মুম্বাই, ১৩ জুলাই- তিন খান শাহরুখ, সালমান ও আমিরকে বলিউডের মানি ব্যাক অভিনেতা বলা হয়। তিন দশক ধরে তিন খান শাসন করছেন বক্স অফিস। খান পদবিধারী এই তিন নায়কের ছবিতে বক্স অফিসে ঝড় উঠে যায়। তিন খানের ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে তর্ক চলেতিনজনের মধ্য কে সেরা? এ নিয়ে চলে নানান বিতর্কও। গণমাধ্যমেও নিয়মিত প্রকাশিত হয় প্রতিবেদন। মিস্টার পারফেকশনিস্টখ্যাত আমির খানের সর্বশেষ ছবি দঙ্গল ব্লকবাস্টার হিট। এ ছবি প্রমাণ করেছে, তিন খানের মধ্যে বর্তমানে কিং বা রাজা হচ্ছেন আমির খানই। দর্শকদের কথা বিবেচনা করে ছবি হাতে নেওয়া, ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি, কঠোর পরিশ্রম আর সঙ্গে বিপণন প্রতিভার কারণেই তিন খানের মধ্য আমির খানের মাথায় কিং-এর মুকুট উঠেছে বলে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। হিন্দি ছবির তিন মহাতারকা আমির খান, সালমান খান ও শাহরুখ খান ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যাত্রা শুরু করেন রুপালি পর্দায়। এরপর থেকে খানস অব বলিউড নামে পরিচিত। তাঁদের পেছনে টাকা লগ্নি মানেই ছিল অর্থ উশুল, মারমার কাটকাট ব্যবসা। তাই তাঁদের তিনজনকে ছবিতে নিতে পারলেই ধন্য হয়ে যেতেন অনেক পরিচালক। কিন্তু সময় এখন অনেক বদলে গেছে। তিন খানের মধ্য একজন দিন দিন অপর দুই খানের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমির খানের সর্বশেষ সিনেমা দঙ্গল রেকর্ড ভঙ্গ করেই চলেছে। সেখানে চার বছরে সাল্লুর একটি সিনেমা ফ্লপ করেছে। আর এই সময়ে শাহরুখের কোনো সিনেমাই বড় ধরনের হিট হয়নি। তাই কিং খান-এর মুকুটটা আমিরের মাথাতেই উঠছে। চলচ্চিত্র সমালোচক রমেশ বালা বলেন, তিন খানের বয়স ৫২ বছরের কোঠায়। এই তিন খানের মধ্য আমির অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। শাহরুখ খান দিন দিন পিছিয়ে পড়ছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় দঙ্গল। মুক্তির পরই ভারতীয় সিনেমার বক্স অফিসের অনেক রেকর্ডই ভেঙে দেয়। সিনেমাটি আয় করে অন্য ভারতীয় যেকোনো সিনেমার চেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপি (জুন ২০১৭ পর্যন্ত) আয় করা এ ছবিটি পিতার ইচ্ছাপূরণের সত্য এক কাহিনি অবলম্বনে তৈরি। পিকে তারকা আমির খান কুস্তি কোচ মহাবীর সিংহ ফোগাতের চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি তাঁর মেয়ে গীতা ও ববিতা ফোগাতকে চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগির হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেন। দঙ্গল-এর কাহিনি কাল্পনিক নয়, বরং জীবন থেকে নেওয়া। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের অখ্যাত বালালি গ্রামের ছেলে মহাবীর ফোগাত। মহাবীর কুস্তিগির। জাতীয় পর্যায়ে কুস্তি চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আসর থেকে দেশের হয়ে পদক জিততে পারেননি। কারণ, কোনো আন্তর্জাতিক আসরে তিনি যেতেই পারেননি। চাকরিতে ঢুকতে হয়েছিল। অপূর্ণ সাধ তো তাঁর মেয়েরাই পূর্ণ করতে পারে! পুরুষ হয়ে যা তিনি করতে পারেননি, মেয়ে হয়ে মেয়েদের কুস্তিতে তা তো করতে পারে গীতা ও ববিতা! শুরু হয় তাঁর সাধনা। ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসে ৫৫ কেজি বিভাগে মেয়েদের কুস্তিতে গীতা সোনা জেতেন। দ্বিতীয় কন্যা ববিতাও তত দিনে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন। মহাবীরের স্বপ্ন সার্থক। চোখ মোছার মধ্য দিয়ে সিনেমা শেষ। মহাবীর ফোগাতের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তাঁকে ২০ কিলো ওজন বাড়াতে হয়েছিল। শিখতে হয়েছিল কুস্তির মারপ্যাঁচ। ছবি মুক্তির পর দেখা গেল পরিশ্রম সার্থক। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমির খান অভিনীত পিকে ব্যাপকভাবে দর্শক নন্দিত হয়। কমেডি ধাঁচের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিনির্ভর সিনেমাটি বলিউডের অন্যতম সেরা সফল ছবি হিসেবে স্থান করে নেয়। এ ছবিতে ভারতে যে ধর্মীয় কুসংস্কার রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৯ সালে থ্রি ইডিয়টস সুপার ডুপার হিট। চিন্তাভাবনা ও দর্শকদের কথা বিবেচনা করে ছবি হাতে নেন আমির খান। এ ব্যাপারটি উল্লেখ করে ভারতীয় সিনেমা পরিবেশক অক্ষয় রথি বলেন, আমির খান এমন এক ব্যক্তি, যিনি ভারতীয় দর্শকদের জন্য প্রাসঙ্গিক চলচ্চিত্র নির্বাচনে অনেক চিন্তা ও চেষ্টা করেন। খুব কম অভিনেতাই আছেন, যাঁরা বাস্তবে এমন কাজ করেন। রথি বলেন, প্রতি দুই বছরে আমিরের মুক্তি পায় একটি করে সিনেমা। অন্যদিকে সালমান ও শাহরুখের প্রতিবছর গড়ে দুটি করে সিনেমা মুক্তি পায়। কেন আমির এগিয়েতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রথি বলেন, আমির খান দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক। তিনি শাহরুখ বা সালমানের মতো অনেক ছবিতে অভিনয় করেন না। কয়েক বছর ধরে প্রতি ঈদে সালমানের ছবি মুক্তি পায়। সাধারণত ঈদের ছুটিতে মুক্তি পাওয়া সালমানের ছবি ব্লকবাস্টার হিট হয়। কিন্তু সর্বশেষ ঈদে মুক্তি পাওয়া টিউবলাইট ফ্লপ হয়েছে। চলচ্চিত্র সমালোচক রমেশ বালা বলেন, ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া চেন্নাই এক্সপ্রেস ছাড়া সাম্প্রতিক বছরে (রইস, হ্যাপি নিউ ইয়ারও ফ্লপ) শাহরুখ খানের বড় কোনো হিট ছবি নেই। ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রগুলোর সঙ্গে রোমান্স, অ্যাকশন এবং নাটকীয়তা ষোলোকলা পূর্ণ না হওয়ায় বলিউড বাদশাহ শাহরুখের ছবিগুলো বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছে। আমির খানের ব্যাপারে রথি বলেন, মানুষ বিশ্বাস করে যে আমির যখন একটি ছবিতে থাকেন, তখন নতুন কিছু হবে, একটা ভিন্ন কিছু হবে। রথি বলেন, দঙ্গল আয়ের দিক থেকে চীনের বাজারে রেকর্ড ভেঙেছে। আমির তার ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এর ফলে তিনি ভারতের বড় তারকা হয়ে উঠেছেন।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ugL3R8
July 13, 2017 at 03:37PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন