ঢাকা::
গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার তৎপরতা চলছে। সকাল থেকেই ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা বিধ্বস্ত ভবনে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। কারখানা এলাকার সামনে ভিড় করছেন নিহতের স্বজন ও নিখোঁজ কয়েকজন শ্রমিকের স্বজনরা। কারখানা এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। এদিকে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্তের কাজ শুরু করেছেন।
এবিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম জানান, বয়লার কী কারণে বিস্ফোরিত হতে পারে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাথে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। বয়লার বিস্ফোরণে প্রাথমিকভাবে ৭টি কারণ নির্ধারণ করে সেটি মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। বিস্ফোরিত বয়লারটির নবায়ন মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৪ জুন। তবে এই অল্প দিনে মধ্যে এটি বিস্ফোরিত হওয়ার কথা নয়, আবার এটিকে উড়িয়েও দেয়া হচ্ছে না। এসব কিছু মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত কাজ করছি।
এদিকে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় রাতে ৯ জনের লাশ উদ্ধারের পর মঙ্গলবার সকালে আরো একজনের লাশ (বয়স ৩৬) উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এনিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১০ জনে দাঁড়াল।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ফের ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। সকাল সোয়া ৮টার দিকে আরও এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেন তারা। তবে বেশির ভাগ মরদেহ বিকৃত হয়ে গেছে।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৯ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। নিহতদের মধ্যে আটজন ঘটনাস্থলেই এবং অপরজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গাজীপুরেরর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদ হাসান জানান, ১০টি মরদেহের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে এর মধ্যে সোমবার রাতে ৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদের স্বজনদের খবর দেয়া হয়েছে। তারা আসলে হাসপাতাল থেকে তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নিহতরা হলেন-বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার নামাজখালী গ্রামের শাহার আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান (২৩), চট্টগ্রামের মিরেরসরাই থানার বামনসুন্দর গ্রামের মৃত মোকছেদ আহমেদের ছেলে আব্দুস সালাম (৫৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের বাচ্চু ছৈয়ালের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩০), মাগুরার হরিশপুর থানার গোবরা গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের ছেলে আল আমিন (৩০), রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থানার বরাট বাজার এলাকার মনিন্দনাথের ছেলে বিপ্লব চন্দ্র শীল (৩৮) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার কুন্ডা গ্রামের সাগর আলী মীরের ছেলে মজিবুর রহমান (৩৭)।
এছাড়া মনসুর (৩০) ও আরশাদ হোসেন (৩৬) নামে নিহত দুইজনের নাম পাওয়া গেলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে গাইবান্দা জেলার পলাশবাড়ি থানার মরিয়া গ্রামের মৃত মো. লিয়াকত আলীর ছেলে সোলেমান মিয়া (৩০) নামে একজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। নিহত অপর জনের পরিচয় জানা যায়নি। কামরুল ইসলাম (৩২) নামের আহত একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর মো. শাহিন আলম জানান, সোমবার দিবাগত রাত ১টার পর বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা সাময়িক বন্ধ ছিল। তবে মঙ্গলবার ভোর থেকে জয়দেবপুর ও কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট উদ্ধার কাজ শুরু করে। এ দিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে ভবনের ধসে যাওয়া অংশের নিচ থেকে আরো এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার পরিচয় জানা যায়নি।
তবে মঙ্গলবার সকালে কারখানার নিখোঁজ শ্রমিক আরশাদ হোসেনকে (৩৬) তার স্বজনরা খুঁজছেন। উদ্ধার হওয়া লাশটি আরশাদের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আরো ৩-৪ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে কারখানার সামনে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাদের স্বজনরা।
দুটি তদন্ত কমিটি
ঘটনার পর পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেধে দেয়া হয়েছে।
কমিটির অপর সদস্যরা হলেন পুলিশ সুপার, গাজীপুরের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার), শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক, বয়লার পরিদর্শক, কলকারখানা পরিদপ্তর, বিজিএমইএ’র প্রতিনিধি ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা।
গঠিত কমিটিকে বয়লার বিস্ফোরণে সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণ, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশমালা উল্লেখপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।
অপরদিকে ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরের স্টেশন অফিসার মো. আতাউর রহমান জানান, ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রধান হলেন- ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের (ঢাকা) সহকারী পরিচালক দীলিপ কুমার ঘোষ। সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2tELEfw
July 04, 2017 at 04:11PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন