শিলিগুড়ি, ০১ আগষ্ট- দার্জিলিংয়ের প্রবেশমুখ পঞ্চনদীর সেতু। সেখানে আজ মঙ্গলবার সকালে একটি গাড়ি নিয়ে ঢুকতে গেলে বাধা আসে। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ রায় এই প্রতিবেদককে বললেন, আপনি গাড়ি নিয়ে দার্জিলিং যেতে পারবেন না। কারণ, যেখান থেকে শুরু পাহাড়, সেই সুকনা যাওয়ার পর ওখানে জড়ো হয়ে থাকা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থকেরা হামলা চালাতে পারে গাড়ির ওপর। এই পঞ্চনদীর সেতু থেকে শুরু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের জিটিএ এলাকা। এই এলাকাটি আবার কার্শিয়াং জেলার অন্তর্ভুক্ত। ব্যবসায়ী আরও বললেন, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঢুকতে গেলে হয়তো আপত্তি নেই। কিন্তু গাড়ির চালক কি ঝুঁকি নেবেন? এ সময় গাড়ির চালক স্যামুয়েল বিশ্বাস বললেন, তাঁর পক্ষে গাড়ি নিয়ে পাহাড়ে ঢোকা অসম্ভব। তিনি যাবেন না। কারণ বিমা কোম্পানি আগেই জানিয়ে দিয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর বা ভস্মীভূত হলে তার দায় নেবে না কোম্পানি। চালকের এ আপত্তিতে শেষতক পঞ্চনদীর সেতু থেকেই ফিরতে হয়। এভাবে এখনো অবরুদ্ধ হয়ে আছে দার্জিলিং। গত ১২ জুন থেকে এখানে চলছে অনির্দিষ্টকালের বনধ। বনধ শুরু হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ঘোষণাকে ঘিরে। মমতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের সব বিদ্যালয়ে বাংলা পড়তে হবে। এরপরই পাহাড়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা মমতার এই ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবিতে শুরু করে আন্দোলন। পরবর্তী সময় এই আন্দোলন পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের আন্দোলনে পরিণত হয়। সেই আন্দোলন এখনো চলছে। এই অনির্দিষ্টকালের বনধ আজ মঙ্গলবার ৫১ দিনে পড়েছে। আজ পথে দেখা হয় শিলিগুড়ির বাজাজ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ফিন্যান্স ম্যানেজার ইন্দ্রনীল গুপ্তের সঙ্গে। তিনি বললেন, এখন কিন্তু এই আন্দোলন অস্তিত্বের লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। রণে ভঙ্গ দিতে পারছে না একদিকে রাজ্য সরকার, অন্যদিকে জনমুক্তি মোর্চা। এই আন্দোলনে দার্জিলিংয়ের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়েছে। মানুষের খাবার নেই। শুনেছি এখন নেপাল ও চীন সীমান্ত দিয়ে গোপন পথে মোর্চার নেতারা রাতের আঁধারে খাদ্য আনছেন দার্জিলিংয়ে। স্থানীয় লোকজনের অনেকেই বলছেন, আন্দোলন আর মোর্চার নেতাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তাঁদের এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন নারী ও যুব মোর্চার নেতা-কর্মীরা। এই নেতারা মোর্চার নেতা বিমল গুরুংকে জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না। এর ফলে এখন দেখা দিয়েছে অস্তিত্বের লড়াই। কেন্দ্র ও রাজ্য এক হলে বন্ধ করে দিতে পারে এই আন্দোলন। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য ভিন্ন অবস্থানে অবস্থান করায় এখন লড়াই ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারছেন না জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারও এগিয়ে আসছে না এই লড়াই থামাতে। এদিকে বিভিন্ন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীরা ফিরে গেছে। এখন জানা গেছে, বহু ছাত্রছাত্রী ইতিমধ্যে ভর্তিও হয়েছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রচুর ছাত্রছাত্রীও রয়েছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বলেছেন, পাহাড় এবার ছন্দে ফিরুক। তিনি পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, পাহাড় বাংলার অংশ। পাহাড় বাংলারই থাকবে। তাই তিনি পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে সব দলের প্রতি আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রীর সেই আহ্বানে কতটুকু সাড়া মিলবে, তা এখনো নিশ্চিত না। তাই পাহাড় এখনো ছন্দহীন। আর/১০:১৪/০১ আগষ্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wiG2VH
August 02, 2017 at 06:02AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন