আবুধাবি, ২৫ জুলাই- ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের পুরুষ শ্রমিকের ভিসা বন্ধ থাকলেও নারী গৃহকর্মী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ভিসা খোলা রয়েছে। বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৭৩৫৩৬ জন নারী শ্রমিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসেছেন। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় লক্ষাধিক নারী শ্রমিক কাজ করছেন । তবে দেশ থেকে বাড়িঘর গয়নাসহ শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে আসা এসব মহিলারা কেমন আছেন প্রবাসে?- এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। দালালের মাধ্যমে আমিরাতে আসা টাঙ্গাইলের সোনিয়া বেগম, ঢাকার নুল আকতার ও শারমিন আকতার জানান, এভাবে প্রবাসে আসা বেশিরভাগ নারীর জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। যারা ঘরের কাজে নিযুক্ত আছেন তারা বেশিরভাগই অমানুষিক অত্যাচারে আছেন। আবার যারা দালালের কাছে আছেন তাদেরকে বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে পতিতালয়ে, আর করতে হচ্ছে অনৈতিক কাজ। এসব থেকে পালিয়ে আসলে পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়, দেশে ফেরত গেলে ঋণের ভয়। তাহলে কোন দিকে যাব আমরা? কিভাবে সংসার চালাবো? এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেংগে পড়েন স্বামীর সাথে বিচ্ছিন্ন দুই সন্তানের জননী টাঙ্গাইলের ধলইয়ার চর গ্রামের সোনিয়া বেগম। নুল আকতার ও শারমিন আকতারের কন্ঠেও বেদনার সুর। গৃহকর্মীর ভিসায় ৬০০-৮০০শ দিরহাম বেতন নির্ধারণ করে গৃহকর্তারা ভিসা ফ্রি দিলেও দালালরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব গরিব মহিলার কাছ থেকে। যে সব মহিলা আমিরাতে এসেছেন এদের বেশিরভাগই প্রায় অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত।যে কারণে সহজে ভাষা শিখতে পারে না, পারেনা নিজেকে ভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে। অথচ আদম বেপারীর খপ্পরে পড়ে হারাচ্ছেন সবকিছু। কোন ধরণের প্রশিক্ষণ ছাড়া অবৈধ কিছু ইমিগ্রেশন অফিসারের সহযোগিতায় বিমান বন্দর দিয়ে অবৈধভাবে অনেক মহিলাকে দালালরা আমিরাতে নিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। এভাবে আসা ঢাকার নুল আকতার জানিয়েছেন কোন প্রশিক্ষণ না দিয়ে সে সরাসরি দালাল এর মাধ্যমে আমিরাতে এসেছে। কিন্তু একজন নারী শ্রমিক কিভাবে কোন ধরণের প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রবাসে যেতে পারে- নুলের কথা শুনে উপস্থিত কয়েকজন প্রবাসী নারীও এমন প্রশ্ন করলেন সাংবাদিকের কাছে। বর্তমানে দালালের খপ্পরে যে হারে মহিলারা প্রবাসে এসে নির্যাতিত হচ্ছে, লাঞ্চিত হচ্ছে তা সত্যিই অমানবিক। দালালদের কাছ থেকে এবং র্কমক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসা অনেক মহিলা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে র্পাট টাইম কাজ করছেন। কেউ কেউ আবার আমিরাতে রোডে রোডে ভিক্ষা করছেন, আবার কেউ কেউ পেটের দায়ে পতিতার কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। উপরে উল্লেখিত কারণে পালিয়ে থাকা অসংখ্য নারীকে আউট পাশ নিয়ে দেশে যাওয়ার জন্য দূতাবাসে এসে ভিড় করতে দেখা যায়। নারীদের জন্য দূতাবাসে কোন হোম শেল্টার বা বিশ্রামাগার না থাকায় তাদেরকে গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাই অবিলম্বে মহিলাদের জন্য বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন এসব অসহায় প্রবাসী নারী কর্মী। এছাড়াও আউট পাশ নিয়ে দেশে যেতে আগ্রহী নারী শ্রমিকেরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তাদেরকে যেন, জেলে না নিয়ে সরাসরি দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নারীদের জেল খানায় রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বর্তমানে প্রবাসীদের জনপ্রিয় লেবার কাউন্সিলর আরমান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, দূতাবাস এ ব্যাপারে কাজ করছেন। তিনি জানান, এখন আর কোন নারীকে জেলে যেতে হয়না, সরাসরি বিমানে করে দেশে পাঠানো হচ্ছে। অন্যদিকে, মহিলা শ্রমিকদেরকে দালালের হাত থেকে বাঁচাতে ও প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে রক্ষা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ও মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন আমিরাতের প্রবাসীরা। আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বলেন, যারা সরকারী নিয়ম-কানুন মেনে সব কিছু দেখে শুনে এসেছেন তারা বেশ ভাল আছেন। এছাড়ও তিনি প্রবাসে আসার আগে সরকারী সব নিয়ম কানুন মেনে চলে কি চাকরি করবেন, মালিক কে, কত টাকা বেতন পাবেন এইসব কিছু ভাল করে জেনে শুনে আসার জন্য মহিলা শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, কেউ যদি নির্দিষ্ট কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দূতাবাসে অভিযোগ নিয়ে আসেন তাহলে দূতাবাস তাদের হয়ে আইনি লড়াই করবে। যেকোন সমস্যায় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। আর নারী পাচারকারী বা কোন দালাল চক্রের খবর থাকলে দূতাবাসে দেয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানান রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান ও লেবার কাউন্সিলর আরমান উল্লাহ চৌধুরী। এআর/২২:২৫/২৫ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2v5kGia
July 26, 2017 at 04:25AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন