এশিয়া ::
কাতারের ওপর চারটি উপসাগরীয় দেশ সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, আর সংযুক্ত আরব আমিরাত যে যোগাযোগও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে – তার প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল।
কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদদানের অভিযোগ এনে এই যে নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ – তার লক্ষ্য ছিল দেশটিকে বিপাকে ফেলে তার নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য করা।
এ উদ্দেশ্য কি সফল হয়েছে? কতটা সমস্যা পড়েছে কাতার, প্রাথমিক ধাক্কাটা তারা কতটাই বা কাটিয়ে উঠেছে?
প্রভাবশালী আমেরিকান দৈনিক দি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতা ডেকলান ওয়ালশ জানাচ্ছেন, কাতারের বিরুদ্ধে যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করা হয়েছে – এখন পর্যন্ত তা খুব একটা কাজ করছে না।
অবরোধের কারণে কাতারে প্রথমদিকে খাদ্যের সরবরাহে যে সমস্যা হয়েছিল, তুরস্ক ও ইরানের সহায়তায় তা অনেকটাই কেটে গেছে। কাতারের বিমানবন্দরের ব্যস্ততা কমে গেছে, শেয়ার মার্কেটে ১০ শতাংশ দর পড়ে গেছে এটা ঠিক, কিন্তু তাদের গ্যাস রপ্তানির ওপর কোন প্রভাব পড়ে নি। কাতারের নির্মাণ শিল্প এখন চলছে নানা রকম বিকল্প উৎসের ওপর ভর করে, শিপিংএর খরচও বেড়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য এখন আমিরাতের পরিবর্তে ওমানের বন্দর ব্যবহার করছে কাতার।
কিন্তু এ সংকট আরো গভীর হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও গত কিছুদিনে এ অঞ্চল সফর করে নানা পক্ষের সাথে আলোচনা করে গেছেন, কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি – বলছেন মি. ওয়ালশ।
কাতারের প্রতিবেশীদের অভিযোগ, কাতার আসলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে না, বরং তাদের রাজধানী দোহা থেকেই সন্ত্রাসের অর্থায়ন হচ্ছে।
মি. ওয়ালশ লিখছেন, কাতার যে তাদের দেশকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মত-পথের লোকদের মুক্তভাবে বিচরণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে – এটাই তার প্রতিবেশীদের ক্রোধের কারণ।
তার কথায় , কাতার শহরে আপনি দেখবেন বিচিত্র সব বিপরীত মতপথের লোক বা প্রতিষ্ঠান একই শহরে কাজ করে চলেছে। এখানে আছে নামকরা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা, আবার এখানেই তালেবানের অনেক কর্মকর্তা তাদের পরিবার নিয়ে থাকছে।
তালেবানের লোকেরা যে আফগান রেস্তোরাঁতে খাওয়াদাওয়া করে – তার কয়েকমাইল দুরেই আছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি – যেখানে ৯ হাজার আমেরিকান সৈন্য আছে। সেখান থেকে নিয়মিতই যুদ্ধবিমান উড়ে যাচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, বা আফগানিস্তানে – ইসলামিক স্টেট বা তালেবানের ওপর বোমা ফেলতে।
এথানে তুরস্কেরও একটি সামরিক ঘাটি রয়েছে।
ফিলিস্তিনি জঙ্গী গ্রুপ হামাস এই কাতার শহরেরই একটি বিলাসবহুল বাড়ি থেকে কার্যক্রম চালায়।তাদের সাবেক নেতা খালেদ মিশাল এখানেই থাকেন। তার কাছেই আবার ব্রিটিশ দূতাবাস।
এ শহরের কাচে ঢাকা গগনচুম্বী টাওয়ার আর বিলাসবহুল ভিলাগুলোতে যেমন ধনী কাতারিরা থাকে, তেমনি এ শহরে থাকে সিরিয়া থেকে নির্বাসিতরা, সুদানের যোদ্ধা কমান্ডাররা, কিংবা লিবিয়ান ইসলামপন্থীরা।
কাতারে একটি ইসরাইলী বাণিজ্য অফিসও ছিল, যদিও এখন তা বন্ধ। কিন্তু কাতার আশ্বাস দিয়েছে সেখানে যে বিশ্বকাপ ফুটবল হবে তাতে ইসরাইলকে খেলতে দেয়া হবে।
এমনকি সৌদি আরব, আমিরাত মিশর বা বাহরাইনের ভিন্নমতাবলম্বীরাও এসে ঘাঁটি গেড়েছে কাতারে, এবং তাদের প্রায়ই আল-জাজিরা টিভিতে কথা বলতেও দেখা যায়।
এ কারণে এই দেশগুলো কাতারের ওপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত। কাতারকে তারা যে ১৩ দফা দাবি দিয়েছে -তার একটি হলো: আল-জাজিরা টিভি বন্ধ করে দিতে হবে।
কাতার এসব দাবি এখন পর্যন্ত মেনে নেবার আভাসও দেয়নি। বরং তাদের খোলা দুয়ার এবং সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলার নীতিকে তারা এই সংকটের মোকাবিলায় ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছে।
কোন পক্ষই কাতারকে পুরোপুরি ত্যাগ করে অন্য পক্ষের সাথে ভিড়তে চাইছে না।
from মধ্যপ্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্য – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2tbGTXj
July 18, 2017 at 08:48PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন