সুরমা টাইমস ডেস্ক: ফেসবুকে নারী ও নারীদেহ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে ফেঁসে গেছেন শাহ ফয়ছল জামাল নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দেন। তার একের পর এক আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার অনেকে। সর্বশেষ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন এক নারী। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি এখন কারাগারে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, চল্লিশোর্ধ শাহ ফয়ছল জামাল দীর্ঘদিন থেকেই ফেসবুক ব্যবহার করছেন। মোবাইল ফোনে ফেসবুক ব্যবহার করে নিজের মতামত ব্যক্ত করে নানা মন্তব্য করেন তিনি। প্রায়ই কবিতা লেখারও চেষ্টা করেন। এরকম নানা লেখা রয়েছে তার ফেসবুকের টাইমলাইনে। এরমধ্যে নারীদেহ ও নারীদের পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য রয়েছে তার। এসব বিষয় নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকে। সমালোচনায় অংশ নেন অনেকেই। তার মধ্যে রয়েছেন একজন সামাজিক সংগঠক ও একটি এফএম রেডিও’র সাবেককর্মী প্রীতি ওয়ারেছা।
এ বিষয়ে প্রীতি ওয়ারেছা জানান, গত ৩রা জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় ঘটনার সূত্রপাত মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের বাসায় বসে মোবাইলফোনে ফেসবুক লগইন করেই চমকে উঠেন তিনি। জেসমিন চৌধুরী নামে ওয়ারেছার এক বান্ধবীর পোস্ট। যেখানে নারীদের পোশাক নিয়ে শাহ ফয়ছল জামালের চার লাইনের আপত্তিকর লেখা ও এক তরুণীর ছবি রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রীতি ওয়ারেছা বলেন, আমার ওই বান্ধবী স্ক্রিন শট দিয়ে লিখেছে ‘মেয়েদের প্রতি অপমানজনক এবং অশ্লীল পোস্টের জন্য আপনাকে আনফ্রেন্ড করছি’। আমি তাতে মন্তব্য করি যে, এই লোক আবার লেখালেখি করে…। এই মন্তব্যের কিছু সময়ের মধ্যেই ৬টা ১৭ মিনিটে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে ওয়ারেছাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠান শাহ ফয়ছল জামাল। ওয়ারেছা অভিযোগ করেছেন, শাহ ফয়ছল জামালের ভাষা প্রয়োগে মানসিকভাবে আঘাত পান তিনি।
সেখানে শাহ ফয়ছল লিখেছেন, ‘কাছে এসো, তোমার … খাই। তোমারও চুলকানি রোগ আছে। চিরতরে সেরে যাবে আসলে আমার কাছে।’ তখন তার ঠিকানা সংগ্রহ করার জন্য প্রীতি ওয়ারেছা লিখেন, ‘ওকে আসছি। ঠিকানা দেন।’
শাহ ফয়ছল জামাল লিখে, ‘কবে আসবে?’ ওয়ারেছা লিখেন, ‘বলেছিই তো ঠিকানা দেন। তারপর সিলেট মীরের ময়দানের একটি ভুয়া ঠিকানা দেন শাহ ফয়ছল। তখন ওয়ারেছা লিখেন, ‘ওকে ভাইজান। ভালো থাকুন। অপেক্ষা করুন।’ তখন শাহ ফয়ছল প্রীতি ওয়ারেছাকে আরেকটি অশ্লীল বাক্য লিখেন।
এসব লেখার স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট দেন ওয়ারেছা। ফেসবুকের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড হিসেবে এতেও আপত্তিকর মন্তব্য করে শাহ ফয়ছল। এই পোস্ট অন্য যারা ফয়ছলের লেখার বিরোধিতা করে মন্তব্য করেছেন তাদেরও ছাড় দেননি তিনি। অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে আক্রমণ করছিলেন তাদের। ঘটনা এভাবেই এগিয়ে যায়। বাধ্য হয়েই পরদিন ৪ঠা জুলাই ওয়ারেছা মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরবর্তীতে ৮ই জুলাই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন তিনি। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। ফয়ছলকে গ্রেপ্তারের জন্য তৎপরতা শুরু করে সিটিটিসি। ১৫ই জুলাই সিটিটিসি’র সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম অবস্থান নেয় সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। সেখানে নিজ বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারের পর অপরাধ স্বীকার করেছে শাহ জামাল ফয়ছল। সে নারীদের নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিতো কবিতার মতো করে। বিভিন্ন নারীর ইনবক্সে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতো। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে। এজন্য ১৮ই জুলাই পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তারকৃত শাহ ফয়ছল জামাল সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের বিবিদইল গ্রামের কুদরত আলীর ছেলে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2uNsGTC
July 31, 2017 at 07:50PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন