রূপকথার সমাপ্তি তাহলে বিয়োগান্তও হয়! নইলে জীবনের শেষ ১০০ মিটারে কেন হেরে যাবেন উসাইন বোল্ট! প্রায় এক দশক ট্র্যাকে নেমেছেন আর লিখেছেন রূপকথার নতুন নতুন অধ্যায়। সেটিও অনিশ্চয়তা শব্দটাকে লম্বা ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়ে। দৌড় শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানত, কী হতে যাচ্ছেবোল্ট দৌড়াবেন, জিতবেন, উৎসব করবেন। সেই উৎসবের অংশ করে নেবেন পুরো স্টেডিয়ামকে। শেষ অংশটা এদিনও সত্যি। পরশু রাতে লন্ডনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার শেষ হওয়ার পরের দৃশ্যগুলো সেই বরাবরের মতোই। পুরো স্টেডিয়াম ঘুরে বেড়ালেন বোল্ট। গ্যালারির কাছে গিয়ে হাত মেলালেন। দর্শকের মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে নিজেই তুলে দিলেন সেলফি। সমাপ্তিরেখার ওপর উবু হয়ে বসে প্রণতি জানালেন। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের জগৎ ছেড়ে চিরদিনের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার আগে তাঁর নামের সমার্থক হয়ে যাওয়া সেই বিখ্যাত উদ্যাপনও আবার দেখল বিশ্ব। দুই হাতে কাল্পনিক তির ছুড়লেন শূন্যে! উসাইন বোল্ট উসাইন বোল্ট চিৎকারে তখন ফেটে পড়ছে স্টেডিয়াম। ইতিহাসে এই প্রথম ব্রোঞ্জজয়ী কাউকে ঘিরে দর্শকের এমন উন্মাদনা! হ্যাঁ, ব্রোঞ্জই! জীবনের শেষ ১০০ মিটার বোল্ট প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিজ্ঞতার সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিল বোল্টকে। জ্যামাইকান কিংবদন্তি তো আসলেই ভুলে গিয়েছিলেন, অলিম্পিক ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকের রং সোনালি ছাড়া অন্য কিছুও হয়! ২০০৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার ও রিলেতে রুপা জিতেছিলেন, তবে তখনো তো তিনি বোল্ট হননি। তা হওয়ার পর থেকে বোল্টের সঙ্গে দৌড়ানো মানেই তো দ্বিতীয় হওয়ার লড়াই! ২০১১ সালে দেগুতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে গিয়েছিলেন। ওই একবারই ব্যতিক্রম। নইলে ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে দুনিয়া কাঁপানো আবির্ভাবের পর অলিম্পিক আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যতবার ট্র্যাকে নেমেছেন, ততবারই সোনা। এবারও যে তা-ই হতে যাচ্ছে, তা নিয়েও নিঃসংশয়ই ছিলেন। লন্ডনে এসে সংবাদ সম্মেলনে নিজেই ঠিক করে দিয়েছিলেন তাঁর শেষ ১০০ মিটার দৌড়ের পর সংবাদ শিরোনামঅপরাজেয়! অপ্রতিরোধ্য! এই প্রথম নিজেকে নিয়ে বোল্টের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হলো না। তাঁর খেলাটাই ছিল সময় নিয়ে। সেই সময়ই কি নিষ্ঠুর থাবা বসিয়ে অতিমানব থেকে সাধারণ মানুষ বানিয়ে দিল বোল্টকে! কিন্তু শুধু সময়কেই কীভাবে দাঁড় করাবেন কাঠগড়ায়! যাঁর কাছে হারলেন, সেই জাস্টিন গ্যাটলিন তো বোল্টের চেয়েও বছর পাঁচেকের বড়। সেই গ্যাটলিন, কলঙ্কিত অতীতের কারণে সোনা জয়ের পরও যাঁকে শুনতে হয়েছে দর্শকের দুয়োধ্বনি। বোল্টের শেষ ১০০ মিটারটা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত পরাজয়ের সাক্ষীই হয়ে থাকল না, হকচকিত করে দিল অ্যাথলেটিকস-বিশ্বকেও। বোল্ট-মহিমা এমন উজ্জ্বল করে তোলায় জয়ের পর জয়, দর্শক মাতানো বিনোদনের সঙ্গে তাঁর নিষ্কলুষ চরিত্রেরও বড় ভূমিকা। ব্যক্তিগত শেষ ইভেন্ট থেকে সেই বোল্টকেই কিনা বিদায় নিতে হলো ডোপ পাপে দুবার নিষিদ্ধ হওয়া একজনের কাছে হেরে! অনেকে এমন প্রশ্নও তুলছেন, এই যে ৩৫ বছর বয়সেও গ্যাটলিন এমন দুর্দান্ত, তিন বছর পর টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন পর্যন্ত দেখছেন, এর পেছনে ডোপিংয়ের কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নেই তো! ডোপিং-বিষে জর্জরিত অ্যাথলেটিকস এমন চ্যাম্পিয়ন চায়নি। বোল্ট অবশ্য এসব নিয়ে না ভেবে দেখিয়ে দিলেন, তিনি শুধু জয়ই উদ্যাপন করতে জানেন না, পরাজয় মেনে নেওয়ার ঔদার্যও তাঁর আছে। গ্যাটলিনকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন। কানে কানে বললেন, দর্শকের এই দুয়োধ্বনি তাঁর প্রাপ্য নয়। এর আগেই অবশ্য অমর এক ছবির জন্ম দিয়েছেন গ্যাটলিন। বোল্টকে কুর্নিশ করে জানিয়েছেন হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা। পাশে দাঁড়িয়ে যা দেখেছেন ২১ বছরের ক্রিস্টিয়ান কোলম্যান। গ্যাটলিন আর বোল্টের মাঝখানে দৌড় শেষ করে এই কোলম্যানই রুপা জিতেছেন, গ্যাটলিনের ৯.৯২ সেকেন্ডের চেয়ে সময় নিয়েছেন দশমিক শূন্য ২ সেকেন্ড বেশি (৯.৯৪)। বোল্টের লেগেছে কোলম্যানের চেয়ে দশমিক শূন্য ১ সেকেন্ড বেশি (৯.৯৫)। ফাইনালটা যে অ্যান্টিক্লাইমেক্স হতে পারে, সেটির আভাসও দিয়ে রেখেছিলেন এই কোলম্যানই। সেমিফাইনালে বোল্টকে হারিয়ে দেওয়ার অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়ে। লন্ডনে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের আগে ১৪২টি ১০০ মিটার দৌড়ের মাত্র ৭টিতে হেরেছিলেন বোল্ট, যার সর্বশেষটি ছিল চার বছর আগে, সেই বোল্টই কিনা মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে হেরে গেলেন জীবনের শেষ দুটি ১০০ মিটারে! তাতে বোল্ট-রূপকথার শেষটা রূপকথায় হলো না সত্যি, তবে তাতেও বোল্ট-মহিমা খুব একটা ম্লান হলো কোথায়! এত বছর ট্র্যাকে তাঁকে ধাওয়া করে এসেছেন বাকি সবাই। আর বোল্ট ধাওয়া করেছেন একটা স্বপ্নআলী, পেলে, জর্ডানদের সঙ্গে যেন উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। সেই স্বপ্ন তো পূরণ হয়েছে কবেই। বাকিদের মতো তিনিও ছাড়িয়ে গেছেন নিজের খেলার সীমানা। কে জানত, শেষটাও আলী-জর্ডানের সঙ্গে এমন মিলে যাবে! এমএ/ ০৭:৩৮/ ০৭ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2uxklQH
August 07, 2017 at 01:39PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন