সিরাজগঞ্জ, ২১ আগস্ট- ছেলে হ্যাটট্রিক করেছে, পরিবারে খুব আনন্দ হচ্ছে বুঝি? হ্যাটট্রিক? কার ছেলে করেছে, আমি তো জানি নাকথাটা ওমর ফারুকের। তিনি ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের বাবা। ফাহিমের হ্যাটট্রিকের কল্যাণেই গত শুক্রবার সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে শ্রীলঙ্কাকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এমন দুর্দান্ত কীর্তি, অথচ তিন দিন পেরিয়ে গেলেও বাবা জানেন না এই কীর্তির কথা। ছেলে দেশকে জয় এনে দিয়েছেএই প্রতিবেদকের কাছ থেকেই প্রথম শুনলেন কথাটা। সংবিৎ ফিরে পেয়েই যেন প্রতিবেদককে তাঁর পরের প্রশ্ন, নেপালে আমার ছেলে কেমন আছে? বাংলাদেশ কেমন করছে? পরের খেলা কবে? সিরাজগঞ্জ ন্যাশনাল জুট মিলসের ওয়ার্কশপের শ্রমিক ওমর ফারুক। অভাবের সংসারে সারা দিন খাটাখাটুনি করে ফুটবলের আর খবর রাখার সময় নেই তাঁর। সুযোগ হলে হয়তো টেলিভিশন দেখা হয়, পত্রিকা পড়া হয়, কিন্তু কাজের ব্যস্ততাই বেশি। নেপালের ছেলের কীর্তির কথা জানলেন তিন দিন পর। জেনেই উচ্ছ্বাস তাঁর কণ্ঠে, আমার ছেলে বিদেশের মাটিতে তিন গোল করেছে! কী বলেন! যদি করে থাকে, তাহলে সেটা আল্লাহর দান। সবার দোয়াতে সে এমনটা করতে পেরেছে। নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দর থেকে ফোন করে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল ফাহিম। ভালো খেলার জন্য দোয়াও চেয়েছিল। এরপর কাঠমান্ডুতে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক পেলেন। কিন্তু নেপাল থেকে ফোন দিয়ে সেই কীর্তির কথা আর জানানোর সুযোগ হয়নি বাবা-মাকে। দুই ভাই, এক বোন আর বাবা-মাকে নিয়ে ফাহিমদের পাঁচ সদস্যের পরিবার। গোটা সংসারের ভার বইছেন বাবা ওমর ফারুক। ছেলে ফুটবল খেলছে। দেশের জার্সি পরেছে, অথচ এই ছেলের মুখে কখনোই ভালো খাবার তুলে দিতে পারেননি তিনি। এ নিয়ে তাঁর প্রচণ্ড আফসোস, ফুটবল খেলতে কত শক্তি লাগে! কিন্তু আমি ফাহিমকে ভালো-মন্দ খাবার দিতে পারিনি। আমার ছেলেটা কখনোই এ নিয়ে অভিযোগ করেনি। যা পেয়েছে, সেটাই মুখ বুজে খেয়েছে। আমার ছেলে জানে-বোঝে তার বাবার সামর্থ্য। আমি সব সময় দোয়া করি আমার ছেলেকে। সবার দোয়া চাই। সে যেন ফুটবল খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। ছেলের গড়ে ওঠার ব্যাপারে মায়ের ভূমিকার কথা বারবারই বলছিলেন ওমর ফারুক, ফাহিমের মা ওর দেখভাল করে। আমি আর কতক্ষণ বাড়িতে থাকি। ফাহিম যদি বলার মতো কিছু করেও থাকে, সেটার পেছনে বড় অবদান ওর মায়ের। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মক কাপেও দুর্দান্ত খেলেছিল ফাহিম । কিন্তু এবার হ্যাটট্রিক করে আগের সবকিছুই ছাপিয়ে গেল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরাজগঞ্জের এই ছেলে গোলের খাতা খুলেছিল ২৯ মিনিটে। বাঁ প্রান্ত থেকে আসা ক্রসে বাঁ পায়ের শটে জালে জড়ায় সে। চার মিনিট পরেই ফ্রি কিক থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে। সেটপিসটাতেও ছিল দলীয় বোঝাপড়ার ছাপ। সরাসরি ফ্রি কিক না নিয়ে সতীর্থ এক খেলোয়াড়ের পায়ের ফাঁক গলে সামনে বল বাড়ানো হয়। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েই তীব্র শটে গোল । ৭৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিকের ম্যাজিক সংখ্যাটি পূরণ করে ফাহিম। এমএ/ ০৪:৪০/ ২১ আগস্ট



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wppEaa
August 21, 2017 at 10:42PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top