মুম্বাই, ১১ জুলাই- গ্লোবাল প্রেজেন্সে অনেকদিনই বলিউডের যে কোনও তারকাকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। দিনে দিনে খান নবাবদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্যারিস ফ্যাশন উইকে সকলের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছেন রীতিমতো। শুধু সুপার ফ্যাশনেবল পোশাকেই নয়। স্বয়ং জর্জিও আরমানির সঙ্গে ব্যাকস্টেজে ছবি তুলেও সাড়া ফেলে দিয়েছেন। কদিন আগেই ঘুরে এলেন নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক। তার পরেই এন্ট্রি পেয়ে গেলেন প্যারিস ফ্যাশন উইকেও। হেন কোনও আন্তর্জাতিক গ্ল্যামার সার্কল নেই, যেখানে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া পা রাখেননি। হেন কোনও আমেরিকান প্রাইম টাইম টিভি শো নেই, যেখানে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া তাবড় সঞ্চালকদের কথার জাদুতে মুগ্ধ করেন না। হেন কোনও সোশ্যাল মিডিয়া সাইট নেই, যেখানে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া প্রতি এক সপ্তাহ অন্তর ট্রেন্ডিং হন না! নরেন্দ্র মোদীর সামনে কী পোশাক পরেছেন কিংবা লিপ জব করিয়েছেন কি না তাই নিয়ে ট্রেন্ড চললেও বা ক্ষতি কী! চোরা-মন্ত্র... কিন্তু এই সাফল্য নিয়ে তাঁকে কখনও জিগ্যেস করলে তিনি বলবেন, আমার কোনও স্ট্র্যা়টেজি নেই এর জন্য। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ম্যান প্রোপোজেস, গ়ড ডিসপোজেস! তাহলে কি গোটাটাই ইমপাল্স? রাইট প্লেস অ্যাট দ্য রাইট টাইমএর কপালজোর? একেবারেই না। একটু পিছনে গিয়ে, প্রিয়ঙ্কার প্রথম ম্যাসিভ পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্সটা মনে করতে হবে। অস্কার ২০১৬। জুহের মুরাদের গাউন আর ৫০ ক্যারাটের হিরের গয়না পরে তিনি যে রেড কার্পেটে হাঁটলেন, তাতে সবকটা বেস্ট ড্রেসড লিস্টে তাঁর নাম উঠে গেল। অঙ্কটা সোজাই। তবু প্রিয়ঙ্কা মল্লিকা শেরাওয়াত নন! শুধু ট্যাবলয়েডে ছবি ছাপাতে চান না। তাই রীতিমতো অস্কার প্রেজেন্টার হয়েই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অথচ তখনও পর্যন্ত ঝুলিতে কোয়ান্টিকো ছাড়া কোনও সেলিং পয়েন্ট নেই। তা-ও কোয়ান্টিকোর ওই সময়ের রেটিং দেখলে কেউ বলবে না, ওই সিরিজের অভিনেত্রী অস্কারের মঞ্চে জায়গা পেতে পারেন। কিন্তু অভিনেত্রীর পাখির চোখে লক্ষ্য স্থির ছিল। পরে অনেক জায়গায় প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, আফটার পার্টি সার্কিটে নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলাটাই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল। তাই তার আগে ওরকম হাই প্রোফাইল মঞ্চ উপস্থিতিতে তাঁকে রাজি করিয়েছিলেন তাঁর এজেন্ট। পার্টিতে আইস ব্রেকার হিসেবে সেটাই যে কাজ করবে, বুঝেছিলেন প্রিয়ঙ্কা নিজেও। এবং দেখুন, কত সহজ হিসেব! তার পরেই সারা পৃথিবীর মিডিয়া ছেয়ে গেল একটাই খবরে বেওয়াচএর রিবুটে ডোয়েন জনসনের সঙ্গে কাজ করছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া! লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্ম হল নতুন গ্লোবাল তারকার। স্টার্টিং পয়েন্ট হলিউডে প্রিয়ঙ্কার জনপ্রিয়তা কিন্তু বলিউডের সঙ্গে সমান্তরালই। মিস ওয়ার্ল্ডের ২০০০ সালের বিজয়ী প্রিয়ঙ্কার আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরু হতে পারত অনেক আগেই। কিন্তু তিনি বেছে নিলেন অভিনয়। সেটা যে এফর্টলেসলি করতে পারেন, বলিউড প্রমাণও করেছে। কিন্তু অনেক পরে। প্রিয়ঙ্কা প্রথমদিকে যেরকম চরিত্র পেতেন, সেটা তাঁর প্রতিভার প্রতি সুবিচার করেনি কখনওই। ধীরে ধীরে ফ্যাশন, সাত খুন মাফ, বরফি করে বিগ লিগে এসেছিলেন তিনি। লস অ্যাঞ্জেলেসেও তাঁর কেরিয়ার-যজ্ঞ খানিকটা সেই পথেই। প্রথমে পিট বুল, উইল আই অ্যামদের সঙ্গে মিউজিক সিঙ্গল্স দিয়ে শুরু করেছিলেন। ভেবেছিলেন, সেটাই লঞ্চ প্যাড হবে তাঁর। কিন্তু অত যান্ত্রিক মিউজিক প্রোডাকশন হলিউডের তাবড় মিউজিক প্রোডিউসারদের ভাল লাগেনি নেহাত। তাই রেকর্ডিং কনট্র্যাক্ট সাইন করা হয়নি তাঁর কোনও। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা লক্ষ্মী মেয়ের মতো যেটা ভাল পারেন, সেটাতেই ফিরে এলেন। এদিকে ২০১৫ সালে পদ্মশ্রীটাও পেয়ে গেলেন। নিজেকে মার্কেট-যোগ্য করতে পিছোন না কখনও প্রিয়ঙ্কা। কী চান, সেটা খুব ভাল করে জানেন তিনি। সেই অনুযায়ী স্পষ্ট গেম প্ল্যানও বানিয়ে ফেলেন। এবিসির (আমেরিকান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি, কোয়ান্টিকোর প্রযোজনা সংস্থা) সঙ্গে এমনভাবেই তিনি চুক্তি পাকা করেছিলেন, যাতে নিজেকে মেনস্ট্রিম আমেরিকান বিনোদনের অংশ করে তোলা যায়। আমেরিকার প্রতিটা বড় শহরে বিলবোর্ড পড়ে গিয়েছিল প্রিয়ঙ্কা, থু়ড়ি কোয়ান্টিকোর নামে। অবাক হয়েছিলেন অনেকেই, যে এত বড় এনটারটেনমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রিয়ঙ্কার মতো এত নতুন মুখে বিনিয়োগ করছেই বা কেন! একটু ভাবলে বোঝা যাবে, ওই সময়ে এবিসির আর যে কটা শো চলছিল, তার বেশ কয়েকটাই ক্রস-কালচারাল কমপ্লেক্সিটি দেখিয়েছে, যেমন হাউ টু গেট অ্যাওয়ে উইথ আ মার্ডার কিংবা স্ক্যান্ডাল। যদিও প্রশ্নটা শুনে প্রিয়ঙ্কা বলেছিলেন, আমি ওদের একটাই কথা বলেছিলাম। ভারতীয়রা যে পরিমাণ আমেরিকান টেলিভিশন দেখে, আমেরিকানরা ততটা নয়! আমি অভিনয় করলে যে আরও ভারতীয় শোটা দেখবেন, সেটা ওরা নিজেদের রিসার্চ করেই বুঝে গিয়েছিল! এই কনফিডেন্সটাই তো প্রিয়ঙ্কা চোপড়া! না হলে কোয়ান্টিকো কিংবা বেওয়াচ ভাল ফল না করতে পারলেও তাঁর পরের হলি-ছবি আ কিড লাইক জেক এমন সেট হয়ে যায়! ওয়ান ইন্ডিয়ান যতই দেশের ভক্তরা সমালোচনা করুক, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া নিজের ইমেজটা বরাবরই প্রো-ইন্ডিয়া রেখেছেন বিদেশে। যত কটা টেলি-শোএ তিনি আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছেন, তার সবখানেই ভারত সম্পর্কে সব স্টিরিওটাইপের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। কারও সঙ্গে ঝগড়াও করেননি। কতগুলো সহজ কথা বলেছেন এমন মজার ছলে, যে ভদ্রমহিলাকে রীতিমতো উইটি বলা চলে। জিমি কিমেল তাঁর নিজের শোএ প্রিয়ঙ্কাকে জিগ্যেস করেছিলেন বলিউডে দুঃখের ছবিতেও কেন এত নাচ-গান থাকে। প্রিয়ঙ্কা তার উত্তরে বলেছিলেন, গান-নাচের একটা স্বাভাবিক আসা-যাওয়া থাকে বলিউড ছবিতে। গল্পের সঙ্গে তার একটা সঙ্গতি থাকে। যেমন লা লা ল্যান্ড। যে ছবিটা অস্কার মনোনীত। হলিউডের তো উচিত আরও এরকম ছবি বানানো! জিমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য! আবার চেলসি হ্যান্ডলারের টক শোয়েও তাঁকে সঞ্চালক জিগ্যেস করেছিলেন, ১২ বছর বয়সে তিনি যখন প্রথম আমেরিকায় এসেছিলেন, তিনি ইংরেজি জানতেন কি না। প্রিয়ঙ্কা উত্তর দিয়েছিলেন, ভারতীয়দের ১০ শতাংশ ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্টলি কথা বলেন। যে সংখ্যাটা গোটা পৃথিবীর ইংরেজি-বলা জনসংখ্যার চেয়ে বেশি! আসলে প্রিয়ঙ্কা বিদেশের মাটিতেও নিজের দেশি গার্ল স্পিরিটটা ধরে রেখেছেন আগাগোড়া। কারণ তিনি জানেন, তাঁর এথনিক ব্যাকগ্রাউন্ডটাকেই সেলিব্রেট করবে বিদেশ। এআর/১৭:৩৫/১১ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2sL62Yn
July 11, 2017 at 11:35PM
11 Jul 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top