৬৭টি পদে লোকবল শূন্যতায় ধুঁকছে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি।
জেলা শহরের সঙ্গে গোয়াইনঘাটের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দূরবর্তী হওয়ায় এখানে যোগদানকারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বেশিদিন থাকতে চান না। ফলে এ উপজেলার অধিবাসীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2sfalOq
June 12, 2017 at 08:27PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন