আইপিএলের নাম স্বত্ত্ব যে বিপুল টাকায় বিক্রি হল, সেটা থেকে আরও একবার প্রমাণিত হল, ক্রিকেট বিশ্বের সবথেকে বড় লিগের আকর্ষণ এখনও সেই একইরকম। যেসব সংস্থা ব্যবসা বাড়াতে চায়, যারা টাকা ঢালতে প্রস্তুত, তাদের কাছে আইপিএলের আকর্ষণ আগের মতোই। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর আইপিএল থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল একটা পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থা। তারপর থেকে গত দুই বছর ধরে ভিভো টাইটেল স্পনসর। এবার তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে যারা ছিল, তাদের থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বেশি দিয়েছে ভিভো। আইপিএল নিয়ে ভারতীয় সাবেক কিংবদন্তী সুনীল গাভাস্কার তার এক সাক্ষাতকারে বলেন, আইপিএল নিয়েও নতুন উৎসব করা হোক। কিন্তু আইপিএলকেও সমালোচনা শুনতে হয়। এই সমালোচকদের অধিকাংশই অবশ্য আইপিএলের মধ্যে কোনও ভুল খুঁজে পান না। শুধু গ্ল্যামারের ঝলকানিটাই ওঁদের অপছন্দ। আইপিএলে যে ক্রিকেটটা খেলা হয়, সেটা অত্যন্ত উচ্চ মানের। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ে না। কোনও সন্দেহ নেই, টেস্টের মতো এখানে ক্রিকেটারদের গুনগত মানের সেই পরীক্ষাটা হয় না। তবু প্রবল চাপ থাকে। যখন প্রথম একদিনের ম্যাচ এল, তখনও তার সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল, তার ফলে টেস্টে ক্রিকেটই আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে। ঠিক তেমনই টি২০ ক্রিকেটও একদিনের ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করেছে। একদিনের ক্রিকেটের জন্য টেস্ট ক্রিকেটেও যেরকম এখন অনেক বেশি শট খেলা হয়, তেমনি টি২০ ক্রিকেটও একদিনের ক্রিকেটকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। এখন একদিনের ক্রিকেটে অহরহ ৩০০র ওপর রান হচ্ছে। বোলাররা হয়ত এখন বেশি মার খাচ্ছে, কিন্তু টি২০ ক্রিকেট আসার পর থেকে বলে বৈচিত্র্যও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ক্রিকেট এখন আগের থেকে অনেক প্রাণবন্ত। এখন আবহাওয়া খারাপ না থাকলে টেস্টে ড্র দেখা যায় না। শুধু তাই নয়, প্রচুর ম্যাচ চারদিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে, টেস্ট ম্যাচ চারদিনের করে দিলে ভাল হবে। তখন কিন্তু ড্রয়ের সংখ্যা আবার বেড়ে যাবে। আইপিএলের কথায় আসি। গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার পর বিসিসিআইএর সামনে এবার কিছু ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে যেহেতু এখন আর কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে হয় না, তাই তাদের কাছে এখন দল তৈরি করার জন্য বেশি টাকা। যদিও আগের মতো প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজিরই দল গঠনের ক্ষেত্রে টাকা খরচ করার একটা ঊর্ধ্বসীমা থাকবে, কিন্তু বাস্তবে সেটা কতটা মানা হবে? বিশেষ ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্সের জন্য ক্রিকেটারদের বোনাস দেওয়া হয়, ছুটি কাটানোর বিভিন্ন প্যাকেজ থাকে, দামী উপহার থাকে, কেনাকাটার জন্য টাকা দেওয়া হয় এগুলোর ফলে ওই ঊর্ধ্বসীমার আর কোনও হিসেবনিকেস থাকে না। আইসিসি গভর্নিং কাউন্সিলের এই জায়গায় কঠোর হওয়া উচিত। রনজি ক্রিকেটাররা সারা বছর ধরে খেলে কম টাকা পাচ্ছে, আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেও আইপিএলে ১৬ দিন খেলে কিছু ক্রিকেটার প্রচুর টাকা পাচ্ছে। এটা নিয়েও গভর্নিং কাউন্সিলের ভাবা উচিত। এই বিশাল বৈষম্যটা দূর করা উচিত, যাতে রনজি ক্রিকেটাররা নিজেদের অনাথ না ভাবে। ভারতের এবং বিদেশের যেসব ক্রিকেটার আইপিএলে খেলছে, অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেনি, তারা যেন রনজি ক্রিকেটারদের থেকে বেশি টাকা না পায়। এতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর খরচও কমবে। সাপোর্ট স্টাফদের দলে ভারতীয়দের প্রাধান্য দিলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো অনেক টাকা বাঁচাতে পারবে। যদি কোচ হওয়ার জন্য কোনও যোগ্য ভারতীয় না পাওয়া যায়, তাহলে অন্তত সহকারী কোচের পদগুলো ভারতীয়দের দেওয়া উচিত। এর ফলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সে কোচকে সাহায্য করতে পারবে। এতে বিদেশী কোচের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় কোচেরাও তৈরি হবে, অনেক কিছু শিখবে। এর ফলে ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেটেরই লাভ হবে। বোর্ডের এ ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে জোর দেওয়া উচিত। যতই হোক, এটা তো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। নাকি? অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, বা দক্ষিণ আফ্রিকার র্যাম স্ল্যামে কিন্তু কোনও বিদেশী কোচ নেই। ভারত যে এক নম্বরে উঠতে পেরেছিল, সেটা আমাদের ক্রিকেটাররা শুধু দক্ষ বলেই নয়, ক্রিকেটটা বুদ্ধি করে খেলে বলেও। তাহলে যেখানে আমরা সদ্য অবসর নেওয়া বিদেশী ক্রিকেটারদের প্রথম কোচিংয়ের সুযোগ করে দিচ্ছি আইপিএলে, সেখানে আমাদের ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়া হবে না কেন? আইপিএল এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পোর্টিং ব্র্যান্ড। এটা বিশ্বের সবথেকে বড় এবং সেরা ক্রিকেট লিগ। ভারতের স্বাধীনতার ৭০ বছরে একই সঙ্গে আইপিএল নিয়েও উৎসব করা হোক।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2sDJjgb
July 03, 2017 at 08:18PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top