নিজস্ব প্রতিনিধি : ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটুর প্রিয় মিঠুও মারা গেল! নিহত লিটুর পোষা প্রাণীদের মধ্যে টিয়া, কবুতর ও মোরগ ছিল। নিজের নামের সাথে মিল রেখে টিয়া পাখির নাম রেখেছিলেন ‘মিঠু’। পাখিটি লিটুকে ডাকত ‘ভাইয়া’ বলে। শখের ছিল সিরাজি কবুতর ও সরালি মোরগ। তাদেরকে রোজ সকালে নিজ হাতে খাবার দিত লিটু। টিয়া পাখির জন্য আনত ব্রেড, কলা ও বিভিন্ন ধরনের ফল। গত সোমবার রাতে লিটুর দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর শোক সইতে না পেরে একে একে মারা যায় পোষা ৫টি পাখি। আজ তার অতি প্রিয় টিয়া মারা যায়। লিটুর বাবা আর্তনাদ করে বলেন, লিটুর পথ ধরে মিঠুও চলে গেল। এ আল্লাহ আমাকে যারা ছেলে হারা করেছে তাদের তুমি বিচার করো।
সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের শ্রেনী কক্ষে নিজ দলের ক্যাডারদের গুলিতে খালেদ আহমদ লিটু নিহত হন বলে পুলিশ ধারণা করছে। পুলিশ বলছে, কক্ষে অবস্থান করা নিজ গ্রুপের কোনো কর্মীর সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে খুব কাছ থেকে গুলি করায় লিটুর মাথার পেছনের খোল ফেটে মগজ বেরিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোশাররফ হোসেন বলেন, কক্ষের ভেতরে এক জোড়া জুতা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি বা খোসা কিছুই কক্ষে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা নিজ পক্ষের কারো হাতেই লিটু খুন হয়েছেন। ঘটনার আলামত সেরকমই আভাস দিচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের ৪ জন নেতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের ইংরেজি বিভাগের শ্রেণীকক্ষে নিহত খালেদ আহমদ লিটুর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার মা রাবিয়া বেগম বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করে কাঁদছেন। আর তার নাড়িছেড়া বুকের ধনকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চান তিনি।
লিটুর বাবা হাজী খলিলুর রহমান কাঁদতে কাঁদতে পুত্র হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, মোটরসাইকেল কেনা হলোনা ছেলের জন্য। রাজনীতি তার জন্য কাল হলো। একমাত্র বোন সুবিনা জাহান সোনিয়ার বুকফাঁটা আর্তনাদ ও বিলাপে কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না। তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা যেনো সবাই হারিয়ে ফেলেছেন। চাচাত ভাই ইমন জানান, ‘কাল সকালে চাচা গেছইন লিটু ভাইর লাগি মোটর সাইকেল কেনার লাগি ব্যাংক থাকি টাকা তুলাত। আর তানর (চাচার) ফুয়া (ছেলে) মোটর সাইকেল ছড়ার বদলা কফিন ছড়লা।’ তিনি জানান, তার চাচাত ভাই লিটু কলেজে না পড়লেও বোন সোনিয়া অনার্স ১ম বর্ষে লেখাপড়া করেন। মা রাবিয়া বেগম একটু পরপর ছেলের কবর দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লে তাকে স্বজনরা জোর করে ঘরে ফিরিয়ে আনছেন। একমাত্র ছেলে লিটুকে হারিয়ে বাবা প্রলাপ বকছেন। ১ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে নিহত লিটু বড়। তার আয় আর বাবার জমানো টাকার একটি অংশ দিয়েই চলতো তাদের ও সংসারের ভরণপোষন।নিহত লিটুর মা রাবিয়া বেগম ক্যান্সারের রোগী।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2uabXcB
July 19, 2017 at 08:59PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন