নুমান মাহফুজ ● মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, যাকে আমরা বন্ধুরা তারেক নামেই চিনি। ২০০৪ সাল থেকে আমাদের পরিচয়, নটরডেম কলেজে এক সাথে একই বিভাগে পড়েছি, যদিও আমাদের গ্রুপ ভিন্ন ছিল কিন্তু আমরা কাছের বন্ধু ছিলাম সবসময়। নটরডেম কলেজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সাফল্যের সাথে পাশ করে ‘প্রথম আলো’তে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছে সে। যেদিন শুনলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছে খুব খুশি হয়েছিলাম। ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে তাও জানা ছিল।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নবনির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় মো. আসাদুজ্জামান, যিনি নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তার কাছে ব্যাখ্যা এবং প্রমাণ চেয়ে চিঠি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে চিঠি পাওয়ায় ওই ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন ওই শিক্ষক। সেই শিক্ষকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। ফেসবুকে নিজে বিভিন্ন পোস্ট করেন এই বিষয়ে যা দেখে আমার খুব ভালো লাগে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত শোকসভার আলোচনা উপেক্ষা করে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ তোলা হয় মাহবুবুল হক তারেকের বিরুদ্ধে। এমন সংবাদ আমাকে অবাক করে এবং ব্যথিত করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ বহিস্কারের দাবি জানিয়ে উপাচায বরাবর স্মারকলিপিও দেয়।
তাতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদত বার্ষিকী পালন করছিল। একই সময়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া (তারেক) তার বিভাগের প্রথম ব্যাচের ক্লাস নিচ্ছিলেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। -সত্যিই বড় হাস্যকর। একজন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান যে চিন্তা ও কর্মে মুক্তিযোদ্ধকে লালন করেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারন করে তার সাথে এমন আচরণ মেনে নেয়া কষ্টের। এ কোন পথে যাচ্ছি আমরা। তারিক সালমনের সাথে যা হয়েছিল তা আবারও হচ্ছে। তার কাছে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হল না, ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো কথা শুনা হল না অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে এক মাসের ছুটির নোটিশ ধরিয়ে দিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ও বলে- আমি দোষী হলে আমার ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য নেওয়া উচিত ছিল আগে। তদন্ত না করে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া অন্যায্য ও অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি আমার ওপর ক্ষুব্ধ। আক্রোশ থেকেই ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কিছুদিন যাবত খেয়াল করছি বঙ্গবন্ধুকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করা হচ্ছে! বঙ্গবন্ধু বাঙালির সম্পদ; আওয়ামী লীগের একান্ত নয়! আমাদের কিছু অতিউৎসাহী দলীয় কর্মীর আচরণে দিন দিন যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে বড় করতে যেয়ে যেভাবে ছোট করা হচ্ছে তা চলতে দেওয়া যায় না! শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দেখানোর জিনিস নয় তা নিজের মধ্যে ধারন করতে হয়, তার পালন করতে হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাত্রলীগের চাপের কারণে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাও যথার্থ হয়নি। যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে এক মাসের ছুটির নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি কলঙ্কের নতুন যাত্রা। তাকে যে অপরাধে অপরাধী করা হচ্ছে তা কোনোভাবেই অপরাধ হতে পারে না। বরং একজন শিক্ষকের মূল জায়গা ক্লাসরুম সেটি দেখিয়েছে সে। একজন শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি কতটা দায়িত্ববান হওয়া উচিত সেটি ও আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উচিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া এবং বহিস্কার করা। জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ সংগঠন অতিউৎসাহী দলীয় কর্মীর আচরণে কলংকিত হোক এটা তারা চাইবে না আশা করি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ আর উপাচার্য মিলে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্লিজ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি উৎসাহী এই চাটুকারদের নিয়ন্ত্রণ করেন। এরা বঙ্গবন্ধুকে মানুষের কাছে ছোট করার চক্রান্ত করছে।
দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। শুধু একজন বন্ধু হিসেবে নয়, একজন শিক্ষক হিসেবে নয় একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি এই সিধান্তকে ধিক্কার জানাই। এ কেমন প্রশাসন, এ কেমন বিশ্ববিদ্যালয়, এ কেমন নিয়ম? বন্ধু তারেক, স্রোতের বিপরীতে সবাই চলতে পারে না। কোন ক্ষমা স্বীকার নয়, হার স্বীকার নয়, মাথা নত নয় যেভাবে শক্ত হয়ে আছিস নীতিতে আর আদর্শে সেই ভাবে অবিচল থাক। মাহবুবেবর মতো একজন মানবিক সৎ শিক্ষককের শিক্ষকের মর্যাদা কেউ ক্ষুণ্ণ করতে পারবে না। বিশ্বাস করি সবাই মিলে প্রতিবাদ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয় হবেই হবে।
লেখক: প্রভাষক, লোক প্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
The post মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব চাটুকারদের বিষয়ে নজর দিন appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2uO0Yry
August 18, 2017 at 02:16PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন