ঢাকা::
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তার জগতে আলোচিত নাম ফরহাদ মজহার।
তাকে নিয়ে আলোচনা যেমন আছে তেমনি বিতর্কও কম নয়।
তার ভক্ত যেমন আছে তেমনি সমালোচকও অনেক।
নোয়াখালিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরহাদ মজহার পড়াশুনা করেছেন ফার্মেসি এবং কেমিস্ট্রিতে।
পড়াশুনা করতে সত্তরের দশকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
তখন লেখক-শিল্পীদের নিয়ে গঠিত হয় ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ নামে একটি সংগঠনও গড়ে উঠে।
১৯৭০ থেকে ১৯৯০’র দশক পর্যন্ত ফরহাদ মজহার একজন মার্কসবাদী এবং ‘কড়া বামপন্থী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
একসময় মার্ক্সবাদী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সমালোচকরা বলেন ‘কড়া ইসলামপন্থার’ দিকেও তাঁর ঝোঁক রয়েছে।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, তিনি সমালোচকদের পছন্দ করেন।
“আমি খুব এনজয় করি। আমি উপভোগ করি। আমাকে যারা নিন্দা করেন, গালি দেন আমি তাদের উপভোগ করি। কারণ এর মাধ্যমে সমাজটা কোথায় আছে এবং তার চিন্তার স্তর কোথায় আছে সেটা আমি ধরতে পারি,” বলছিলেন ফরহাদ মজহার।
কিন্তু মি: মজহার নিজেকে এখনো ‘কড়া মার্ক্সবাদী’ হিসেবে দাবি করেন।
মি: মজহার বলেন, “ইসলাম এবং মার্কস সম্পর্কে যাদের ধারণা দুর্বল তারাই এ কথাগুলো বলেন।…. মার্কসের দিক থেকে এমন কোন অবস্থান নেই যে আপনি ধর্ম বিরোধী বা মার্কস নাস্তিক- এগুলো খুবই প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা।”
কিন্তু ফরহাদ মজহারের রাজনৈতিক দর্শন কী? তিনি কি ডানপন্থী? নাকি বামপন্থী?
তিনি মনে করেন, তাকে কোন ছকে বাঁধার চিন্তাটা ঠিক নয়।
“আমি শ্রেণী রাজনীতি করি। আবার কেউ জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করে। হঠাৎ করে সে যদি দেখে আমি তার জাতীয়তাবাদকে সমালোচনা করছি, তখন সে থতমত খেয়ে যায়। আপনি নিপীড়িত শ্রেণির পক্ষে কী-না সেটাই হচ্ছে মূলত প্রশ্ন। ”
মি: মজহারের চরিত্রের একটি ব্যতিক্রমী দিক আছে। কোন বিষয় নিয়ে যখন একটা জনমত গড়ে উঠে তখন সে বিষয়ে ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তিনি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২০১৩ সালে শাহবাগে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলন। শাহবাগ আন্দোলনের কড়া সমালোচক ছিলেন মি: মজহার। কেন তার এই অবস্থান?
মি: মজহারের উত্তর ছিল, “আমি তো পপুলিস্ট না। পপুলিজমের কঠোর সমালোচনা করেছেন লেলিন। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি যাদের সমালোচনা করছেন, সেটা সঠিক সমালোচনা কী-না।”
“শাহবাগে যারা নিজেদের তরুণ প্রজন্ম বলছে তারাতো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। যারা কারখানায় কাজ করে, যারা গ্রামে কাজ করে, যারা বিদেশে শ্রমিক আকারে কাজ করে- এ বিশাল তরুণদের অস্বীকার করার ধারণাটাই নিহিত রয়েছে প্রজন্ম ধারণাটার মধ্যে। ফলে আমাকে এর সমালোচনা করতেই হয়েছে।”
ফরহাদ মজহারের সমালোচকরা মনে করেন, তিনি শাহবাগ আন্দোলনকে এমনভাবে সমালোচনা করেছেন যার অর্থ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়া।
মি: মজহার অবশ্য এ ধরনের যুক্তি মানতে নারাজ।
“আমরাতো বারবারই বলেছি যুদ্ধাপরাধের বিষয়টা আমাদের বাংলাদেশের একটা ক্ষত। এ বিচারটা আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। তারা যে ফাঁসি-ফাঁসি কথাটা বললেন, তারা বিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং ইনসাফের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।”
মি: মজহার মনে করেন, কোন মানবাধিকার কর্মী ফাঁসির দাবি সমর্থন করতে পারে না।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2sHIcMt
July 04, 2017 at 03:59PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন