বিশ্বনাথে প্রতিবন্ধী জয়ী রহিমার গল্প

rugeeমো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল থাকলে সাফল্য সুনিশ্চিত’ এ বাক্যের উজ্বল উদাহরণ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রহিমা আক্তার রুজী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে রহিমা আক্তার রুজী এখন আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর।

এক পা অচল হলেও সেটাকে কোনো বাধা মনে না করে নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকতার মতো মহান পেশা। উপজেলার লামাকাজীইউনিয়নের কেশবপুরে জন্ম নেয়া রহিমা একই ইউনিয়নের মাহতাবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।

ছোটবেলা থেকে নানাবাড়িতে বেড়ে ওঠা রহিমা ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের বাংলাবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শুরু করে সর্বশেষ সিলেটের এমসি কলেজ থেকে দু’বার মাস্টার্স পাশ করেন। মাস্টার্স শেষ করার আগেই জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের দাওরাই গ্রামের কয়েছ আহমদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কয়েছ সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত। রহিমা ২০০৯ সালের ৬ মে সিলেট মহিলা কলেজে রাস্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী থাকাবস্থায় সহকারি শিক্ষক হিসেবে উপজেলার হাবড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরীজীবন শুরু করেন।

মাহতাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, বাম পা অচল থাকার কারণে ডান পায়ের হাঁটুতে ভর দিয়ে ক্লাশে ঢুকছেন রহিমা আক্তার রুজী। এভাবে গাড়িতে হোক বা হেঁটে হোক নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে রহিমা আক্তার রুজী চতুর্থ। পোলিও টিকা না দেয়ায় দু’বছর বয়সে জ্বরাক্রান্ত হন তিনি। এ সময় হামাগুড়িতে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে ধরা পড়ে তার একটি পা অচল প্রায়। ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘ চিকিৎসাসেবায় স্বাভাবিক হলেও তার অচল পা আর সচল হয়নি।

মাহতাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা চন্দ বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা স্বত্ত্বেও রহিমা আক্তার রুজী সঠিক সময়ে নিয়মিতই স্কুলে আসা-যাওয়া করেন। তার নিরবিচ্ছিন্ন এবং অব্যাহত পাঠদানে ক্লাসের শিক্ষার্থীরা খুবই মনোযোগী থাকে। তিনি একজন মেধাবী ও আদর্শ শিক্ষক। তার চালচলন, আচার আচরণে কখনো বুঝাই যায় না-তার একটি পায়ে সমস্যা।

রহিমা আক্তার রুজী জানান, বোধের পর থেকে পায়ের সমস্যাটা দেখে এসেছি। একটি পা চলাফেরাতে অক্ষম থাকলেও আমি সেটাকে কোনো প্রতিবন্ধকতা মনে করিনি। নিজের ইচ্ছেশক্তির কাছে সেটাকে বারবার পদদলিত করেছি। দৃঢ়ভাবে মনে করেছি, অদম্য ইচ্ছে থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জীবনে চলার পথে বাধা হতে পারেনা। আমি পারিবারিকভাবে থেমে যাওয়া শিখিনি। শত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে এগিয়ে চলেছি সমুখপানে। এক্ষেত্রে আমার আব্বা-আম্মাসহ পরিবার এবং আমার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও উৎসাহ পেয়েছি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হেরে যাওয়া মানুষগুলোর কাছে আমার পথচলা অনুপ্রেরণা হলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2vmXBrX

August 29, 2017 at 12:35PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top