ঢাকা, ২৩ আগষ্ট- ২০১৪ সালে আমি ঢাকাই সিনেমায় নাম লিখিয়েছি। তখন পরপর চারটি সিনেমার কাজ শুরু করি। কোনো সিনেমার কাজই তখন শেষ হয়নি। এরই মধ্যে মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত মন জানে না মনের ঠিকানা সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই। তখনো আমি জানতাম না এই সিনেমায় সহশিল্পী কে কে আছেন। ২০১৪ সালের ১ জুন। বিএফডিসির ২ নম্বর ফ্লোরে মন জানে না মনের ঠিকানা সিনেমার মহরত অনুষ্ঠিত হবে। আমি মেকআপ রুমে প্রবেশ করলাম। সেদিন স্কার্ট পরে বসে ছিলাম। আমাকে মেকআপ করানো হলো। আমি অপেক্ষা করছিলাম শটের জন্য। এর মধ্যে মেকআপ রুমে প্রবেশ করলেন রাজ্জাক স্যার। তখন তার মেজাজটা একটু কড়া ছিল বলে মনে হয়েছে। তাঁকে দেখেই আমি দৌড়ে গিয়ে তার পা ছুয়ে সালাম করলাম। তিনি আমার মাথায় হাত রাখলেন। তার স্নেহধন্য হলাম। তখন তার মুড চেঞ্চ হয়ে গেল। মনে হলো সেই রাগটা আর নেই। এরপর স্যার আমাকে দেখিয়ে বললেন, এইটা কে? পাশ থেকে ভাইয়া বলল, এটা তো আপনাদের সিনেমার নায়িকা। ওর নাম পরীমনি। কথাটা শুনে স্যার বললেন, হায় হায় এত পিচ্চি মেয়ে নায়িকা! এরপর স্যার আমাকে বললেন, শোনো, শিল্পী হও, শিল্পীর বড় অভাব। এমন কয়েকটা কথা তিনি বলেছিলেন। এ কথাগুলোর মানে আমি কিছুই বুঝিনি। তখন এটা আমার জন্য কতটা আশীর্বাদ ছিল তা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। স্যারের এ কথাগুলোর মানে তখন বুঝতে পারলাম, যখন আমার একটার পর একটা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছিল। একজন নায়িকা থেকে ধীরে ধীরে শিল্পীতে পরিণত হচ্ছি। শিল্পীসত্তা কী বুঝতে পারছি একটু একটু করে। এরপরই আমি বুঝতে পেরেছিলাম শিল্পী হতে হবে। এভাবেই একদিনআমি বুঝতে পারলাম শিল্পী হও, শিল্পীর বড় অভাব কথাটির অর্থ। আমি যখন কাজ শুরু করছিলাম। তখন একই সময় অনেকেই কাজ শুরু করেছিল। তাদের অনেকে এখন কাজ করছেন না। আমি বুঝতে পেরেছি শিল্পীরা থেকে যায়। নায়িকারা থাকে কি না আমি জানি না। আমার অভিনয় জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমি বুঝতে পারছি অভিনয়ের গুরুত্ব। তখনই আমি মনে করি আমি নায়িকা না, শিল্পী হবো। স্যারের ছোট্ট একটা কথার অর্থ অনেক বড়। হয়তো আমি সেদিন বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন পারি। এরপর আমি তার সঙ্গে কাজ শুরু করি। তখন আমি অনেক নার্ভাস ছিলাম। এক পাশে মৌসুমী আপা, অন্য পাশে রাজ্জাক স্যার। স্যারের চোখের দিকেও তাকাতাম না। এই বুঝি ভুল ধরল। এভাবেই কাজ করে গিয়েছি। স্যার ছিলেন জজের চরিত্রে। একদিন খুব ক্ষুধা পেয়েছিল। আমার শুটিং করতে ইচ্ছে করছিল না। বিষয়টা কীভাবে জানি স্যার বুঝতে পেরেছিলেন। আমি সিনেমার দৃশ্যে কাঠগড়ায় দাড়িয়ে ছিলাম। তখন স্যার গুলজার মামাকে বলেন, ওকে খাবার দে। ও তো পিচ্চি মানুষ। তিনটা পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রাখলে ও তো কান্না করবেই। সে সব খেয়াল করত। তার মতো এত বড় মাপের মানুষ বিষয়টি লক্ষ্য করেছে ভাবতেই বিস্ময় লাগে। আমি ক্যারিয়ারের শুরুতে রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে কাজ করব ভাবতেই পারিনি। এটাই ছিল আমার জীবনে তাকে প্রথম ও শেষ দেখা। নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে আমি কীভাবে কথা বলব? এই যোগ্যতা আমার হয়নি। আর হবে কি না তাও জানি না। প্রত্যেকটা মানুষ মরণশীল। প্রত্যেককেই একদিন চলে যেতে হবে। রাজ্জাক স্যার কোটি মানুষের হৃদয় রয়েছেন। সেখানে তিনি বেঁচে রইবেন। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে তিনিও ততদিন বেচে থাকবেন। হয়তো তার দেহ আমাদের মাঝে নেই। দেহের মৃত্যু হয়েছে। নায়ক রাজ্জাকের মৃত্যু হয়নি। আর/১৭:১৪/২৩ আগষ্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wxue6e
August 23, 2017 at 11:47PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন