ঢাকা::
নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং’ করেছে। উড়তে পারেনি ভ্যাটের প্লেইন, বরং মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না করায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছেন, একদিকে টাকা বিদেশে চলে যাবে, অন্যদিকে সৎ করদাতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হবে। এটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে সংস্কার হচ্ছে না তার মূল কারণ রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার অভাব বলে এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন।
জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর বাজেট পর্যবেক্ষণ নিয়ে আজ মহাখালীস্থ ব্র্যাক সেন্টারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একথা বলেছেন।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অপর সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।
ভ্যাট আইনের ব্যাপারে ড. দেবপ্রিয় বলেন, অনলাইন-ব্যবস্থাসহ অন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ক্র্যাশ ল্যান্ড করা প্লেনটি আবার উড়াতে হবে, এটাই মূল চেষ্টা হওয়া উচিত। নির্বাচনের পরে যাতে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে না হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন আইনের পক্ষে তারা। যদি ১২ শতাংশ একক ভ্যাট হার নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হতো, নতুন আইনের এই পরিণতি হতো না। তিনটি কারণে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আর, এগুলো হলো অসম্পূর্ণ প্রস্তুতি, রাজনৈতিক সহমতের অভাব এবং সামাজিক তাৎপর্যের প্রভাব।
সিপিডি বলছে, একক ভ্যাট হার না থাকায় এতোদিন যারা সুবিধা পেয়েছেন, নতুন আইনে তারা অসুবিধায় পড়তেন। আবার রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত অনেক ব্যক্তি এতোদিন অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিষয়টি দু’দিক থেকেই দেখতে হবে।
সিপিডি বলছে, সরকার চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ে যে ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তাতে ৪৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, টাকা পাচারকারীর নাম-পরিচয় জানার পরও যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয়, আবার সৎ করদাতাদের উপর করের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, এতে ন্যায়বিচার হয় না। সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এমনিতেই নির্বাচনের বছরে টাকা পাচার বৃদ্ধি পায়।
ড. দেবপ্রিয় বাজেটে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মূলধন জোগানে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার সমালোচনা করে বলেন, এই টাকা দেয়া উচিত নয়। সিন্ধুর মধ্যে বিন্দুর মতো তা তলিয়ে যাবে। নতুন ব্যাংকের পাশাপাশি আজ প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকও এখন সমস্যায় পড়েছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরে সুশাসনের অভাব আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে নজরদারি করার কথা ছিল, তা হয়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এ আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। এখনই সংস্কার-প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
সিপিডি বলছে, বাজেটের ঘাটতি পূরণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বেশি ঋণ নেয়ায় সরকারের দায় বাড়ছে। এতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এটি মধ্য মেয়াদে টেকসই হবে না। এক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
তারা মনে করেন, সঞ্চয়পত্র সামাজিক সুরক্ষার বিষয় নয়। অন্যভাবে খরচ করে সামাজিক সুরক্ষা দেয়া যেতে পারে। সঞ্চয়পত্র কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কিনছে। এটা যেন না হয় সেটার ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমাতে হবে এটা রাজনৈতিকভাবে বাস্তব না।
এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ফাস্টট্রাকের নয়টি প্রকল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা বা এডিপির ২০ শতাংশ রয়েছে। এখানে পদ্মাসেতু প্রকল্প ছাড়া অন্যগুলোতে কোনো বড় ধরণের অগ্রগতি নেই। এডিপিতে ২৫টি প্রকল্প আছে যারা ৫০ শতাংশ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করছে। রূপপুরের জন্য রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সঞ্চারী হতে হবে। এ জন্য অর্থনীতি বহুমুখীকরণ করতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি নিতে হবে। উৎপাদনশীলতা-নির্ভর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
সিপিডি বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়ে বলেছে, রাজস্ব আদায়ে ভালো গতি ধরে রাখতে হবে। ঘাটতি অর্থায়নে দামি উৎস থেকে ঋণ নেয়া যাবে না। সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে অনুন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2ualfqD
July 10, 2017 at 09:14PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.