২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহতরা ভালো নেই

সুরমা টাইমস ডেস্ক:: ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহতরা ভালো নেই। অনেকে এখনো গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ক্যান্সারে দুই পায়েই পচন ধরেছে পুরান ঢাকার বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাশেদা আক্তার রুমার। অর্থের অভাবে চিকিত্সা বন্ধ হয়ে গেছে সাভারের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রী মাহাবুবা পারভীনের। এক পা হারিয়ে আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন কালকিনির শ্রমজীবী হালান হাওলাদার। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো আঁতকে উঠেন তারা।

সেদিনের হামলায় আওয়ামীলীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। হাত-পা-চোখ হারান অনেকেই। আর শরীরে স্প্রিন্টারের ভয়াবহ যন্ত্রণা নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, শ্রমজীবীসহ ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ। অনেকে দেশে-বিদেশে চিকিত্সা করালেও এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি। গত ১৩ বছর ধরে গুরুতর আহত প্রায় সবাই অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছেন।

গ্রেনেড হামলায় আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেই নৃশংস হামলার স্মৃতি এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। বছরের পর বছর গ্রেনেডের স্প্রিন্টার নিয়ে শরীরে ঘা, কিডনি ইনফেকশন, চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দিন পার করছেন অনেকেই। আহতদের কেউ হারিয়েছেন শ্রবণশক্তি, কেউ হারিয়েছেন চির জীবনের মতো কর্মক্ষমতা। গ্রেনেডের স্প্রিন্টারে ক্ষতবিক্ষত শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েও তাদের একটাই কামনা হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হোক। দুর্বৃত্তদের বিচার দেখে মরতে চান তারা।

২১ আগস্ট শেখ হাসিনা যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সেই ট্রাকের পেছনে ছিলেন পুরান ঢাকার মাজেদ সরদার রোডের বাসিন্দা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী রাশেদা আক্তার রুমা। গ্রেনেডের আঘাতে ১৮টি দাঁত পড়ে যায় তার। ডান পায়ে পঁচন ধরে এখন হাঁড়ে লেগেছে। এখন পঁচন শুরু করেছে বাম পা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া অর্থসহ স্বামীর অর্থে চিকিত্সা চালাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে রাশেদা আক্তার রুমা ক্যান্সারে আক্রান্ত। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ক্যান্সারে পা পঁচে যাচ্ছে, শরীরের তীব্র জ্বালায় বাঁচতে পারছি না। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার এখনও শেষ হয়নি। জানোয়ারদের চূড়ান্ত বিচার দেখে যেতে পারলে মরেও শান্তি পেতাম।’ রুমার আক্ষেপ, এখন আর কোনো নেতাকর্মী তার খোঁজ নেন না। একটিবারের জন্যও কেউ দেখতে আসেন না।

গ্রেনেড হামলায় আহত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লিটন মোল্লার (৪৩) শ্রবণশক্তি প্রায় নেই বললেই চলে। এখনো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত ও স্প্রিন্টার রয়েছে তার। হতাশ কণ্ঠে লিটন মোল্লা বলেন, ‘আর পারছি না। দিনরাত শারীরিক যন্ত্রণা, অসুস্থতা, অন্যদিকে আর্থিক অনটন। এভাবে বেঁচে থাকা যায়?’

গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক আহত রত্না আক্তার রুবী (৩৮) প্রায় ৫০টি স্প্রিন্টার এখনও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনার কয়েক মাস পরেই তার শরীরের ডান দিকের অকেজো কিডনি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফেলে দিতে হয়েছে। অসুস্থতার প্রয়োজনে প্রতি মাসে ইনজেকশন, এন্টিবায়োটিক বাবদ খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। স্বামী সবুজ হাওলাদার ও এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে থাকেন মিরপুরে। গ্রেনেডের যন্ত্রণা পিছু না ছাড়লেও ঘাতকদের বিচার দেখে যেতে চান তিনি।

১৮০০ স্প্রিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন। সুচিকিত্সার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। মাহবুবা জানান, ‘মাথার দুটি স্প্রিন্টার তাকে খুব জ্বালায়। মাঝে মধ্যে তিনি পাগলের মতো চিত্কার করে আবোল-তাবোল বলেন। অর্থের অভাবে বন্ধ রয়েছে চিকিত্সা।’

সাভার থেকে ইত্তেফাকের রিপোর্টার জানান, ঢাকা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেত্রী এখন চলাফেরা করেন অন্যের সহযোগিতা নিয়ে। তার বাম পাঁশটা প্রায় অচল হয়ে গেছে। বিভীষিকাময় সেই দিনটির কথা মনে পড়লে মাঝে মধ্যেই আঁতকে উঠেন। বললেন, ‘আইভি আপা মরে বেঁচে গেছে, আর আমি বেঁচেও মরে আছি। এখন আমি অর্ধমৃত একটা আহত মানুষ।’

কালকিনি (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, কালকিনি পৌরসভার বিভাগদী গ্রামের মোহাম্মাদ আলী হাওলাদারের ছেলে হালান হাওলাদারের একটি পা গ্রেনেড হামলায় নষ্ট হয়ে গেছে। আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে তাকে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় মীরপুরের ১২ নম্বর খালেক মোল্লার বস্তিতে থাকেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মুরগি বিক্রি করেন এই শ্রমজীবী মানুষটি। স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলে রিয়াদকে ঠিকমত খাবার, পোশাক দিতে না পারায় তারা বেশির ভাগ সময় স্ত্রীর বাবার বাড়িতে থাকে। মা মনোয়ারা বেগমও মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে হালান হাওলাদার বলেন, ‘এখনও শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ এর বেশি স্প্রিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় বেঁচে আছি। সব সময় শরীরের মধ্যে ব্যথা করে ও চুলকায়। যন্ত্রণায় ছটফট করি। কেউ দেখে না। বাম পা দিয়ে ঠিকমত হাঁটতে পারি না। নিজের চিকিত্সা করাবো, না পরিবারের মুখে এক মুঠো ভাত তুলে দিব। এভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব। এর চেয়ে মৃত্যুই ভালো ছিল!



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2vgwKsF

August 21, 2017 at 01:22PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top