স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটের অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। সিলেট ৯ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যা দুর্গত কিছু এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করছে। ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা থাকার কারণে অনেক জায়গায় এমন পরিস্থিতিতেও চলছে পাঠদান। তবে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা পেছানো যাবে।
চলমান বন্যায় ঘর বাড়িতে উঠেছে পানি, তলিয়ে গেছে কবলিত এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জরুরি অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হলেও ৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা থাকায় বন্ধ করা হয়নি মাধ্যমিক স্কুল। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট-স্কুল তলিয়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া-আসা করছেন।
বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে। হাওর বেষ্টিত কোন কোন এলাকায় প্রায় এক মাস থেকে লাখো মানুষ বন্যায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে কুশিয়ারা অববাহিকার উপজেলাগুলোর দুর্ভোগে থাকা মানুষের সংকটে সরকারী ত্রাণে পৌছায় কিছুটা স্বস্তি হলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্যার পানি না নামায় শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন ভুক্তভোগীরা।
বন্যা কবলিত এলাকার বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তাঘাট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জের পনাইরচক উচ্চবিদ্যালয়ের একমাত্র যোগাযোগ সড়ক কুশিয়ারা নদীর ডাইক। প্রায় ৩শ মিটার দীর্ঘ রাস্তাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুল খোলা থাকলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কার্যত স্কুলটি বন্ধ রয়েছে। যদিও আজ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নেবার নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরের।
এদিকে একই অবস্থা দেখা যায় বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজারের কিছু স্কুলেও। বালাগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার উচ্চ বিদ্যালয়টি হাওরের অথৈই জলের একখণ্ড ভেসে থাকা ভূমি। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজেরা নৌকা চালিয়ে স্কুলে আসছেন। স্কুলটিতে সাড়ে চারশ শিক্ষার্থী থাকলেও বুধবার গত দুই সপ্তাহে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ৫০ জন। তাও যারা এসেছেন স্কুলে তাদের নিজেদের নৌকা নিয়েই।
বালাগঞ্জ উপজেলা সবচেয়ে অবহেলিত পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মধু জানান, এই গ্রামে প্রায় ৩ মাস ধরে পানিবন্দি মানুষ। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই সাথে শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থাও নাজুক। সব কটি প্রাইমারি স্কুল পানির নিচে। একমাত্র উচ্চবিদ্যালয়টি পানিতে না ডুবলেও নৌকা ছাড়া যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা নেই। সেই সাথে স্কুলের নিজস্ব কোন নৌ-ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। এর জন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন, ওই এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে অনন্ত ৪টি ইঞ্জিন চালিত নৌকার ব্যবস্থা করা দরকার বলে অভিমত তার।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলজার আহমদ খান জানিয়েছেন, আজ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষাণ্মাসিক পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশ রয়েছে। তবে, বন্যায় যে সকল এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং যে সকল স্কুলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব স্কুলের জন্য পরীক্ষার সময় বাড়ানো যেতে পারে। এর জন্য স্থানী শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি পরীক্ষা পেছাতে পারে। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনায় বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাময়িক বন্ধও রাখতে পারবেন।
তবে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে বন্যার জন্য পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রমের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নিতে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে শুক্রবারে ক্লাস, কিংবা পাঠদান ঘণ্টা বাড়ানো যেতে পারে জানান এই কর্মকর্তা।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2sTWhqk
July 07, 2017 at 05:50PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন