মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রায় চার মাস পর কমিটি ঘোষনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। চলিত মাসের শেষের দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। নেতৃত্ব পেতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতাদের কাছেও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে সচেষ্ট পদপ্রাপ্তি নেতারা।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের যাচাই-বাছাই জালে আটকে ছিল বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বিশ্বনাথ ছাত্রলীগের কর্মী সম্মেলনের চার মাসেও অতিবাহিত হলেও কমিটি ঘোষণা না হওয়া হতাশায় ছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন পদ-প্রত্যাশী নেতারাও। এ নিয়ে দলের ভিতর ও বাহিরে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। অবশেষে চলিত মাসের শেষের দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা হবে এমন খবরে দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে প্রাণচঞ্চলতা ফিরে এসেছে। তবে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা হলে কারা আসছে নেতৃত্বে? এনিয়ে চলছে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক আলাপ-আলোচনা।
উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি পদে আবদুল মালিক সুমন, মুহিবুর রহমান সুইট ও শীতল বৈদ্য মূল আলোচনায় রয়েছেন। তাদের নিয়ে স্থানীয় সংগঠনের ভিতরে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। কমিটির সভাপতি হতে তাদের সাধ্যমতে সিনিয়র নেতাদের কাছে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। রাত-দিন রাজপথে কর্মীদের নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যক্রম। কিন্তু তারপরেও এই তিন নেতার মধ্যে দলের জন্য কে কতটা সক্রিয় ও নিষক্রীয় রয়েছেন এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। তবে কারা আসছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বে এনিয়ে নেতাকর্মীর মধ্যে কানাঘোষা প্রতিনিয়ত চলছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় ২০১২ সালের ৩০ জুন। ফয়জুল ইসলাম জয়কে আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল মালিক সুমন ও মুহিবুর রহমান সুইটকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মেয়াদ ছিল ৩ মাস। এ সময়ের মধ্যেই সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার দায়িত্ব ছিল আহ্বায়ক কমিটির। উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরপরই ছাত্রলীগ দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে ভিতরে ভিতরে তাদের গ্রুপিং থাকলে সম্প্রতি তারা প্রকাশ্যে দুটি গ্রুপ অবস্থানে রয়েছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর উপজেলা সদরে পৃথকভাবে বিজয় মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।
কিন্তু ৩ মাসের স্থলে প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর চলিত বছরের গত ১৬ মার্চ বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী সম্মেলনের নামে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। ওই সম্মেলন শেষে জেলা ছাত্রলীগের কাছে প্রার্থীদের সিভি জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। আর ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি পদে আবদুল মালিক সুমন, মুহিবুর রহমান সুইট, শীতল বৈদ্য, মোবারক হোসেন পার্থ সারথি পাপ্পু দাস, সাধারণ সম্পাদক পদে শাহ বুরহান আহমদ রুবেল, জেলা ছাত্রলীগের কমিটির কাছে সিভি জমা দিয়েছেন বলে জানাগেছে। ওই সম্মেলনে ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়।
তবে খুবই শিগগিরই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হচ্ছে এমন আভাস দলীয় নেতাকর্মীর কাছে পৌঁছলে, তারা দলীয় পদ-পদবি পেতে লবিং শুরু করেছেন বলে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান।
জানা গেছে, উপজেলা কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা শোডাউন, মতবিনিময় ইত্যাদি করলেও কমিটি নির্ধারিত হবে মূলত লবিং আর গ্রুপিংয়ের জোরেই। জেলা ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন প্রভাব মিলিয়ে প্রায় দুটি গ্রুপ কমিটিতে থাকার চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হলে শেষ পর্যন্ত সমঝোতার কমিটি হবে। দুটি গ্রুপের নেতাদের কমিটিতে স্থান দেয়া হতে পারে।
তৃণমূল ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় বেশ এগিয়ে আছেন কয়েকজন। এর মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন, আবদুল মালিক সুমন, মুহিবুর রহমান সুইট, শিতল বৈদ্য। আর সাধারণ সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় আছেন তারা হলেন-শাহ বুরহান আহমদ রুবেল, মোবারক হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে একদিকে যেমন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের গ্রুপিং কাজ করছে তেমনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। পছন্দের প্রার্থীদের পদ পাইয়ে দিতে সবাই কমবেশি ব্যস্ত থাকবেন। তবে যাদের ছাত্রত্ব নেই কিংবা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় এমন কমিটি গঠন না করার জন্য জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি তারা আহ্বান জানান।
বিশ্বনাথ সভাপতি পদপ্রার্থী দাবি করে ছাত্রলীগ নেতা পার্থ সারথি পাপ্পু বলেন, কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। কমিটি হলে ছাত্রলীগ প্রাণ ফিরে পাবে। তবে খুব শিগগিরই কমিটি গঠন হবে বলে শোনা যাচ্ছে। আশাকরি জেলা ছাত্রলীগ যোগ্যতা-মেধাবী ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে কমিটি ঘোষনা করবেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের অপর সভাপতি পদপ্রার্থী মুহিবুর রহমান সুইট বলেন, অতীতের চেয়ে বর্তমানে বিশ্বনাথ ছাত্রলীগ অনেক শক্তিশালী। ছাত্রলীগের কমিটি ঘোসনার জন্য জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি আহবান জানান।
দলীয় গ্রুপিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ একটি বড় সংগঠন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা মতপ্রার্থক্য থাকতে পারে। নতুন নেতৃত্ব আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক,সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীর হাত আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি মনে করেন।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, চলিত মাসের শেষের দিকে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করা হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2tIaEiN
July 28, 2017 at 12:28PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন