ঢাকা, ২০ জুলাই-আমাদের দেশের নির্মাতারা বিভিন্ন সময়েই দেশীয় অভিনয়শিল্পীদের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলে থাকেন-আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীরা ফিটনেসের প্রতি অতটা সচেতন না, যতটা সচেতন থাকা প্রয়োজন। যার কারণে বিভিন্ন সময়েই ঘুরে-ফিরে চলচ্চিত্র কিংবা নাটকের বিভিন্ন আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। আর এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছে তিন প্রজন্মের তিনজন পরিচালকের সঙ্গে- তাদের কথায়, আর্থিক দিক থেকে একজন অভিনয়শিল্পীকে যতটা মূল্যায়ন করা দরকার, সেটি করা হয় না। আরেকটি বিষয় হলো, অভিনয়টাকে যখন পেশা হিসেবে একজন অভিনয়শিল্পী নিতে শুরু করেন, এরপর তার ক্যারিয়ারের আর্থিক পরিস্থিতিটা কিছুটা বদলালে তারা নিজের ফিটনেসের প্রতি খেয়াল রাখার বিষয়গুলোতে অতটা গুরুত্ব দেন না। এছাড়াও বলেছেন, একজন অভিনয়শিল্পী ফিটনেস সচেতন না হওয়ার পরও দর্শক তার কাজ দেখে যখন বলছে, ভালো কাজ করেছে। যার কারণে তারাও সে বিষয়গুলোতে একটা সময় গিয়ে নজর কম দেন। মোরশেদুল ইসলাম এ দেশের একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক। তার কাছে প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা কতটা ফিটনেস সচেতন? তিনি এ বিষয়ে বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পী ফিটনেস নিয়ে মোটেই সচেতন না। একটা জায়গা থেকে তারা অভিনয় করে, আর কি। বাইরের দেশের শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নেন। যেমন- আমির খানের কথাই বলি। সে দঙ্গল চলচ্চিত্রের জন্য যেভাবে নিজেকে গড়েছে আবার ভেঙেছে, তা করেছে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য। সেটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের দেশে সেটা কল্পনাও করা যায় না। নিজের ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতার আলোকে মোরশেদুল ইসলাম কথা প্রসঙ্গে প্রতিবেদককে বলেন, একটা সময় আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীরা ফিটনেস বিষয়ে খুব সিরিয়াস ছিলেন। কিন্তু যখন প্যাকেজ (ধারাবাহিক) নাটক শুরু হলো, আর অনেকে অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করলেন। তখন থেকেই পরিস্থিতিটা বদলে যেতে শুরু করলো। কারণ একজন শিল্পী ধারাবাহিক নাটকে কাজ করলে যে টাকা পান, ফিল্মে কাজ করলে ওই অনুপাতে টাকা পান না। কিন্তু কিছু শিল্পী রয়েছেন যারা ফিটনেসের বিষয়ে সচেতন। এবং গুরুত্বের সহিত কাজ করেন। এই ধরনের মানসিকতার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে দর্শকদের মাঝে টিকেও রয়েছেন। এমনটাই কথার সূত্র ধরে বললেন এ নির্মাতা। তিনি এ প্রতিবেদকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, আমাদের দেশে একজন অভিনয়শিল্পী যদি ছয় মাস ধরে অন্যকোন কাজ না করে একটি ছবির জন্য প্রস্তুতি নেন, সেক্ষেত্রে তাকে কী অর্থনৈতিকভাবে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা কয়টি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আছে? বাংলাদেশে টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। আয়নাবাজি খ্যাত এ চলচ্চিত্র পরিচালক বলেন, ফিটনেসের বিষয়ে সচেতন অভিনয়শিল্পী, একদমই দেখতে পাই না। আমার মনে হয় বেশিরভাগ শিল্পীই সময় পান না। আমাদের এখানে যে পরিমাণ কনটেন্ট তৈরি করা হয় সে পরিমাণ ট্যালেন্টেড মানুষ নাই। তবে এরজন্য তিনিও মূল বিষয় হিসেবে বললেন, অর্থের কথা। তার ভাষায় বলতে গেলে, একজন শিল্পীকে কিছু সময় বেঁচে থাকার জন্য অনেক কাজ করতে হয়। আর প্রথম কথা হচ্ছে একজন শিল্পীকে ক্যারিয়ারের শুরুতেই দু-তিন বছরের একটি প্রস্তুতি নিতে হয়। সেটি আমাদের দেশের কয়জন শিল্পী নেন? আর প্রসঙ্গ হিসেবে বললেন, এজন্য বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। শিল্পী সংকটের খরা লেগেই রয়েছে। নিজের কাজের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ নির্মাতা বলেন, আমি আমার অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে যখন কাজ শুরু করি তখন একটা ওয়ার্কশপ করে নেই। যাতে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারি। আর অনেকেই করে থাকেন না। এর কারণ বাজেটের ফ্লেক্সিবলিটি। একজন শিল্পী ফিটনেস সচেতন না হওয়ার পরও দর্শক যখন বলেন, ভালো কাজ করছে, যার কারণে শিল্পীরাও ফিটনেসের বিষয়গুলোতে নজর কম দেন। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। জয়া আহসান, মডেলিং ও টিভি নাটকের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। ফিটনেস নিয়ে ভীষণ সচেতন অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান। জিরো ডিগ্রি চলচ্চিত্রের জন্য তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ এবং কলকাতায় তার অভিনয়গুণের কারণে তার জনপ্রিয়তার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। আর তার সাফল্যের পেছনের কারণ হিসেবে যে কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে, তার মধ্যে একটি হলো তার ফিটনেস রহস্য। যদিও বিষয়টি নিয়ে জয়া তেমনটি খোলামেলা আলোচনা কখনোই করেন না। আমাদের অভিনয়শিল্পীরা ফিটনেসের প্রতি কেয়ার নেন না, তা নয়। তারা তাদের মতো করে নিজের প্রতি যত্ন নেন। তবে যেভাবে নেওয়া দরকার সেভাবে তারা নেন না। একটা সময় গিয়ে দেখা যায় তারা টাইমটা সেল করে। আর তারা চরিত্রের পিছনে তারা খাটেন না। চরিত্র নিয়ে স্টাডি করেন কম। এজন্য অর্থটা বড় একটা কারণ। প্রসঙ্গের শুরুতেই বললেন দেশা-দ্য লিডার নির্মাণ করে ২০১৪ সালে দর্শক-সমালোচকদের নজর কাড়া তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈকত নাসির। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, অল্প সময়ে ও সস্তায় তারকা হওয়া বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও এমনটা ঘটে না। আর একজন শিল্পীর মধ্যে স্টার ইজম চলে আসলেই অনেক কিছুই তখন তাদের জীবনে আগের মতো থাকে না। তাই নিজের প্রতি আর ইনভেস্টও করেন না। তারা ভাবেন, তারা তো প্রস্তুত। কারণ তখন তারা ফিডব্যাক পাচ্ছেন। তরুণ এ নির্মাতা মনে করেন, বাংলাদেশে বর্তমানে অভিনয়কে মন থেকে ভালোবাসেন এমন শিল্পীর সংখ্যা খুবই কম। আর দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়ার একজন শিল্পীর যে ক্ষুধা সেটিও খুব কম শিল্পীর মধ্যে দেখতে পান। আর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, বাংলাদেশে নামকরা যে কয়েকজন নায়ক রয়েছেন, তাদের মধ্যে কয়জনের শিল্পী হওয়ার জন্য যে যোগ্যতাগুলো দরকার, সেগুলো আছে? মি. নাসির আলাপের শেষে বেশ আক্ষেপের সুরেই বলেন, অনেক সমস্যা আছে। দেখেন, ফিল্ম হচ্ছে অনেক বড় একটা জায়গা। কিন্তু আমরা দিন দিন বিষয়টিকে ছোট করে ফেলছি। আগে একজন শিল্পী অনেক ধাপ পেরিয়ে ফিল্মে কাজ করতে আসতেন। যার কারণে তারা অনেক বিষয়েই মেনে চলতেন। এখন আর সে সসব বিষয় নেই! এমএ/ ০৬:৪৩/ ২০ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tIHOOf
July 20, 2017 at 12:45PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top