‘বিচার বিভাগের স্বার্থে আমি কথা বলেই যাব কোনোভাবেই ক্ষান্ত হব না’-প্রধান বিচারপতি

সুরমা টাইমস ডেস্ক:
বিচার বিভাগের স্বার্থে বলা কথাগুলোকে নির্বাহী বিভাগ রাজনৈতিক বক্তব্য বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। তিনি বলেছেন, ‘বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলাকে নির্বাহী বিভাগ রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে করলেও এসব বিষয়ে আমি কথা বলেই যাব। কোনোভাবেই ক্ষান্ত হব না।’

শনিবার (২৯ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে মহিলা জাজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তিনি। সদ্য অবসরে যাওয়া দেশের প্রথম ও আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদানের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী আপনাকে বলছি, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় রয়েছে। আমি যে চেয়ারে বসি সেখানে বৃষ্টি পড়ে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের মূল রেকর্ড রুমও এ ভবনে। এখন সুপ্রিম কোর্টে ২০তলা নতুন ভবনটি না করা হলে আমাদের মাঠে বসেই বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে। এ ২০তলা নতুন ভবনের প্রস্তাবটি অনেকদিন ধরেই একনেকেই ঘোরাঘুরি করছে। বর্তমান মূল ভবন মনে হয় আর ৫-৬ বছরের বেশি টিকবে না। এটি ধসে গেলে আমাদের মাঠে বসেই বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী, বিচার বিভাগ কীভাবে চলবে?’

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘নারী বিচারকদের পথ প্রদর্শক হচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকেরা অগ্রগামী। আমি চেষ্টা করছি মহিলা বিচারপতিদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। সরকার এগিয়ে আসলেই হাইকোর্টে আরও মহিলা বিচারক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মামলার অনুপাতে বিচারক নিয়োগ হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের মামলার তুলনায় আমাদের বিচারপতিদের সংখ্যা অর্ধেক।’

‘আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আপিল বিভাগে আরও ৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আমাদের দেশে একটা রেওয়াজ আছে, পলিটিকাল সরকার ক্ষমতায় এসে হাইকোর্ট বিভাগে ইচ্ছামতো বিচারপতি নিয়োগ দেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে হবে’ বলেন প্রধান বিচারপতি।

এ সময় বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাওয়ার আগে সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন শূন্য পদে বিচারক নিয়োগ এবং সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে মনযোগী হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এ দেশ এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। তিনি এদেশের বিচার বিভাগের অহংকার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এ পেশায় এসেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন।’

অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পাওয়া সাবেক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘আমি আমার বিচারিক জীবনে ন্যায়বিচার করে গেছি। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অবহেলায় ভুল বিচার করিনি।’

নারী বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রিয় নারী বিচারকেরা মনে রাখবেন বিচারকের জীবন মানেই ন্যায় বিচারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া। আর এ দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন ও পরিশ্রমের।’

মহিলা জাজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও দেশের নারী বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2vTxoxq

July 30, 2017 at 01:36AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top