রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কথা বর্হিবিশ্বে জানানো হবে-ওআইসি মহাসচিব

সুরমা টাইমস ডেস্ক: বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ‘ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা’র (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন আজ শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। তিনি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে উপস্থিত হয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন।
এরপর ওআইসি মহাসচিব অনিবন্ধিত শিবিরের ডি-ব্লকে একটি রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে ঢুকে সেখানে অবস্থানকারী নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী মিয়ানমারের মংডু এলাকার নারীরবিল গ্রামের নজির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) একই থানার ছালিপাড়া গ্রামের শাহীনের স্ত্রী শফি নুর (২৬) এবং একই এলাকার আব্দুর রহিমের স্ত্রী মিসফালার (২২) সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তিনি তাদের নিকট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কাহিনী শোনেন। পরে ওআইসি মহাসচিব ডি ব্লকের আইওএমের একটি স্কুলে পূর্ব থেকে অপেক্ষমান নির্যাতিত ৩০ জন নারী-পুরুষের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন।
মিয়ানমারের মংডু থানার হাতগইজ্জাপাড়া গ্রামের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা গৃহবধূ জামালিকা (২২) ওআইসি মহাসচিবকে জানান, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা তার স্বামী খাইরুল আমিনকে (৩০) দোকান থেকে বের করে রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাকেও পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা। নির্যাতনে পা হারানো মংডু থানার গুয়াছি গ্রামের মো. জাকারিয়া (৩০) জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তাকে ধরে নিয়ে গুলি করলে ডান পা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। তাদের এসব নির্যাতনের বর্ণনা মনোযোগ দিয়ে শোনেন ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী কুতুপালং শিবির অভ্যন্তরে ঘুরে দেখেন ওআইসি মহাসচিব। পরে খেলার মাঠে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সাধুবাদ জানাই। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নাগরিকত্বসহ তাদের সহায় সম্পত্তি ফেরত দিয়ে স্বদেশে ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা হবে। রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে শোনা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নানা নির্যাতনের বর্ণনার কথা বর্হিবিশ্বে জানানো হবে। ’

এছাড়া ওআইসি মহাসচিব বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের এ দেশীয় আইন-কানুন মেনে চলার অনুরোধ জানান। পরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে চরম নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা হবে বলে জানান ওআইসি মহাসচিব। এ সময় তিনি রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের সহ সভাপতি সিরাজ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আমিনসহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় রোহিঙ্গা শিবিরে ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সচিব বাকি বিল্লাহ, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মার্মা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়েরসহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমাদ আল-অথাইমিন গত বুধবার চারদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। ঢাকায় তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য এবং তাদের সঙ্গে ওআইসির একাত্মতা প্রকাশের জন্য তিনি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2we4qJ7

August 04, 2017 at 09:57PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top