জেদ্দা, ২৩ আগস্ট- পরিবারের অভাব অনটন আর সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমান মর্জিনা বেগম। ২০১০ সালে হাসপাতালের ভিসা নিয়ে সৌদি আরব আসেন তিনি। প্রথমে কোম্পানির চাকরি কথা থাকলেও কাজ পান একটি বাসায় গৃহকর্মীর। সেখানে এক বছর কাজ করে তিনি পেয়েছেন মাত্র তিন মাসের বেতন। সঙ্গে জুটেছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। একপর্যায়ে মর্জিনা সিদ্ধান্ত নেন বাসা থেকে চলে যাবেন। অন্য কোথাও কাজ করবেন বা দেশে চলে যাবেন। পড়ে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে এসে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পাশে একটি পরিবারের কাছে আশ্রয় নেন। পরে ওই পরিবার তাঁকে একটি হাসপাতালে ক্লিনারের চাকরি দেন। সেখানেও ছয় মাস চাকরি করে মাত্র দুই মাসের বেতন পান। এরপর তিনি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেন। বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পাশে অনেকেই পানি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এটা দেখে মর্জিনার আগ্রহ জাগে। যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার নারীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন তিনি পান ও পানি বিক্রয় করবেন। ব্যবসা করতে লাগে পুঁজি। কিন্তু তাঁর কাছে তো কিছুই নেই। এরপর সৌদি প্রবাসী যে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন, তারা মর্জিনাকে মাত্র ১০০ রিয়াল দিয়ে সহযোগিতা করে। সেই সামান্য পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশ জেদ্দা কনস্যুলেটের পাশে পানের দোকান দেন। ২০১৩ সাল থেকে মর্জিনা এখনো পর্যন্ত সেই পানের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ তল্লাশি করতে এলে দোকান থেকে চলে যান। পুলিশ চলে গেলে আবার বেচাকেনা শুরু করেন। ২০১৩ সালে সৌদি সরকার যখন অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেন সেই সুযোগ গ্রহণ করেন মর্জিনা। মর্জিনা বলেন, এই পানের দোকান করে আমি ভালো আছি। অভাব অনটন শেষ হয়েছে। এই দোকান থেকেই ৪৫ হাজার রিয়ালের বিনিময়ে ভিসা করেছি। তিনি আরো জানান, তিন বছর সৌদিতে তিনি অবৈধ ছিলেন। তার কাছে তখন ছিল না কোনো পাসপোর্ট, ছিল না কোনো আকামা। তারপরও ১৫০ রিয়াল অর্থাৎ তিন হাজার টাকা আয় হতো প্রতিদিন। তিনি জানান, কনস্যুলেট খোলা থাকলে বেচা-কেনা হয় বেশি। শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন হওয়াতে ব্যবসা থাকে না। এভাবে পান বিক্রি করে তাঁর প্রতি মাসে আয় ৯০ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা হতো একসময়। এখন অবশ্য কমে গেছে। বর্তমানে বেচাকেনা কেমন জানতে চাইলে মর্জিনা বলেন, আগে অনেক বেচাকেনা ছিল। কিন্তু এখন আর সেই রকম নেই। তারপরও মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি পান-সিগারেট বিক্রি করেন। এর পাশাপাশি দুটি বাংলাদেশি পরিবারে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। সেখানে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করেন বলে জানিয়েছেন মর্জিনা। মর্জিনার স্বচ্ছল হয়ে ওঠার গল্প জানতে চাইলে বলেন, আমি এই পানের ব্যবসা করে অনেক অর্থ উপার্জন করেছি। দেশে গ্রামের বাড়িতে জমি কিনেছি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। আমার বড় মেয়ে কলেজে পড়ে আর ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এ ছাড়া মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিম খানায় প্রতিবছর দান করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখন দরিদ্রতাকে হার মানিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। আর কতদিন এইভাবে কাজ করে যাবে জানতে চাইলে মর্জিনা বলেন, এভাবে আরো কিছু দিন ব্যবসা করে দেশে ফিরতে চাই। পরিবার আর নিজের ভবিষ্যতের জন্য আরো ভালো কিছু করতে চান বলে জানান তিনি। মর্জিনার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার মহনপুরে। এমএ/ ০৭:৩৭/ ২৩ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2xrccPo
August 23, 2017 at 01:40PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন