মো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ সিলেট থেকে:: ঈদুল আযহার বাকী আর মাত্র ৪ দিন। প্রতিবছর কোরবানীর ঈদ এলে পুরো নগরজুড়ে থাকে পশুর হাটের ছড়াছড়ি। আর এ দৃশ্য যেন চিরচেনা। প্রশাসনের হুশিয়ারী ও সিসিক-এর কঠোর অবস্থানে এবার দৃশ্যপট অনেকটা ভিন্ন হওয়ার আবাস থাকলেও শেষ পর্যন্ত পুরনো রুপেই ফিরেছে নগরী। ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন বাড়ছে অবৈধ পশুর হাটের সংখ্যা। পুরো নগরীই পশুর হাটে পরিনত হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন কিংবা সিসিক কারো হুশিয়ারী ও কঠোরতা অবৈধ হাটকে কোনভাবেই আটকাতে পারছেনা।
শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে বসা হাট সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিলেট নগরের পাড়া-মহল্লায় বসানো হচ্ছে অবৈধ পশুর হাট। আর এসব হাট বসানোর নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কিছু নেতা। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিএনপিসহ অন্য দলের নেতারাও। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৫টিরও বেশী স্থানে বসেছে পশুর হাট। এক্ষেত্রে বাদ পড়ছে না পাড়ার গলি কিংবা খেলার মাঠও। এসব অবৈধ পশুর হাটের কারণে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। কোরবানির দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়বে হাটের সংখ্যাও। তবে, পশুর এসব অবৈধ হাট উচ্ছেদে মাঝখানে সরব থাকলেও এখন আর প্রশাসন কিংবা নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন তৎপরতা চোখে পড়ছেনা।
নগরীর একমাত্র বৈধ পশুর হাট কাজিরবাজার নিয়ে মামলা চলমান থাকায় সেটি ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। কাজিরবাজার ছাড়াও এসএমপির আওতাধীন এলাকায় দশটি বৈধ পশুর হাট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- লাক্কাতুড়া চা বাগান বাজার সংলগ্ন মাঠ, লালাবাজার পশুর হাট, কামাল বাজার পশুর হাট, নাজির বাজার পশুর হাট, হাজীগঞ্জ বাজার পশুর হাট, জালালপুর বাজার পশুর হাট, রাখালগঞ্জ বাজার পশুর হাট, পীরের বাজার পশুর হাট ও খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠের পশুর হাট।
এছাড়া, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চারটি স্থানে অস্থায়ী হাটের ইজারার দরপত্র দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, ঝালোপাড়া মসজিদ গলি, কাকলি সিনেমা হলের সামনের মাঠ। তবে এসবের বাইরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অনুমোদন ছাড়াই একাধিক অবৈধ হাট বসিয়েছে প্রভাবশালীরা।
এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার টিবি গেইট এলাকায় নির্মাণাধীন শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অবৈধ হাট বসিয়েছে সরকারদলীয় লোকজন। তবে সেখানে কৌশলগত কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘বৃহত্তর শাহী ঈদগাহ’ এলাকাবাসীর নাম। যদিও এই স্থানে পশুর হাট বসানোর বিপক্ষে স্থানীয়রা।
এছাড়া শাহী ঈদগাহ লাল মাটির টিলা এলাকায় গলিতে পশুর হাট বসিয়েছেন এক প্রবাসী বিএনপি নেতা। একই ভাবে টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত ফলকের সামনের মাঠে পশুর হাট বসিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে যানজটসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে।
এছাড়া নগরীর রিকাবীবাজার পয়েন্ট, উপশহর, আখালিয়া, কুমারপাড়া, পাঠানটুলা, ঘাসিটুলা, দক্ষিণ সুরমার চন্ডীপুল, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালীরা। এরই মধ্যে এসব স্থানে বাঁশের খুঁটিও বসানো হয়েছে। একই ভাবে সিলেট-তামাবিল সড়কের সুরমা গেইট, সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজারেও অবৈধ হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে- যেখানে সেখানে অবৈধ হাটের কারণে বৈধ হাটের ইজারাদাররা ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে শঙ্কায় রয়েছেন। প্রতিবার অবৈধ হাটের লোকেরা পেশীশক্তির বলে বৈধ হাটে আসা পশুর ট্রাক আটকে নিজেদের হাটে নিয়ে যান, এতে করে তাদের ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন তারা।
জানা যায়, অবৈধ পশুর হাটের পক্ষের লোকেরা মোটরসাইকেল নিয়ে সিলেটের প্রবেশদ্বারের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে আসা পশুবাহী ট্রাক অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের হাটে নিয়ে যান। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেপারী যেমন তাদের চাহিদা মোতাবেক পশু হাটে যেতে পারেন না তেমন ক্ষতিগ্রস্তও হন তারা। শুধু তাই নয়; অনেক সময় একাধিক হাটের লোকদের মধ্যে ট্রাক ছিনিয়ে নেয়া নিয়ে হাতাহাতি থেকে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা বলেন, অবৈধ হাট উচ্ছেদে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সড়ক থেকে পশুবাহী ট্রাক ছিনিয়ে নেওয়া বন্ধে পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। এক্ষেত্রে টইল দল নগরীতে মোতায়েন রয়েছে। পশুবাহী ট্রাক পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ পাহারায় সংশ্লিষ্ট হাটে পৌঁছানো হবে বলেও জানান তিনি। আমরা সড়কে পশুর হাট বসতে দিচ্ছিনা, তবুও বসে যাচ্ছে। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই কম। জনগণকে পশু কেনার ক্ষেত্রে অবৈধ হাট পরিহার করারও পরামর্শ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
জানা যায়, গত ২৩ আগষ্ট এসএমপি কমিশনার কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেছেন, সিলেটের ব্যবসায়ীদের যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে। ঈদুল আজহায় চাঁদাবাজি, নৈরাজ্য কোনো অবস্থাতে চলতে দেয়া যাবে না। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোবাইল টিম সহ বিভিন্ন বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারগণ ট্রাকে করে গরু আনার সময় চাঁদাবাজি সহ সকল ধরনের সমস্যা সমাধানে পুলিশ সবসময় তৎপর আছে। ঈদের সময় যানজট নিরসন সহ নগরীতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে পুলিশ। উপস্থিত সবাই একযোগে বলেছেন- অনুমতি ছাড়া কোন স্থানে অবৈধ হাট বসতে দেয়া হবেনা।
এরপর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও কোথাও হাট বসার অনুমতি দেয়া হবেনা বলে হুশিয়ারী দেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু তিনি হজে যাওয়ার পরপরই সিসিক থেকে চারটি স্থানে হাট বসানোর টেন্ডার আহবান করলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আর এই চারটি স্থানকে কেন্দ্র করে নগরীতে বসতে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি হাট। সিসিকের অধীনে নগরীর সোবহানিঘাট, চালিবন্দর, ঝালোপাড়া ও কদমতলী এলাকায় এসব হাট বসছে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন- আমরা কোন হাটের টেন্ডার আহ্বান করিনি। সম্ভবত ঝালোপাড়ায় একটা হাটের অনুমতি দেয়া হতে পারে।
স্থানীয় সূত্র জানা- সিসিক কর্তৃপক্ষ না বললে ঐ চারটি স্থানে ইতোমধ্যে হাট বসে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অভিযান চোখে পড়েনি।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2wemqoH
August 29, 2017 at 03:44PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন