বিশ্বনাথে ইউপি সদস্য মৃত্যুর ঘটনায় চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা।

বামে নিহত তাজ উল্লাহ মেম্বার, মামলায় অভিযুক্ত রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর ও মেম্বার আবুল কাশেম।

নিজস্ব প্রতিনিধি : সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার রামপাশা ইউপির ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা তাজ উল্লাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতে (১০ জুলাই) নিহতের পুত্র ওয়াসিম আহমদের ৫ জুলাই দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত (রেকর্ড) করেছে থানা পুলিশ।

রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর’কে প্রধান অভিযুক্ত করে ৩ জনের নাম উল্লেখ রেখে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার অপর অভিযুক্তরা হলেন- রামপাশা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও যুবলীগ নেতা আবুল কাশেম মেম্বার, সবজি ব্যবসায়ী গেদু মিয়া।

লিখিত অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেছেন, ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর ও ৫ বারের মেম্বার ইমাম উদ্দিনের মধ্যে ‘সরকারি বরাদ্ধ লুটপাট’ নিয়ে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ৩ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত শালিশ বৈঠকে বাদীর পিতা তাজ উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। আর ন্যায় সংঘত কারণেই তিনি (তাজ মেম্বার) ইমাম উদ্দিন মেম্বারের সাথে একাত্ততা পোষণ করে ছিলেন। ইমাম উদ্দিনকে সহযোগীতা করার কারণে অভিযুক্তরা কিল, ঘুষি’সহ পরিষদের কাঠের চেয়ার দিয়ে প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আলমগীর বাদীর পিতার নাকে, মুখে ও বুকে-পিঠে হত্যার উদ্দেশ্যে স্বজোরে আঘাত করে তাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তাহার (তাজ) বুকে ও মুখে সু-জুতা পরিহিত পায়ে লাথি মারে এবং নাকে ও মুখে কিল-ঘুষি মারিতে থাকে। ৩নং অভিযুক্ত গেদু মিয়া সভা কক্ষের দরজা বন্ধ করে বাদীর পিতাকে স্বজোরে নাকে ও কানে কিল-ঘুষি মারলে কানের পর্দা ফেটে যায়। এসময় নাক, মুখ ও কান দিয়ে রক্ত বের হয়। ২নং অভিযুক্ত আবুল কাশেম মেম্বার মৃত্যু নিশ্চিতের লক্ষ্যে তার (তাজ) গলায় ও মুখে হাত দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখে। এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পরিষদের মেম্বার আজাদ আলী, নাছির উদ্দিন, শামীম আহমদ, নিহতের ভাগ্না স্বপন রাজ’সহ আরো ২/৩ জন অভিযুক্তদের কবল থেকে তাজ মেম্বারকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে এরপর তাকে (তাজ) নর্থ ইস্ট মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর পরই তাজ উল্লাহ মেম্বার মৃত্যুবরণ করেন।

ঘটনার দিন নিহত তাজ উল্লাহ মেম্বারকে কেউ (আলমগীর, কাশেম, গেদু) কোন মারধর করেন নি বলে দাবি করে ‘মামলার স্বাক্ষী ও ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা’ রামপাশা ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার নাছির উদ্দিন ও ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার শামীম আহমদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর ও মেম্বার ইমাম উদ্দিন’র বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য সেদিন (৩ জুলাই) মেম্বারদের কার্যালয়ে আমরা সালিশ বৈঠকে বসি, ইউপির সভা কক্ষে নয়। এসময় চেয়ারম্যান-মেম্বারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা হয়। তখন চেয়ারম্যানকে কার্যালয়ে রেখে ইমাম উদ্দিনকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ইমাম উদ্দিন মেম্বারকে নিয়ে তাজ উল্লাহ মেম্বার’সহ আমরা (শামীম মেম্বার’সহ) কয়েকজন পরিষদের বাইরে চলে যাই। পরিষদের বাইরে অবস্থিত একটি দোকানে যাওয়ার পর তাজ মেম্বার আমাদেরকে (শামীম, নাছির, ইছাক মেম্বার’সহ) তার (তাজ) অসুস্থতার কথা জানান। এরপর আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

ঘটনার দিন নিহত তাজ উল্লাহ মেম্বারকে কেউ (আলমগীর, কাশেম, গেদু) কোন মারধর করেন নি বলে দাবি করে ‘ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা’ রামপাশা ইউপির মহিলা মেম্বার মিনা বেগম (৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড), রুসনা বেগম (২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড), আছারুন বেগম (১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড), মেম্বার ইছাক আলী (৮নং ওয়ার্ড), আবুল খয়ের (১নং ওয়ার্ড) বলেন, সে দিন (৩ জুলাই) চেয়ারম্যান (আলমগীর) ও মেম্বারের (ইমাম) মধ্যে কথা কাটাকাটির পর উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আমরা (পরিষদের সদস্য/সদস্যা) চেয়ারম্যানকে রুমে বসিয়ে রেখে মেম্বার (ইমাম) রুমের বাইরে বের করে আনি। পরিষদ এলাকায় কোন মারামারির ঘটনা ঘটনা সেদিন (৩ জুলাই) সংগঠিত হয়।

মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্ধ বন্টন, আধিপত্য বিস্তার ও ইমাম উদ্দিন মেম্বারের বিরুদ্ধে ৩ জুলাই পরিষদের সদস্যদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব আনার জের ধরে চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীরের হাতে লাঞ্ছিত হন একই পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইমাম উদ্দিন। তাদের মধ্যকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে মধ্যস্থতা করেন তাজ উল্লাহ মেম্বার। ওই দিন বিকেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি (তাজ) মারা যান। এরপর তার (তাজ) মৃত দেহ ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ময়না তদন্তের পর ৪ জুলাই বিকেলে মরহুমের জানাজার নামাজ শেষে মরদেহ পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাপন করা হয়। ৫ জুলাই বিকেলে নিহতের পুত্র ওয়াসিম আহমদ বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2u97Rlq

July 11, 2017 at 06:20PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top