ইউরোপ ::
দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্নাটক তাদের একটি নিজস্ব পতাকা পেতে পারে কি না, তার নানা দিক খতিয়ে দেখতে সেখানকার সরকার একটি নয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আর তার পর থেকেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতর একটি রাজ্য তাদের আলাদা নিজস্ব পতাকা চালু করতে পারে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতভেদ দেখা যাচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত কর্নাটক যদি তাদের নিজস্ব পতাকা পায়, তাহলে জম্মু ও কাশ্মীরের পর তারাই হবে ভারতের দ্বিতীয় রাজ্য যাদের নিজস্ব পতাকা থাকবে।
কর্নাটকের নিজস্ব পতাকার দাবিকে সমর্থন করে রাজ্যের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেছেন, “ভারতের সংবিধানে কোথাও কি বলা আছে যে একটা রাজ্যের আলাদা পতাকা থাকতে পারবে না?
বস্তুত ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকেই লাল-হলুদ রঙের একটা পতাকা কর্নাটকের অঘোষিত পতাকার স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।
পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে এই পতাকা চালু করেছিলেন কন্নড় ভাষার লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট মা রামমূর্তি, যিনি কন্নড় পক্ষ নামে একটি রাজনৈতিক দলেরও জন্ম দেন।
আজও যখন কর্নাটকের লোকজন কন্নড় অধিকারের দাবিতে কোনও আন্দোলন করেন, তাদের হাতে অবধারিতভাবে এই লাল-হলুদ পতাকা দেখা যায়।
সেটা তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে কাবেরী নদীর জলের জন্য আন্দোলনই হোক, কিংবা কন্নড় ভাষার অধিকতর স্বীকৃতির দাবিতে কোনও সমাবেশ – বিক্ষোভকারীদের কাছে এই লাল-হলুদ পতাকা দেখা যাবেই।
বস্তুত বছর পাঁচেক আগে কর্নাটকের তখনকার বিজেপি সরকারও একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই পতাকাকেই কার্যত সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছিল।
তখনকার অর্থমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া তার বাজেট ভাষণে বলেছিলেন, রাজ্যের সমস্ত সরকারি ভবন ও স্কুল-কলেজে এই পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক হবে।
কিন্তু সেই বিজেপিই এখন অভিযোগ করছে, রাজ্যে নির্বাচনের আগে আলাদা পতাকার দাবিতে ধুয়ো দিয়ে কর্নাটক সরকার আসলে বিভাজনের আবেগকেই উসকে দিচ্ছে।
রাজ্যের নিজস্ব পতাকা নিয়ে ভারতের সংবিধান নীরব হলেও ভারত-শাসিত কাশ্মীরের নিজস্ব পতাকা কিন্তু বহুদিন ধরেই চালু আছে।
১৯৫২ সালে কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা শেখ আবদুল্লা দিল্লি চুক্তির মাধ্যমে তার রাজ্যের জন্য আলাদা সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও আলাদা পতাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি আদায় করে নেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এটাও রিপোর্ট করা হচ্ছে যে উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ডের জঙ্গীদের সঙ্গে ভারত সরকার যে শান্তিচুক্তি সই করতে চলেছে, তাতেও নাগাল্যান্ডের জন্য আলাদা পতাকার দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।
কর্নাটকের একজন আইনি বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, সংবিধানে একটি রাজ্যের আলাদা পতাকা নিয়ে কিছু বলা না-থাকলেও সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু প্রকারান্তরে এই দাবি মেনে নিয়েছে।
রাজ্যের সাবেক অ্যাডভোকেট জেনারেল রবিবর্মা কুমার বলছেন, এস আর বোম্মাই বনাম ভারত সরকার মামলাতেই দেশের শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতরেও কয়েকটি ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যগুলোই শেষ কথা বলতে পারবে।
“সুপ্রিম কোর্ট তখন বলেছিল একটা রাজ্যের নিজস্ব পতাকা থাকতেই পারে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে তা যেন কখনও জাতীয় পতাকাকে অসম্মান না-করে। রাজ্যের পতাকা সব সময় জাতীয় পতাকার নিচে থাকতে হবে”, জানাচ্ছেন তিনি।
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা আবার সুপ্রিম কোর্টের সাবেক একজন বিচারপতিকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, “প্রতিটা রাজ্য যদি নিজেদের আলাদা আলাদা পতাকা চালু করতে চায় তাহলে দেশের সংহতি বিপন্ন হতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই যায়!”
from যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2u8oHz8
July 19, 2017 at 07:41PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.