বিশেষ প্রতিবেদন : ভারত থেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে আসছে শক্তিশালী বিস্ফোরকের চালান। আর বিস্ফোরকের চালান আসার ঘটনায় রীতিমতো চমকে উঠেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সম্প্রতি ভারত থেকে আসা একটি বিস্ফোরকের চালান সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুর থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব সদস্যরা। এক সময় সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসতো অস্ত্রের চালান। এসব চালান আসার কারণে সিলেটে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে অস্ত্রের চালান আসা বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বশেষ প্রায় ৬ মাস আগে জাফলংয়ের খাসিয়া পল্লীতে ভারত থেকে আসা একটি অস্ত্রের চালান আটক করেছিল পুলিশ। ওই আস্তানা থেকে পুলিশ কয়েকটি অস্ত্রসহ একজনকে গ্রেপ্তারও করেছিল। সিলেট বিভাগের সঙ্গে ভারতের রয়েছে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সীমান্ত। এসব এলাকায় বিজিবি সদস্যরা টহলে রয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ এলাকা এখনো জঙ্গলাকীর্ণ। আবার কোথাও কোথাও রয়েছে নদীপথ। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় রাতের আঁধারে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। জৈন্তাপুর থেকে বিস্ফোরকের চালানসহ দু’জন আটকের পর নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিলেটে ঢুকছে বিস্ফোরকের চালান। সিলেটের ওপারে ভারতে রয়েছে শত শত কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকা। ওই পাহাড়ি এলাকা হচ্ছে পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদে ভরপুর। ভারতীয়রা নিজেদের ব্যবহারের জন্য পাহাড় ধ্বংস করে পাথর ও কয়লা আহরণ করে।
ভারতীয়রা এসব পাহাড় ধ্বংস করতে হাই এক্সপ্লোসিভ বিস্ফোরক ব্যবহার করে। এরপর তারা ওই স্থান থেকে পাথর ও কয়লা সংগ্রহ করে বিক্রি করে। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলোতে ওইসব বিস্ফোরক বেশি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্য রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ডাউকি, গৌহাটি রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকায় জেল ও হাই এক্সপ্লোসিভ ব্যবহারের মাধ্যমে পাথর ও কয়লা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে একটি সিন্ডিকেট ভারতীয়দের কাছ থেকে এসব বিস্ফোরকের চালান কিনে আনছে। আর বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে এগুলো দেশের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এরপর বেশি মূল্যে তারা এই বিস্ফোরকের চালান জঙ্গি কিংবা নাশকতাবাদীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। সম্প্রতি জৈন্তাপুর থেকে যে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় সেগুলো ছিল শক্তিশালী বিস্ফোরক। এগুলো দিয়ে একটি তিন তলা ভবন উড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে সিলেটের র্যাব-৯ এর কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। র্যাব জানায়- সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসা বিস্ফোরকের এরকম একটি চালান গত সোমবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের চতুলবাজার এলাকায় ধরা পড়ে।
ওই চালানে ছিল ৩০টি হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ৩০টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর। বিস্ফোরকের এই চালানটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের লাটুম্বাই কয়লাখনি থেকে এসেছে। গত এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত দিয়ে আসা বিস্ফোরকের আরো একটি চালান আটক করা হয়েছিল। ওই চালানের বিস্ফোরকগুলোও ভারতের কয়লা খনি থেকে এসেছিল বলে জানায় র্যাব। র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানিয়েছেন- ভারত থেকে বিস্ফোরক আসার ব্যাপারে র্যাবের কাছে তথ্য রয়েছে। গত সোমবার জৈন্তাপুর থেকে আটককৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ওই চক্রের কিছু নামও রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই হচ্ছে। তিনি জানান- জব্দকৃত বিস্ফোরক খুবই শক্তিশালী। সিলেটের আতিয়া মহল সহ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় একই আদলের বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। ভারত থেকে যাতে বিস্ফোরক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য র্যাবের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2he4Qvk
July 31, 2017 at 12:27AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন