মালয়েশিয়ায় ৩ লাখ অবৈধ বাংলাদেশীর ঘুম হারাম

Captureএশিয়া ::

মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশী শ্রমিকদের ই-কার্ডের (অস্থায়ী পারমিট) মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিলেও সেটি নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বহু বিদেশী শ্রমিক। এর মধ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হিসাবে আড়াই থেকে তিন লাখ শ্রমিক রয়েছে বাংলাদেশী। গত ৩০ জুন ই-কার্ড নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপরই শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের সমন্বয়ে যৌথভাবে অবৈধ শ্রমিক ধরপাকড় অভিযান শুরু হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানী কুয়ালালামপুর, জহুরবারুসহ বিভিন্ন এলাকার ফ্যাক্টরি ও রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে কাগজপত্রবিহীন শত শত অবৈধ কর্মীকে আটক করার সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুয়ালালামপুরের পেটালিং জায়ার ডরমিটরিতে চালানো অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী। ওই অভিযানে আটক ২৩৯ জনের মধ্যে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৫১ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার মধ্যে ৩৯ জনই বাংলাদেশী নাগরিক বলে হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী অভিযানের ব্যাপারে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বেশির ভাগ শ্রমিক আসবাবপত্র-প্লাস্টিক উৎপাদন কারখানাগুলোতে কাজ করছিলেন। আমরা দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রা করতে এই অভিযান পরিচালনা করেছি।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের উদ্ধৃতি দিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে আতঙ্কিত বাংলাদেশীরা গতকাল নয়া দিগন্তকে টেলিফোনে জানান, তারা ই-কার্ড করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসে যাওয়ার সময় পুলিশের হাতে যদি গ্রেফতার হয়ে যান, এমন আতঙ্কের কারণেই তারা আবেদন করতে পারেননি। অনেকে আবার গাফেলতিও করেছেন। এখন দেখছি পরিস্থিতি খুবই জটিল। শুনছি পুলিশ ইমিগ্রেশন এখন পুরো মালয়েশিয়ার ঘরে ঘরে ঢুকে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। সময়ও নাকি আর বাড়াবে না। তাই এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কুয়ালালামপুর ছাড়ার চিন্তা করছি।
গতকাল দুপুরে কুয়ালালামপুর কিলাং এলাকায় স্টুডেন্ট ভিসায় পাড়ি জমানো এস এম আকাশ নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ায় এর আগেও অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। তখন হাজার হাজার অবৈধ শ্রমিক বৈধ হওয়ার জন্য দালালদের হাতে লাখ লাখ রিংগিট দিয়েছিলেন। কিন্তু ওইবার অনেকেই বৈধ হওয়ার বদলে প্রতারিত হয়েছিলেন। তাই এবার সরকার এক বছরের জন্য অস্থায়ী কার্ড (ই-কার্ড) করার সুযোগ দিলেও সেটিকে অনেকেই পাত্তা দেয়নি। তারপরও এক থেকে দেড় লাখ অবৈধ শ্রমিক ই-কার্ডের আওতায় এসেছে। এখনো পুরো মালয়েশিয়ায় আড়াই থেকে তিন লাখ বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিক ই-কার্ডের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখন তাদের সবার ঘুম হারাম। তিনি বলেন, আমারও এবার ই-কার্ড করার ইচ্ছা ছিল না। কারণ এর আগে আমিসহ অনেকেই দালালদের কাছে ৫-৭ হাজার রিংগিট পর্যন্ত তুলে দিয়েছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম এবার বৈধ হচ্ছি। কিন্তু পরে দেখছি দালালরা আর তাদের ফোনই ধরছে না। যাক কপাল ভালো এবার শেষ সময়ে কিভাবে আমি ই-কার্ডের আবেদন করে ফেলেছি। এরপর বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্টও হাতে পেয়েছি। তাই এখন বুক ফুলিয়ে মালয়েশিয়ায় চলাফেরা করতে পারব বলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছি।
গত রাতে মালয়েশিয়ার কোতারায়া থেকে ব্যবসায়ী জামিল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার এবার খুবই কঠোর অবৈধ শ্রমিকদের ব্যাপারে। ই-কার্ড করতে নিবন্ধনের মেয়াদ শুক্রবার শেষ হওয়ার পর থেকেই ধরপাকড় শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এবার অবৈধ শ্রমিক ধরতে তারা (পুলিশ ইমিগ্রেশন) ডোর টু ডোর অভিযান চালাবে বলে শুনছি।
মালয়েশিয়া সরকারের ‘প্রোগ্রাম ই-কার্ডে’ উল্লেখ রয়েছে, কোনো অবৈধ শ্রমিক যদি কোম্পানি থেকে গ্রেফতার হয় তাহলে মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়াও জরিমানা করা হবে। ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার রিংগিট জরিমানা করা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেটি ৫০ হাজার রিংগিটও হতে পারে। অপর দিকে আদালতের নির্দেশে জেল জরিমানার পর অবৈধ শ্রমিককে ১ থেকে সর্বোচ্চ ৬টি (রোতান) বেত্রাঘাত দেয়া হবে।
এ দিকে দ্য মাস্টার বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়া (এমবিএএম) সরকারের কাছে ই-কার্ডের মেয়াদ ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সমস্যার সমাধান এবং ধীরগতি প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে সহজ ও দ্রুত ই-কার্ড করতে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টকে তারা সহযোগিতা করবে। তারা আশা করে ই-কার্ড করার প্রক্রিয়া সহজ করা হলে নিয়োগকর্তারা অবৈধ কর্মীদের ই-কার্ড করাতে উদ্বুদ্ধ করবেন। উল্লেখ্য, ই-কার্ড করার েেত্র নিয়োগকর্তাকে কর্মীদের নিয়ে ইমিগ্রেশনে যেতে হয়, তখন কোম্পানির আয়-ব্যয়সহ যাবতীয় তথ্য দিতে হয়। এ ছাড়া ইমিগ্রেশনের ধীরগতির কারণে নিয়োগকর্তারা ই-কার্ড করতে উৎসাহিত হন না। অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকেরা ই-কার্ড করার জন্য ৫০০ থেকে ১ হাজার রিংগিট পর্যন্ত খরচ করছেন। অথচ মালয়েশিয়া সরকার ই-কার্ড ফ্রি করার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ কে এম শহীদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ৪ লক্ষাধিক অবৈধ শ্রমিক থাকতে পারে। এর মধ্যে দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ শ্রমিক ই-কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। বাকিরাও যাতে দ্রুত আবেদন করেন সেজন্য তিনি অবৈধ শ্রমিকদের আহ্বান জানান। তিনি তাদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন, শ্রমিকেরা যেন এবারের সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া না করেন। যদি কোনো কারণে সুযোগ না নেন তাহলে তাদের সমস্যা হতে পারে।
এক প্রশ্নের উত্তরে হাইকমিশনার এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে অবৈধ শ্রমিকেরা বৈধতা লাভ করে সুন্দরভাবে এ দেশে কাজ করতে পারেন। তবে সবকিছু গুছিয়ে আনতে একটু সময় লাগছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু
মালয়েশিয়া থেকে শামছুজ্জামান নাঈম জানান, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত কাগজপত্রহীন অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপ। শুক্রবার মাঝ রাত থেকে শুরু হয় এই অভিযান। গতকাল ইনফোর্স কার্ডের (ই-কার্ড) মাধ্যমে নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হতেই এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপ।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অবৈধ শ্রমিকদের ই-কার্ড নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সময়সীমা শেষে বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দেখা যায় ১৪ হাজার ৫৪১ জন নিয়োগকারীর মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার ৯৮১ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ই-কার্ড ইস্যু করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৭৪৬ জনের, যা মোট অবৈধ লোকের মাত্র ২৩ শতাংশ। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের ল্য ছিল প্রায় ছয় লাখ অবৈধ অভিবাসীকে ই-কার্ডের আওতায় নিবন্ধন করানো।
অবৈধ অভিবাসীদের নিবন্ধনের চিত্রে হতাশ ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমার ওপর আমি বহুবার জোর দিয়েছিলাম। এখন অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হবে এবং তাদের নিয়োগদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এমনকি যারা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসা লোকদের চাকরি দিয়েছে তারাও রেহাই পাবে না।’
তিনি আরো জানান, মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ শ্রমিক বসবাস করছে বাংলাদেশের। এরপর ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও নেপালের নাগরিক রয়েছেন। তবে নিবন্ধনের আওতায় কতজন অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিক নিবন্ধিত হয়েছেন তার হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে শুক্রবার মধ্য রাতে কুয়ালালামপুরের পেটালিং জায়া ডরমিটরিতে অভিযান চালিয়ে ৫১ অবৈধ শ্রমিককে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। যার নেতৃত্ব দেন ইমিগ্রেশন পুলিশের মহাপরিচালক দাতুকে সেরি মুস্তাফার আলী।
অভিযানে ২৩৯ জনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর ৫১ জনকে আটক করা হয়। যার মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশী। অভিযানের পর মুস্তাফার আলী সাংবাদিকদের বলেন, বেশির ভাগ শ্রমিক আসবাবপত্র-প্লাস্টিক উৎপাদন কারখানাগুলোতে কাজ করছিলেন। আমরা দেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব রা করতে এ অভিযান চালিয়েছি।


from প্রবাস – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2tzzPXc

July 02, 2017 at 11:37AM
02 Jul 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top